ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পরিবারকে সময় দিন

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৫

পরিবারকে সময় দিন

জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে আমরা সবাই ব্যস্ত। ব্যবসা-বাণিজ্যে, চাকরিতে বা জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভের জন্য সবাই দুরন্ত গতিতে ছুটে চলেছি সময়ের রথে চড়ে। ছুটতে ছুটতে, চলতে-চলতে অনেকেই ভুলে যাই আমাদের চারপাশ এবং পরিবারকে। পরিবারকে সময় দেয়ার সময় কোথায়? আপনি হয়ত ভাবছেন এ আবার কেমন কথা। আমি তো পরিবারের সঙ্গেই আছি। ওদের জন্যই তো সব করছি। হ্যাঁ, আপনি পরিবারের সঙ্গেই আছেন, ওদের জন্যই এত কষ্ট করছেন- কথাটি ঠিক। কিন্তু, আপনি জানেন না সঙ্গে থাকা মানেই কাছাকাছি থাকা নয়। সব কাজ করছেন ঠিকই কিন্তু আসল কাজ করছেন না। আপনি কি আপনার সন্তানকে যথেষ্ট সময় দেন। ওরা কি আপনার প্রতি নির্ভয়। আপনার সঙ্গে সমস্যা, সুখ-দুঃখ শেয়ার করে। স্কুলে বন্ধুদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনা কি আপনাকে বলে। সন্তানের দিকে তাকালে ওদের ভেতরটা বাবা-মায়ের কাছে আয়নার মতো পরিষ্কার দেখা যাবে। সন্তানের বাবা-মায়ের কাছে লুকানোর কিছু নেই। যদি থাকে আপনি তো জানেন না। আপনি তো ওভাবে তাকিয়ে দেখেননি। ওদের ভেতরটা আয়নার মতো নাকি অন্ধকারাছন্ন। আপনার স্ত্রীর ভরণ-পোষণ সবই তো করছেন। কিন্তু আপনি কি কখনও ভেবে দেখেছেন তার মধ্যে আত্মতৃপ্তি বোধ আছে কিনা। সে আপনাকে বন্ধু ভাবে কি না। আপনি কি তাকে সঙ্গ দেন। সঙ্গ মানে শুধু পাশাপাশি থাকা নয়। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক হবে মান্নাদের সেই গানের মতো, ‘আমার না যদি থাকে সুর, তোমার আছে তুমি তা দেবে। তোমার গন্ধহারা ফুল আমার সুরভী নেবে। এরই নাম প্রেম...। এভাবে কি ভেবে দেখেছেন? সঙ্গহীনতায় স্বামী-স্ত্রীর দূরত্ব বেড়ে যায়। অল্প কথাতেই প্রায়ই খিটিমিটি লেগে যায়। ছোট বেলায় একটু চোখের আড়াল হলেই মা-বাবার কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য মনটা আকুল হয়ে উঠত। আজ আপনার বৃদ্ধ মা-বাবা আপনার জন্য ব্যাকুল হয়ে অপেক্ষায় থাকেন। আপনি তা বুঝতেও পারেন না। আপনার একটু সময় দেয়া, একটু কথা বলা, একটু বুকে টেনে নেয়া তাদের জীবনকে আনন্দময় করে তুলবে। তাদের আরও বেশি দিন বেঁচে থাকার ইচ্ছে করবে। অযতেœ অবহেলায় বেড়ে ওঠা গাছ যেমন আগাছা, তেমনি। শষ্যক্ষেতের আগাছা উপড়ে ফেলা যায়। আপনি কি সমাজ থেকে আপনার আগাছা সন্তানকে উপড়ে ফেলতে পারবেন? আপনার মেয়েটাও কেমন যেন ইচড়ে পাকা হয়েছে। ইন্ডিয়ান টিভি সিরিয়ালের মেয়েদের মতো করে কথা বলে। এখন ভেবে দেখুন পরিবার সন্তানকে সময় না দিয়ে ছুটে চলায় কি লাভ আপনার হয়েছে। জীবনটা তো ষোল আনাই মিছে হয়ে গেছে। এতক্ষণ তো যে সকল অভিভাবক অর্থনৈতিক দায়িত্ব