ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

দেশে ফিরছেন দিতি তবে...

প্রকাশিত: ০৬:১৮, ৯ জানুয়ারি ২০১৬

দেশে ফিরছেন দিতি তবে...

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মস্তিষ্কে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে চেন্নাইয়ের মাদ্রাজ ইনস্টিটিউট অব অর্থোপেডিকস এ্যান্ড ট্রমাটোলজিতে চিকিৎসাধীন বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের বর্ষীয়ান অভিনেত্রী পারভীন সুলতানা দিতি। তবে শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হওয়ার দরুন, চিকিৎসকরাও আশার কথা শুনাতে পারছেন না। এমন অবস্থায় দু একদিনের মধ্যে দিতিকে দেশে ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা করছে তাঁর পরিবার। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী দিতিকে দেশে এনে স্বজনদের কাছাকাছি রাখতে চান তার ছেলে এবং মেয়ে। কেননা তার সুস্থ হওয়ার আশা অনেকটাই ক্ষীণ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বদৌলতে ভক্ত, শুভানুধ্যায়ীদের কাছে তার খবর পৌঁছে দিচ্ছেন দিতির মেয়ে লামিয়া চৌধুরী। বাংলা চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে দিতির পরিবারের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির মহাসচিব মুশফিকুর রহিম গুলজার। দিতির বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দিতির মেয়ে লামিয়ার সঙ্গে প্রায় প্রতিদিনই ভাইবারের মাধ্যমে কথা হচ্ছে। বুধবারও কথা হয়েছে। সে জানিয়েছে, দিতির শারীরিক অবস্থা দিনদিন খারাপ হচ্ছে। চিকিৎসকরাও প্রায় আশা ছেড়ে দিয়েছেন। এমন অবস্থায় দিতিকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছে তারা। এই মুহূর্তে তারই প্রস্তুতি চলছে। এদিকে গত ৪ জানুয়ারি দিতির মেয়ে লামিয়া চৌধুরী ফেসবুকের মাধ্যমে জানান, তার মা মারা যাচ্ছে। চিকিৎসকরা তার জন্য তেমন কিছুই করতে পারছেন না। কারণ ক্যান্সার নয়, কেমোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণেই শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটেছে তার। কয়েকমাস আগে ভারতের মাদ্রাজে চিকিৎসার জন্য যাওয়ার পর মস্তিষ্কে টিউমার ধরা পড়ে তার। ডিসেম্বরে পর পর দুটি অস্ত্রোপচারের পর তার অবস্থার আরও অবনতি হয়। দিতির মেয়ে লামিয়া সম্প্রতি ফেসবুকে লেখেন, তেজষ্ক্রিয় রশ্মির প্রভাবে পারকিনসন্স রোগ বাসা বেঁধেছে দিতির শরীরে। তার মায়ের জন্য তিনি দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন। সম্প্রতি দিতির একটি ছবি পোস্ট করেন লামিয়া, সেখানে দেখা যায় কেমোথেরাপির কারণে পড়ে যাওয়া চুলগুলো জমিয়ে রাখছেন দিতি। ছবিটির সঙ্গে লামিয়া লেখেন, তার যখন চুল পড়া শুরু হলো, তিনি একটি থলেতে নিজের চুল জমানো শুরু করলেন। এটা নিয়ে তিনি মন খারাপ করেননি। তার চিকিৎসকরা খুব অবাক হয়েছিল। তারা এ বিষয়ে তাকে কয়েকবার সতর্ক করেছিলেন, বিষয়টি তারা খুব সংবেদনশীলতার সঙ্গে উপস্থাপন করেছিলেন। তিনি একজন অভিনেত্রী। দিন শেষে তার চেহারাই তার কাছে সব কিছু। কিন্তু তিনি কোন পাত্তাই দেননি। এ তো কেবল চুল। আসবে আর যাবে। তিনি বলেন, তিনি এগুলো জমিয়ে দুটো পরচুলা বানাবেন। একটা তার এক বন্ধুর জন্য যার টাক পড়ে যাচ্ছে এবং আরেকটা তার জন্য। তিনি আমাদের গল্প করেছিলেন যে, আগেও তিনি চুল হারিয়েছেন। একবার শূটিং ফ্যানের সঙ্গে তার চুল আটকে গিয়েছিল আর সব চুল কেটে ফেলতে হয়েছিল। আরেকবার কেমিক্যালের কারণে তার চুল নষ্ট হয়ে গিয়েছিল, তখন তিনি চুল ছেটে ফেলেন। সেজন্য মন খারাপ করে তিনি সময় নষ্ট করেননি। স্রষ্টার প্রকৃত যোদ্ধার মতো তিনি সামনে এগিয়ে গেছেন, যে কোন দুর্ভোগের মুখোমুখি হতে একদম তৈরি, কোন অভিযোগ নেই। নির্ভয়। তিনি একবারও হোঁচট খাননি, একবারও ভাগ্যকে প্রশ্ন করেননি। নিজের জন্য দুঃখবোধ করেননি। তার আস্থা আমাকে বিস্ময়াভিভূত করেছে, উৎসাহিত করেছে আবার বিরক্তও করেছে। আমি বুঝতে পারিনি। তাকে কষ্ট পেতে দেখে আমার রাগ হয়েছে। তাকে দেখে মনে হয়েছে তিনি বিষয়টা পুরোপুরি বুঝতে পারছেন না, তখন আমার আরও রাগ হয়েছে। কিন্তু তিনি সারা জীবন এমনই ছিলেন। অপরাজেয়। এই স্পৃহা কোনদিন মরবে না।
×