ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অতিরিক্ত ট্যারিফ আরোপ করায় অপারেটররা ক্ষুব্ধ

বিটিআরসির গাইডলাইন মানছে না বিটিসিএল

প্রকাশিত: ০৭:১৬, ১১ জানুয়ারি ২০১৬

বিটিআরসির গাইডলাইন মানছে না বিটিসিএল

ফিরোজ মান্না ॥ বিটিসিএল কয়েকটি ক্যাটাগরির লাইসেন্সের ওপর অতিরিক্ত ‘ট্যারিফ’ আদায় করার ঘোষণা দিয়েছে। লাইসেন্সপ্রাপ্তরা এই ট্যারিফ দিতে আপত্তি তুলেছে। তারা বলছে, তাদের সঙ্গে কোন আলাপ আলোচনা না করেই বিটিসিএল একক সিদ্ধান্তে এটা করেছে। বিটিআরসির সার্ভিস ও ট্যারিফ নীতিমালা অনুযায়ী যে কোন ধরনের ট্যারিফ ঘোষণা ও পরিবর্তনের আগে সরকারের অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু বিটিসিএল ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় ও টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থার (বিটিআরসি) অনুমোদন নেয়নি। কোন প্রকার অনুমোদন ছাড়া একটি সরকারী কোম্পানি এভাবে ট্যারিফ বাড়াতে পারে না। আইটিসি, আইআইজি, আইএসপি ও এনটিটিএন লাইসেন্সের ওপর এই ট্যারিফ ঘোষণা করা হয় গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর। অতিরিক্ত ট্যারিফ ১ সেপ্টেম্বর থেকেই কার্যকর করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন অপারেটর অতিরিক্ত ট্যারিফ জমা দেয়নি। বিটিআরসি সূত্র জানিয়েছে, বিটিআরসির সার্ভিস ও ট্যারিফ নীতিমালা অনুযায়ী কোন অপারেটরের দেয়া সার্ভিসের ওপর নতুন ট্যারিফ কিংবা পুরনো ট্যারিফ পরিবর্তনের জন্য টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (বিটিআরসি) বরাবর আবেদন করতে হবে। পরবর্তীতে বিটিআরসি ট্যারিফের বিভিন্ন দিক যাচাইবাছাই করে প্রতিবেদনসহ অনুমোদনের জন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। মন্ত্রণালয় যদি মনে করে তা অনুমোদন করতে পারে। যদি তা অনুমোদন করে তাহলে সেটি আবার বিটিআরসির কাছেই পাঠাবে। বিটিআরসি পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট অপারেটরকে লিখিতভাবে জানাবে। কিন্তু বিটিসিএলের এই ট্যারিফ প্রকাশের ক্ষেত্রে সার্ভিস ও ট্যারিফ নীতিমালা অনুসরণ করা হয়নি। অপারেটররা এটাকে টেলিযোগাযোগ আইন ভঙ্গের শামিল বলে মনে করছেন। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, বিভিন্ন লাইসেন্সধারীর প্রতিযোগিতামূলক বাজার সৃষ্টির জন্য ট্যারিফের সর্বোচ্চ স্তর ও সর্বনিম্ন স্তর নির্ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে কবে নাগাদ এ ব্যবস্থা নেয়া হবে তা এখনও ঠিক হয়নি। মন্ত্রণালয় বিভিন্ন টেলিকম অপারেটর ইন্টারন্যাশনাল ট্যারিটরিয়াল কেবল (আইটিসি) ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) ইন্টারকানেকশন এক্সচেঞ্জ (আইসিএক্স) ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোপাইডর (আইএসপি) অপারেটরদের সঙ্গে বৈঠকের পর ট্যারিফ নির্ধারণ করা হবে। এনটিটিএন অপারেটরদের জন্য ট্যারিফ নির্ধারণের জন্য ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়, বিটিআরসি এবং পাঁচটি এনটিটিএন অপারেটর সমন্বয়ে একটি কমিটি কাজও করে যাচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বিটিআরসি সব ধরনের লাইসেন্সের জন্য একটি ট্যারিফ নির্ধারণের কাজ করে চলছে, এমন সময় নীতিমালা ভঙ্গ করে সরকারের অনুমোদন না নিয়ে নতুন ট্যারিফ ঘোষণা করছে বিটিসিএল। বিটিআরসির ট্যারিফ গাইডলাইন ২০১৫ মানা হয়নি। বিটিআরসির গাইডলাইন অনুযায়ী সব ধরনের ট্যারিফ কাঠামো, সবধরনের সেবা, প্রচারমূলক কার্যক্রম ও নেটওয়ার্ক ট্যারিফ চার্জের প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে বিটিআরসির কষ্ট মডেল মেনে চলতে হবে। এ বিষয়ে বিটিআরসির একজন উর্ধতন কর্মকর্তা বলেছেন, যে কোন ধরনের ট্যারিফ সার্ভিস এ্যান্ড ট্যারিফ স্ট্রাকচার অবশ্যই কমিশনে অনুমোদিত হতে হবে। যে সময়ে কমিশন ট্যারিফ নিয়ে কাজ করছে সেই সময় বিটিসিএল এ ধরনের ট্যারিফ ঘোষণা করতে পারে না। অপারেটররা বলছে, এ ধরনের সিদ্ধান্ত টেলিকম ব্যবসায় বিরূপ প্রভাব ফেলবে বিশেষ করে বেসরকারী খাতে পরিচালিত অপারেটরগণ মারাত্মকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হবে। বেসরকারী লাইসেন্সধারীরা অভিযোগ করেন, বেসরকারী অপারেটররা সরকারের সব ধরনের নীতিমালা মেনে চলে ব্যবসা করছে। তারপরও বেসরকারী অপারেটরদের কোন সমস্যা দেখা দিলে বিটিআরসি তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নিচ্ছে। কিন্তু বিটিসিএল নানা ক্ষেত্রেই টেলিকম নীতিমালা লঙ্ঘন করে চলছে। টেলিকম বিশেষজ্ঞরা বলেছেন যে, বিটিসিএল তার ব্যান্ডউইথ নিচ্ছে বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি লিমিটেডের (বিএসসিসিএল) কাছ থেকে। তারা আবার বিক্রি করছে বেসরকারী কোম্পানিগুলোর কাছে। এখানে বিটিসিএল যে মূল্যে বিএসসিসিএলের কাছ থেকে ব্যান্ডউইথ কিনছে তার চেয়েও কমমূল্যে ক্রেতাদের কাছে বিক্রির জন্য ট্যারিফ নির্ধারণ করেছে। এছাড়া বিটিসিএল রেগুলেশন অনুযায়ী অন্য অপারেটরদের কাছে ব্যান্ডউইথ বিক্রির বিধান নেই। শুধু আইএসপির কাছে তারা ব্যান্ডউইথ বিক্রয় করতে পারে। এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ না নিলে ধীরে ধীরে টেলিকম সেক্টরটি ধ্বংস হয়ে যাবে। যাতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সরকারের ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন। বিটিসিএল ও আইআইজি ব্যান্ডউইথ কম মূল্যে বিক্রি করলে লাভবান হবে মোবাইল অপারেটররা। এদিকে বিষয়টি নিয়ে বিটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে বিটিসিএলের একজন কর্মকর্তা বলেন, এই ট্যারিফ তাদের কাছ থেকে যারা ব্যান্ডউইথ নিয়ে থাকে তাদের ওপরই কার্যকর হবে।
×