ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এবার ব্যালটের পালা ॥ পৌর নির্বাচনী প্রচার আজ শেষ

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৫

এবার ব্যালটের পালা ॥ পৌর নির্বাচনী প্রচার আজ শেষ

শাহীন রহমান ॥ নির্বাচনী জোয়ারে ভাসছে সারাদেশ। পৌর নির্বাচন নিয়ে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের মধ্যে বিরাজ করছে টানটান উত্তেজনা। শেষ মুহূর্তে এসে চলছে জয়-পরাজয়ের হিসাব নিকাশ। খাতা-কলমে পৌর নির্বাচন স্থানীয় নির্বাচন হলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন এ নির্বাচন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জনমতের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। তবে এটা নির্ভর করছে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার ওপর। নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্য চলছে জনমত জরিপ। আওয়ামী লীগ বিএনপিসহ প্রতিদ্বন্দ্বী সব পক্ষই এ নির্বাচনে জয়ের বিষয়ে আশাবাদী বলে দাবি করেছে। দেশের সচেতন জনগণও এ নির্বাচনকে গুরুত্ব দিয়ে ভাবছে। তারা তাকিয়ে আছে পৌর নির্বাচনের দিকে। প্রথমবারের মতো আগামী বুধবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দলভিত্তিক পৌরসভা নির্বাচন। প্রচারযুদ্ধ শেষ হচ্ছে আজ। এবার ব্যালটের পালা। এ নির্বাচনে ইসির নিবন্ধিত ১৯ রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা অংশ নিচ্ছেন। প্রার্থীদের একদিন পরে নামতে হবে ভোটের যুদ্ধে। নির্বাচনে প্রার্থীদের আজকের মধ্যে সব ধরনের প্রচার শেষ করতে হবে। ইতোমধ্যে নির্বাচন সুষ্ঠু করতে ইসির পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। আজ থেকে নির্বাচনী এলাকায় টহলে নামছে বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ, আনসার ব্যাটালিয়নের সমন্বয়ে গঠিত স্ট্রাইকিং ফোর্স। বিভিন্ন মহল থেকে নির্বাচনে সংঘাত-সহিংসতার আশঙ্কা করা হলেও প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ জানিয়েছেন নির্বাচন সুষ্ঠুভাবেই সম্পন্ন হবে। যেসব এলাকায় সংঘাত সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে সেসব এলাকায় বাড়তি নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কেন্দ্র পাহারায় মোতায়েন থাকছে। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি করা হলেও শেষ পর্যন্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার তা নাকচ করে দিয়েছেন। তবে নির্বাচন কমিশন থেকে জানানো হয়েছে, বহুদিন পর সকল দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ নির্বাচন হাল্কা করে দেখার কোন সুযোগ নেই। জনগণের কাছে এ নির্বাচনের গুরুত্ব রয়েছে অনেক। তাই সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে নির্বাচনে সঠিক দায়িত্ব পালনে কড়া নির্দেশনা ইসির পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগের নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক থাকলেও এ নির্বাচন ইসির জন্য অগ্নিপরীক্ষা। মূলত তাদের ওপর নির্ভর করছে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কিনা। এদিকে পৌর নির্বাচন নিয়ে ভোটের অঙ্ক কষছে রাজনৈতিক দলগুলো। দীর্ঘদিন পরে হলেও এ নির্বাচন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মাঠের জনমত জরিপের এক বিশেষ সুযোগ। এ সুযোগকে কাজে লাগাতে মরিয়া উভয় রাজনৈতিক দল। ইতোমধ্যে দলের পক্ষ থেকে জরিপ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জরিপে তাদের দল ২শ’ পৌরসভায় জনমত জরিপে এগিয়ে আছে। অপরদিকে বিএনপির পক্ষ থেকেও জনমত জরিপে ১৬০ পৌরসভায় এগিয়ে আছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অবশ্য বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নির্বাচন সুষ্ঠু হলে ৮০ ভাগ পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থী জয়লাভ করবে। বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া দাবি করেছেন জনগণ ধানের শীষে ভোট দেয়ার জন্য মুখিয়ে রয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে তাদের প্রার্থীরা ৮০ ভাগ পৌরসভায় জয়লাভ করবেন। এদিকে বিএনপির পৌরসভাভিত্তিক যে জনমত বিশ্লেষণ করা হয়েছে, সেখানে বলা হয়েছে সুষ্ঠু ভোট হলে কমপক্ষে ১৬০ পৌরসভায় ধানের শীষের প্রার্থী বিজয়ী হবে। পৌর নির্বাচনে বিএনপির কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেলের সদস্য সচিব যুগ্ম মহাসচিব মোঃ শাহজাহান বলেছেন, সুষ্ঠু ভোট হলে কতগুলো পৌরসভায় বিএনপি প্রার্থী বিজয়ী হবেন, তা সংখ্যা দিয়ে বলতে চাই না। তবে দলের বিশ্লেষণ হচ্ছে সংখ্যাগরিষ্ঠ পৌরসভায় বিএনপির মেয়র প্রার্থীরা নির্বাচিত হবেন। এদিকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় তদারক কমিটির এক বৈঠকে জানানো হয়েছে, জনসমর্থনে প্রায় ২০০ পৌরসভায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা এগিয়ে রয়েছেন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে দলটির কেন্দ্রীয় তদারক কমিটির এক সভায় এ মতামত ব্যক্ত করেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। এদিকে নির্বাচন কমিশন থেকে পৌর নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার ঘোষণা দিলেও