ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

খালেদা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবেন কি-না সন্দেহ ॥ সৈয়দ আশরাফ

প্রকাশিত: ০৫:২১, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৫

খালেদা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবেন কি-না সন্দেহ ॥ সৈয়দ আশরাফ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ মুখে বললেও পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকবেন কিনা সেটি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। ভোট গণনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে থাকার এবং জনগণের যে কোন রায় মেনে নেয়ার জন্য বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়ে সৈয়দ আশরাফ বলেন, অতীত অভিজ্ঞতা থেকে আমার মনে হচ্ছে বিএনপি নেত্রী শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবেন কিনা সেটি নিয়ে এখনও সন্দেহ আছে। কারণ বিএনপি তাদের অবস্থা বুঝেই নির্বাচনকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে। তারা বেশিরভাগ সময়ই নির্বাচন থেকে শেষ মুহূর্তে সরে দাঁড়িয়েছে। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনের শেষ ভোট গণনা পর্যন্ত নির্বাচনে থাকুন। নির্বাচন বয়কটের মতো কিছু করবেন না। এমন কোন পরিস্থিতি সৃষ্টি করবেন না, যাতে নির্বাচন বিতর্কিত হয়। নির্বাচন বিতর্কিত হলে খালেদা জিয়ার লাভ কি? নির্বাচন বিতর্কিত হলে গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে। নির্বাচন বিতর্কিত হলে খালেদা জিয়ার কিছু হবে না। আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনারও কিছু হবে না। আমরা গণতন্ত্রকে বিতর্কিত করতে দিতে পারি না। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচনের কোন বিকল্প নেই। সোমবার রাতে ধানম-ির আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের পক্ষ থেকে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান। মূলত সাংবাদিক সম্মেলনে খালেদা জিয়ার বক্তব্যের জবাব দিতেই এ সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। পৌর নির্বাচনের পর সরকার পতনের আন্দোলন- খালেদা জিয়ার এমন বক্তব্যের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সৈয়দ আশরাফ বলেন, উনি (খালেদা জিয়া) এটা ১৯৯৬ সাল থেকেই দিচ্ছেন। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নিজস্ব জরিপে দেখা গেছে, বেশিরভাগ পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মেয়র-কাউন্সিলর প্রার্থীরা জয়ী হবেন। এখন নির্বাচনের পরই বুঝা যাবে, কোন জরিপ সঠিক। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়ার কঠোর সমালোচনা করে সৈয়দ আশরাফ বলেন, বিএনপি শুরু থেকেই নির্বাচনকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে। সেই অনুযায়ী খালেদা জিয়া বিদেশ থেকে পাঠ নিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিতর্কিত কথা বলছেন এবং বুদ্ধিজীবীদের কটাক্ষ করছেন। এ সবই তাঁর পরিকল্পনারই অংশ। এ প্রসঙ্গে সৈয়দ আশরাফ আরও বলেন, উনি (খালেদা জিয়া) শহীদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, বুদ্ধিজীবীদের কটাক্ষ করে কথা বলছেন। এইগুলো তো স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ইস্যু না। ৪৪ বছর আগে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছে। উনি এইগুলো বলেন, কারণ উনি দেশকে ভালবাসেন না। বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিশ্বাস করেন না। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার যে মানসিক অবস্থা উনি কিন্তু একলাইন লিখতে পারেন না। সুস্থভাবে চিন্তাও করতে পারেন না। আসন্ন পৌর নির্বাচনকে ‘প্রহসনের নির্বাচন’ বলে বিএনপির অভিযোগের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি জিতলেই যে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে এমন কোন কথা নেই। আবার আওয়ামী লীগ জিতলেই প্রহসনের নির্বাচন হবে তারও কোন যুক্তি নেই। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, আমার বিশ্বাস নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে। জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করবে। সৈয়দ আশরাফ বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রতিটি পৌরসভায় আওয়ামী লীগ জয়লাভ করলে কিছু হবে না, একটিতেও জয়লাভ না করতে পারলে কিছু হবে না। এতে সরকার পরিবর্তন হবে না। সরকার পরিবর্তন হবে আগামী সাধারণ নির্বাচনে। তিনি বলেন, বিএনপি বিভিন্ন সময় নানা অভিযোগ করে থাকে। কিন্তু কোন অভিযোগের সত্যতা পাইনি। অবশ্যই পৌর নির্বাচন অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। কিন্তু বিএনপি শুরু থেকেই এ নির্বাচনকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে। বিএনপির সেনা মোতায়েনের দাবি প্রসঙ্গে জনপ্রশাসনমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে স্থানীয় নির্বাচন কখনই সেনা মোতায়েন হয়নি। আমাদের মনে আছে নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনে তৎকালীন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত হোসেন বলেছিলেন, সেনা মোতায়েন না করলে তিনি পদত্যাগ করবেন। পরবর্তীতে সেনা মোতায়েন ছাড়াই নির্বাচন হলো এবং তার ফল নিয়ে কেউ বিতর্ক করল না। তাতেই প্রমাণ হয় সেনা মোতায়েন ছাড়াও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়। তাই অতীতে স্থানীয় নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের প্রয়োজন হয়নি, আগামীতেও প্রয়োজন নেই। সাংবাদিক সম্মেলনে এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ এমপি, ডাঃ দীপু মনি এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ড. আবদুর রাজ্জাক এমপি, দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, ত্রাণ সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডাঃ বদিউজ্জামান ভূঁইয়া ডাবলু, কেন্দ্রীয় নেতা এনামুল হক শামিম, যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল প্রমুখ। মিথ্যা অভিযোগ করে বাড়তি সুবিধা নিতে চায় বিএনপি- হানিফ ॥ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেছেন, মিথ্যা অভিযোগ করে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে বিএনপি বাড়তি সুবিধা নিতে চায়। সোমবার সকালে আজিমপুর কবরস্থানে সমাজের গরিব ও দুস্থদের মাঝে শীতের কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য হাজি মোহাম্মদ সেলিম। পৌর নির্বাচন নিয়ে বিভ্রান্তিকর বক্তব্য না দিতে বিএনপির প্রতি আহ্বান জানিয়ে হানিফ বলেন, নির্বাচন কমিশনকে অভিযোগের পর অভিযোগ করে বিএনপি বাড়তি সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করছে। জাতি মিথ্যাচার দেখতে চায় না। নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করার জন্যই এ ধরনের মিথ্যাচার করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বিএনপি একটি গভীর দুরভিসন্ধি নিয়ে চলছে। তাই নির্বাচন কমিশনকে বিতর্কিত করতে তাদের কোন পরিকল্পনা থাকতে পারে। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে বিএনপিকে বিভ্রান্তিকর বক্তব্য থেকে বিরত থাকতে হবে।
×