ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মতবিনিময় সভায় বিশিষ্ট শিক্ষাবিদরা নয়া পদ্ধতি কার্যকরে কমিশন গঠনের দাবি জানালেন

নতুন পদ্ধতিতে শিক্ষক নিয়োগ হলে অনেক সমস্যার সমাধান হবে

প্রকাশিত: ০৭:০৬, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৫

নতুন পদ্ধতিতে শিক্ষক নিয়োগ হলে অনেক সমস্যার সমাধান হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পরিচালনা পর্ষদের ক্ষমতা খর্ব করে বেসরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের নতুন পদ্ধতিকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে শিক্ষাবিদরা বলছেন, এই পদ্ধতি যত দ্রুত বাস্তবায়ন হবে ততই মঙ্গল হবে। পাশাপাশি মানসম্মত শিক্ষক নিয়োগে শিক্ষাবিদরা নিয়োগ পরীক্ষার নম্বর বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে দ্রুতই সরকারী কর্ম কমিশনের আদলে একটি কমিশন গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন। ‘বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা গ্রহণ ও প্রত্যয়ন বিধিমালা-২০০৬’র সাম্প্রতিক সংশোধনের প্রেক্ষিতে পরবর্তী কার্যক্রম বিষয়ে মতবিনিময় সভায় এমন মত দিয়েছেন তারা। বুধবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে এই মতবিনিময় সভায় শিক্ষাবিদ ছাড়াও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের কয়েকজন সভাপতি উপস্থিত ছিলেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ১১ নবেম্বরের এক আদেশে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এমপিওভুক্ত বেসরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়। শিক্ষক নিয়োগে ব্যবস্থাপনা কমিটির ক্ষমতা খর্ব করে গত ২২ অক্টোবর তারিখ দিয়ে ওই বিধিমালার সংশোধনী প্রকাশ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ‘বেসরকারি শিক্ষক নির্বাচন কমিশন’র অধীনে নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় মেধা তালিকা তৈরি করে শিক্ষক নিয়োগ দেবে বলে সংশোধিত বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে। নির্দেশনাটি ‘বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা গ্রহণ ও প্রত্যয়ন বিধিমালা-২০০৬’ এর অধিকতর সংশোধনীর গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির তারিখ থেকে কার্যকর হবে বলে জানানো হয়। কিন্তু সংসদ সদস্যরা নতুন নিয়মের বিরোধী। পরিচালনা পর্ষদের মাধ্যমে নিয়োগ হলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ‘নিয়োগ বাণিজ্য’ হয় বলে মতবিনিময় সভায় জানান শিক্ষাবিদরা। এতে মানসম্পন্ন শিক্ষকও তৈরি হয় না। নতুন পদ্ধতিতে শিক্ষক নিয়োগের উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে দুর্নীতিসহ অনেক সমস্যার সমাধান হবে বলে মনে করেন ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় পাস করেও যারা চাকরি পাবেন না তাদের কী হবে- সে বিষয়টিও মাথায় রাখার জন্য বলেন এই শিক্ষাবিদ। অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, একটি স্কুলে শিক্ষক ভাল হয়ে গেলে স্কুল ভাল হয়ে যায়। ভাল শিক্ষকের ওপর জোর দেন আবু সায়ীদ। তিনি বলেন, নৈতিকতা সিলেবাসে ঢোকানো হচ্ছে আর প্রতিষ্ঠান দুর্নীতিগ্রস্ত হচ্ছে। অযোগ্য মানুষ শিক্ষক হয়েছে, যোগ্য মানুষ শিক্ষক হতে পারছেন না। যিনি টাকা দিয়ে ঢোকেন তিনি ওই টাকার এক শ’ গুণ তোলেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হারুন-অর রশীদ বলেন, একজন এমপি চারটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি, অনেক প্রতিষ্ঠানে তাদের স্ত্রী-শ্যালকদেরও সভাপতি পদে বসান। শিক্ষক নিয়োগে বাণিজ্য হচ্ছে, এটা বড় সমস্যা। এর দায় এমপিরা এড়াতে পারেন না। সুতরাং নতুন পদ্ধতি বাণিজ্য ঠেকাবে। নতুন পদ্ধতিতে নিয়োগ বাণিজ্যে ‘সিল’ করে দেয়া হয়েছে জানিয়ে এই পদ্ধতিকে স্বাগত জানান অধ্যাপক জাফর ইকবাল। তিনি সংশোধিত বিধিমালা ওয়েসবাইটে প্রকাশ করে জনমত সংগ্রহ করার পরামর্শ দেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবেক মন্ত্রী আফছারুল আমীন নতুন উদ্যোগকে সুন্দর ও বাস্তবমুখী উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, নিয়োগের জায়গায় বার বার উঠে এসেছে দুর্নীতি। যিনি পরিচালনা পর্ষদে থাকবেন তার শিক্ষাগত যোগ্যতার ওপর গুরুত্ব দেন আফছারুল আমীন।
×