তিন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেই ইসির বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ আনা হয়েছে। বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপির পক্ষ থেকে প্রথমেই শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। এমনকি তারা বেশ কয়েকবার প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন করার সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়েছে। দলের স্থায়ী কমিটির পক্ষ থেকে ড. আব্দুল মইন খান প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাত করে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সেনাবাহিনীও মোতায়েনের আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেন। অপরদিকে এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ইসির বিরুদ্ধে বিএনপির প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ করা হয়েছে। দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাত করে সাংবাদিকদের বলেন, ইসি আওয়ামী লীগের প্রতি নির্দয় আচরণ করছে। অপরদিকে বিএনপির প্রতি সদয় আচরণ করছে। অপরদিকে এ নির্বাচনে অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকেও এ নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে। তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার তিন দলের অভিযোগের প্রেক্ষিতে বলেন, ইসির ভূমিকা নিরপেক্ষ বলেই সবাই ইসির বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে। এতে প্রমাণ হয় কমিশন তাদের দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করছে। এদিকে সমালোচনা থাকলেও নির্বাচনে প্রথম থেকেই নির্বাচনে কঠোর মনোভাব প্রকাশ করে আসছে ইসি। বিশেষ করে তফসিল ঘোষণার পর বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে নির্বাচন পিছিয়ে দেয়ার দাবি করা হয়। অপরদিকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এমপিদের নির্বাচনী প্রচারের সুযোগ দাবি করা হয়। কিন্তু ইসি থেকে সব দাবি নাকচ করে দেয়া হয়। এছাড়া নির্বাচনে আচরণবিধি মেনে চলতে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খলেদা জিয়া, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ সব রাজনৈতিক দলকে চিঠি দিয়ে সতর্ক করে দেয়া হয়। এছাড়া সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি যাতে কোন প্রকার নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করতে না পারে সে জন্য মন্ত্রিপরিষদ সচিবকেই চিঠি দিয়ে সতর্ক করে দেয়া হয়। এছাড়া ইসির পক্ষ থেকেই একাধিকবার মাঠপর্যায়ে কঠোর বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে। নির্বাচনী প্রচারের ক্ষেত্রে আচরণবিধি লঙ্ঘন তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়, মাঠপর্যায়ে এক শ’ মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীকে জরিমানা করা হয়েছে আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে। এছাড়া সরকারী দলের যেসব এমপি-মন্ত্রী আচরণবিধি লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তাদের চিঠি দেয়া হয়েছে। তিন এমপিকে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে শোকজ করা হয়েছে। ইসির নোটিসের ভিত্তিতে তারা ক্ষমা প্রার্থনাও করেছেন। তবে ইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে ইসি শুধু প্রার্থী দেখেছে। কোন্ দলের প্রার্থী তা বিবেচনায় আনা হয়নি। এদিকে ভোট সুষ্ঠু করতে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। গত ১৯ ডিসেম্বর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বৈঠকে ইসির পক্ষ থেকে বলা হণ্ড কেন্দ্রে ভোটগ্রহণে কোন প্রকার বাধা এলে সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্র বন্ধ করে দিতে হবে। এছাড়া কোন দলের কোন পক্ষই যেন কেন্দ্র দখলে সুযোগ না পায় সে বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া কোন প্রার্থী বা তার সমর্থকরা কোন প্রকার ভোট কারচুপি বা ভোট কেটে ব্যালট বাক্সে ঢুকাতে না পারে সে জন্য রাতে তা পরীক্ষা করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় কেন্দ্র পৌঁছানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্বাচনে কোন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনে অবহেলার অভিযোগ এলে আইনানুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে। তবে এসব কঠোর অবস্থানের পরও নির্বাচনী প্রচারে সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। নির্বাচন কমিশনার শাহনেওয়াজ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, যেসব জায়গায় আচরণবিধি লঙ্ঘনের বা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে তা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। যেসব জায়গায় এসব ঘটনা ঘটেছে সেসব এলাকায় তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। গত ২৪ ডিসেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার দেশের ২৩৪টি পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষে ৩ ডিসেম্বর মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১৩ হাজারের বেশি