ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বন্ধ থাকবে বার

থার্টিফার্স্ট নাইটে উন্মুক্ত স্থানে উৎসব নিষিদ্ধ

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৫

থার্টিফার্স্ট নাইটে উন্মুক্ত স্থানে উৎসব নিষিদ্ধ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ খ্রিস্টবর্ষের শেষদিন থার্টিফার্স্ট নাইটের প্রথম প্রহরে উৎসব-আনন্দ ঘিরে বৈধ অস্ত্র বহনে নিষেধাজ্ঞা, আতশবাজি নিষিদ্ধ, যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ, উন্মুক্ত স্থানে জমায়েত বা উৎসবে নিষেধাজ্ঞাসহ ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। সারাদেশে হোটেল, রেস্তরাঁ ক্লাব ও বারগুলো সন্ধ্যা ছয়টা থেকে ১ জানুয়ারি সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। সোমবার পৃথক ব্রিফিংয়ে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এ কথা জানিয়েছেন। সোমবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে থার্টিফার্স্ট নাইটে নিরাপত্তার আয়োজন তুলে ধরেন কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। ৩১ ডিসেম্বর রাত আটটা থেকে পরদিন ভোর পাঁচটা পর্যন্ত সব ধরনের লাইসেন্স করা আগ্নেয়াস্ত্র বহন নিষিদ্ধ থাকবে। তিনি বলেন, রাজধানীর কোন সড়কের মোড়, ফ্লাইওভার বা রাস্তায় কোন ধরনের জমায়েত বা উৎসবের আয়োজন করা যাবে না। কোন অনুষ্ঠান করা যাবে না উন্মুক্ত স্থানেও। সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির উর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ডিএমপি কমিশনার বলেন, সন্ধ্যা ছয়টার পর হাতিরঝিল এলাকায় কাউকে অবস্থান করতে দেয়া হবে না। তবে হাতিরঝিলে যান চলাচল স্বাভাবিক থাকবে। গুলশান, বারিধারা, বনানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার বাসিন্দাদেরও রাত আটটার মধ্যে বাড়ি ফিরতে অনুরোধ করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সন্ধ্যা ছয়টা এবং গুলশান, বারিধারা, বনানীতে রাত আটটার পর বাইরের কোন ব্যক্তি বা যানবাহন ঢুকতে দেয়া হবে না। গুলশান, বারিধারা, বনানী এলাকায় প্রবেশের জন্য শুধু কামাল আতাতুর্ক এ্যাভিনিউ (কাকলি ক্রসিং) ব্যবহার করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে ঢাবি শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়া অন্যরা পুরনো হাইকোর্ট-দোয়েল চত্বর-শহীদ মিনার-জগন্নাথ হলের দক্ষিণ গেট- পলাশী মোড়ের রাস্তা ব্যবহার করতে পারবেন। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে গিয়ে কোথাও আতশবাজি বা পটকা ফোটানো যাবে না। উন্মুক্ত স্থানে সভা-সমাবেশ, নাচ-গান-আনন্দ করাও মানা। তবে ইনডোরে করতে কোন বাধা নেই বলে জানান পুলিশ কমিশনার। তিনি জানান, মাদকের বিষয়েও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া নজরদারি থাকবে। ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যার পর রাজধানীতে কোন বার খোলা থাকবে না। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় বসবে চেকপোস্ট, টহল থাকবে। থার্টিফার্স্ট নাইটে নিরাপত্তার স্বার্থে রাজধানীর গুলশান, বনানী, বারিধারা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এলাকার আবাসিক লোকজনকে আটটার মধ্যে বাসায় প্রবেশ করার অনুরোধ জানিয়েছে ডিএমপি। এসব এলাকায় আটটার পর বহিরাগতদের প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সংবাদ সম্মেলন ॥ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক রাকিবুর রহমান পরে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ছয়টা থেকে নতুন বছরের প্রথম দিন সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত সব বার বন্ধ থাকবে। তবে পাঁচতারকা হোটেলে বিদেশী পাসপোর্টধারীদের বিষয়ে এ নিয়ম শিথিল থাকবে বলে জানান তিনি। তিনি জানান, থার্টিফার্স্ট উপলক্ষে রাজধানীসহ দেশের রেস্টুরেন্ট, হোটেল, ক্লাব ও বার ২৪ ঘণ্টা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। বারগুলোতে অতিরিক্ত মদ্যপানের পর রাস্তাঘাটে মাতালদের বেপরোয়া ও উচ্ছৃঙ্খল আচরণ থেকে নগরবাসীকে নিরাপদে রাখতেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এদিকে থার্টিফার্স্ট নাইটের আগে থেকেই কেউ যাতে মাদকের মজুদ গড়ে তুলতে না পারে সেজন্য শুরু হয়েছে অভিযান। তবে ফাইভস্টার হোটেলের বারগুলো এ নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে। এছাড়া ঢাকা ক্লাব, উত্তরা ক্লাব ও গুলশান ক্লাবের মতো সোশ্যাল ক্লাবগুলো বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। পারমিট ছাড়া যাতে কোন ব্যক্তি এসব ক্লাবে ঢুকে মদ খেতে না পারে সেজন্য প্রতিটি ক্লাবে হানা দেয়া হবে। তেজগাঁওয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সদর দফতরে আায়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়। এতে অধিদফতরের মহাপরিচালক খন্দকার রাকিবুর রহমান বলেন, প্রতি বছর থার্টিফার্স্ট নাইটে শুধু মদ খেয়ে মাতলামি করার পরিণামেই ঘটে যত সব অপ্রীতিকর ঘটনা। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই এবার এ ধরনের কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। মাদকের অপব্যবহার ও যুবসমাজের উৎপাত-উচ্ছৃঙ্খলা দমনে সারাদেশের রেস্তরাঁ, হোটেল, ক্লাব ও বারগুলো ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ছয়টা থেকে ১ জানুয়ারি সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত বন্ধ রাখা হবে। তিনি বলেন, নিরাপদ ও সুন্দর জীবনযাপন নিশ্চিত করতেই মাদকের মতো উটকো ঝামেলা যে কোন মূল্যে প্রতিহত করা হবে। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই রাজধানীর জোনাল পরিদর্শকসহ অন্যান্য কর্মকর্তাকে কঠোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অবৈধ বারগুলোতে আগেভাগেই অভিযান চালানোর পাশাপাশি বৈধ বারগুলোও যাতে ওই রাতে বন্ধ রাখা যায় সে প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, মাদকাসক্তদের উৎপাতসহ অন্যান্য ঘটনা, দুর্ঘটনার তথ্য বা যে কোন অভিযোগ তাৎক্ষণিক জানানোর জন্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর দুটি হটলাইন চালু করেছে। নম্বর দুটি হলোÑ ০১৭০৮-৯০৪৪৫৪ ও ৮৮৭০০১২। এ সময় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের জনসংযোগ কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, এবার থার্র্টিফার্স্ট নাইট উপলক্ষে আগাম প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। অধিদফতরের (অপারেশন) পরিচালক ডিআইজি সৈয়দ তওফিক উদ্দিন আহমেদ এ অভিযানের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। গত দু’দিনে গুলশান, মালিবাগ, রমনা ও কমলাপুরে অভিযান চালিয়ে অবৈধ মাদকসহ সাতজনকে আটক করা হয়। তাদের জেলহাজতে পাঠানো হয়। থার্টিফার্স্ট নাইট ছাড়াও জানুয়ারিজুড়ে এ অভিযান চালানো হবে। তিনি জানান, রাজধানীতে বৈধ ৭১ ও অবৈধ ১৬ বার রয়েছে। এরমধ্যে অবৈধ বারগুলোতে রবিবার রাতেই অভিযান শুরু হয়। উত্তরার কয়েকটি ক্লাবে মাদকের টিম হানা দেয়। তবে আগেই টের পেয়ে যাওয়ায় রাতে এ দুটি বারে আসা লোকজন সটকে পড়ে। এ ১৬ অবৈধ বার দীর্ঘদিন ধরেই স্থানীয় প্রশাসন ও প্রভাবশালীদের যোগসাজশে চলে আসছে। আজ থেকে তিন দিনব্যাপী মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান শুরু হবে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ও মেট্রোপলিটন পুলিশ এ অভিযান পরিচালনা করবে।
×