পালন করেন কিন্তু শুধু মানসিকভাবে পরিবারের সঙ্গে নেই, পরিবারকে সঙ্গ দেয় না, সন্তানদের সময় ও সঠিক দিকনির্দেশনা দেয় না তাদের কথাই বলা হয়েছে। কিন্তু যেসব অভিভাবক বাড়িতে ঝগড়া-ঝাটি মারপিট করে, স্বামী-স্ত্রীতে অশান্তি, সন্দেহ, সেই পরিবারের শিশুদের কথা ভাবুন। এসব পরিবারের শিশুরা আক্রমণাত্মক আচরণে অভ্যস্থ হয়ে যায়। হিংস্র আক্রমণাত্মক ভাষা শিশুর মনে বিরূপ প্রভাব ফেলে। এ ধরনের পরিবারের সন্তান বেশি বখে যায়। আবার একক পরিবারের বা বাবা-মা উভয় চাকরি করেন এ ধরনের পরিবারের সন্তান নিঃসঙ্গতায় ভোগে। বাবা-মায়ের বা আপনজনের সঙ্গহীনতায় তারা একটু একরোখা জেদি হয়ে উঠে। মনোবিজ্ঞানীদের গবেষণা থেকে জানা যায়, পরিবারে যে কোন কারণে অবহেলিত শিশুরা সব সময় নিজ পরিবারে সমস্যা তৈরি করে থাকে। কারণ অবহেলায় বেড়ে উঠা প্রতিটি শিশু সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যর্থতার পরিচয় দেয়। পাশাপাশি ভালবাসার মধ্যে বেড়ে উঠা শিশু দেহ ও মনে পরিপূর্ণভাবে বিকশিত হয়। নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠে। তাই শিশুর মানসিক বৃদ্ধির জন্য প্রথমত পরিবারকে সজাগ হতে হবে, যাতে করে শিশুর মনে এই ধারণা তৈরি না হয় সে অবহেলিত। তার সঙ্গে সময় কাটাতে হবে। পরিবারই হলো রাষ্ট্র ও সমাজের মূল ভিত্তি। পরিবার থেকেই একজন নাগরিকের সৃষ্টি হয়। পরিবারই হলো মানুষ গড়ার প্রথম শিক্ষাকেন্দ্র। ভালবাসার জন্ম হয় পরিবার থেকেই। ভালবাসা বিকশিত ও পরিপূর্ণতা লাভ করে এই পরিবারেই। আর সেই পরিবারেই যদি সব সময় অশান্তি লেগে থাকে, ঝগড়া-বিবাদ লেগে থাকে, তবে সন্তানরাও কলহ প্রিয় হয়ে উঠে। সন্তানের মানসিক বিকাশে বাবা-মায়ের ভালবাসার বিকল্প নেই। পরিবারে মাকে নির্যাতিত হতে দেখলে বা মা-বাবা পরস্পরকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করলে সন্তানরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগে। আবার অনেক পরিবারে মেয়ে সন্তানের চেয়ে ছেলে সন্তানকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। এই পাথর্ক্য মেয়ে সন্তানটির উপর নেতীবাচক প্রভাব পড়ে। আপনি জীবনে অনেক কিছু পেয়েছেন, অনেক কিছু হয়েছেন। কিন্তু আপনার এই আনন্দ বা প্রাপ্তির সঙ্গে যদি পরিবার না থাকে তা হলে এই প্রাপ্তির আনন্দ কোথায়। একজন মানুষ যত বড় হোক না কেন তার মূল গ্রথিত থাকে পরিবারেই। পরিবারের সুখ-দুঃখ মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে। পরিবারের সুখই হচ্ছে প্রকৃত সুখ। তাই পরিবারের প্রতিটি সদস্যের প্রতি বিশেষ করে শিশুদের প্রতি যতœশীল হতে হবে। তাদের ভাল মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তাতে একদিকে যেমন আপনি ভাল থাকবেন তেমনি দেশটাও সুনাগরিকে ভরে যাবে। একজন সুনাগরিকই পারে দেশটাকে বদলে দিতে। মডেল : শামীম জাহিদ ও স্বপ্নীল
×