প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। যাচাই-বাছাই শেষে ১২ হাজারের বেশি প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে মেয়র পদে ১৯ রাজনৈতিক দলের ৯৩০ প্রার্থী রয়েছেন। বুধবার অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনে প্রায় সাড়ে তিন হাজার ভোট কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। প্রায় ৭০ লাখ ভোটার এ নির্বাচনে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এদিকে নির্বাচন সামনে রেখে ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে ব্যালট পেপার, ব্যালট বাক্স ও নির্বাচনী সরঞ্জাম। ভোটের আগের দিন রাতে এসব সরঞ্জাম কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠানো হবে। ইসি জানিয়েছে, ১৪ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া প্রচার আজ শেষ হচ্ছে। রাত ১২টার পর থেকে নির্বাচনী এলাকায় মিছিল-মিটিং, জনসমাবেশ, যানচলাচল, বহিরাগতদের এলাকা ত্যাগসহ বিভিন্ন বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এ নিষেধাজ্ঞা কঠোরভাবে মেনে চলতে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে কঠোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়েছে। আজ থেকে নামছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ॥ ইসি জানিয়েছে, নির্বাচন সামনে রেখে আজ থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে স্ট্রাইকিং ফোর্স টহল শুরু করছে। ইতোমধ্যে ২২৯টি পৌরসভায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের উপ-সচিব সামসুল আমল স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়র সিনিয়র সচিব ড. মোঃ মোজাম্মেল হক খানের কাছে পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ২৮ ডিসেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর এ সব পৌরসভায় চার দিনের জন্য মোট ১০২ প্লাটুন বিজিবি সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। তবে উপকূলীয় ছয়টি পৌরসভায় কোস্ট গার্ড দায়িত্ব পালন করবে। এ ছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যও মোতায়েন করা হচ্ছে আজ থেকেই। এদিকে নির্বাচনে সাধারণ কেন্দ্রে ১৯ জন এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ২০ জন ফোর্স মোতায়েনের পরিপত্র জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ভোটকেন্দ্রে কমপক্ষে পাঁচজন (অস্ত্রসহ) ও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে কমপক্ষে ছয়জন (অস্ত্রসহ) পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবে বলে জানা গেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, উপকূলীয় ছয়টি পৌরসভা (মুলাদী, মেহেন্দীগঞ্জ, পাথরঘাটা, রামগতি, সন্দ্বীপ ও হাতিয়া) ছাড়া বাকি ২২৯টি পৌরসভায় বিজিবি মোতায়নের সিদ্ধান্ত প্রদান করা হয়েছে। চিঠিতে আরও বলা হয়, ভোটার সংখ্যা ১ লাখের অধিক হলে ২ প্লাটুন এবং যেসব এলাকায় ভোটার সংখ্যা ৫০ হাজারে অধিক সেখানে এক প্লাটুনের বেশি মোতায়েন থাকবে। এ ছাড়া ১০ হাজার ভোটার হলে এক প্লাটুনের কম বিজিবি দায়িত্ব পালন করবেন। এ বিষয়ে জানা গেছে, জঙ্গী হুমকি মোকাবেলায় বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বিশেষ করে রাজশাহী, রংপুর বিভাগে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে আজ থেকে। যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা ॥ এদিকে নির্বাচনী এলাকায় যান চালাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। ইসির নির্দেশনা মেনে ২৯ ডিসেম্বর রাত ১২টা থেকে ৩০ ডিসেম্বর রাত ১২টা পর্যন্ত যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। পৌরসভা এলাকায় বেবিট্যাক্সি, ট্যাক্সি ক্যাব, মাইক্রোবাস, জীপ, পিকআপ, কার, বাস, ট্রাক ও টেম্পোতে এ নিষেধাজ্ঞা থাকবে। ইসি কর্মকর্তারা জানান, কমিশন ও রিটার্নিং কর্মকর্তার অনুমোদিত পরিচয়পত্রধারী নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না। জাতীয় মহাসড়ক, বন্দর, জরুরী পণ্য সরবরাহ ও অন্যান্য প্রয়োজনে এ নিষেধাজ্ঞা শিথিল থাকবে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র ॥ ২৩৩ পৌরসভার মোট ৩,৪০৩টি কেন্দ্রের মধ্যে ১ হাজার ১৮৪টিই ঝুঁঁকিপূর্ণ বলে ইসির কাছে দেয়া এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। যা মোট ভোটকেন্দ্রের ৩৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। এতে বলা হয়েছে, সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র রয়েছে খুলনা বিভাগে। এ বিভাগের ৪৭১টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৯৫টিই ঝুঁকিপূর্ণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া রংপুর বিভাগে ৩০৪টি কেন্দ্রের মধ্যে ১১৮টি, বরিশাল বিভাগে ১৬৭টি কেন্দ্রের মধ্যে ৬৩টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ৪৮০টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৬৯টি, ঢাকা বিভাগে ৯৯১টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩৪৮টি, রাজশাহী বিভাগে ৮০১টি কেন্দ্রের মধ্যে ২৪৬টি এবং সিলেট বিভাগে ১৮৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ৪৫টি ঝুঁকিপূর্ণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
×