ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আসমা সুমি

সময় এখন প্রিয়াঙ্কার

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৫

সময় এখন প্রিয়াঙ্কার

সেলিব্রেটিদের মধ্যে কে কত বেশি জনপ্রিয় তা এখন স্যোসাল মিডিয়ায় তাঁদের ফলোয়ারের সংখ্যা থেকে আন্দাজ পাওয়া যায়। স্যোসাল মিডিয়ায় যার যত বেশি ফলোয়ার সে তত বড় সেলিব্রেটি। ট্যুইটারে ফলোয়ারের বিচারে এশিয়ার প্রথম তিনেই রয়েছেন বলিউড অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। কোয়ান্টিকোয় অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি এখন সবচেয়ে চর্চিত ভারতীয় অভিনেত্রীদের একজন। তিনি যে কোন ধরনের চরিত্রেই সফল। টুইটারে মোস্ট ফলোড এশিয়ান ওম্যান-এর তালিকায় থাকা প্রিয়াঙ্কার ফলোয়ারের সংখ্যা প্রায় ১২ মিলিয়ন। শীঘ্রই এই সংখ্যাটা দ্বিগুণ হয়ে যাবে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। সম্প্রতি মুক্তি পেল প্রিয়াঙ্কা অভিনীত ‘বাজিরাও মাস্তানি’ ছবিটি। এরপর প্রিয়াঙ্কা অভিনীত মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে প্রকাশ ঝাহ পরিচালিত ‘গঙ্গাজল-২’। সিক্যুয়ালের ছবি ‘ডন-৩’-এর কাজ তো রয়েছেই। ইতোমধ্যে প্রিয়াঙ্কা গায়িকা ও প্রযোজক হিসেবেও সফল হয়েছেন। মার্কিন মুলুকে কোয়ান্টিকো দিয়ে ইতোমধ্যে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। কোয়ান্টিকোর দ্বিতীয় সিজনও শুরু“হতে যাচ্ছে। হলিউড বলিউড দু’জায়গাতেই সমানতালে সফলতা অর্জন করেছেন প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। এবার পরিচালক সঞ্জয়লীলা বানসালি রামলীলার টিমমেম্বার রণবীর-দীপিকা আর প্রিয়াঙ্কাকে নিয়ে তৈরি করেছেন তার ‘বাজিরাও মাস্তানি’। ১৮ শতকের যোদ্ধা পেশোয়ার বাজিরাওয়ের জীবন নিয়ে নির্মিত হয়েছে ‘বাজিরাও মাস্তানি’ ছবিটি। যেখানে বাজিরাও অবতারে রণবীর সিং, কাশীবাঈ প্রিয়াঙ্কা ও মাস্তানি চরিত্রে দীপিকা। ছবির বিষয় হোক বা চরিত্রের জন্য অভিনেতাদের লুকে রয়েছে বেশ চমক। সঞ্জয়লীলা বানসালির ছবি মানেই জমকালো সেট, রাজকীয় ভাবসাব আর দুর্দান্ত পোশাক- আশাকে দেখতে পাই কলাকুশলীদের। চোখের তৃপ্তি একেবারে নিশ্চিত। সঞ্জয়লীলা বানসালির ছবি মানেই নতুননত্ব থাকবেই। এই লিস্ট থেকে বাদ পড়ল না তার বাজিরাও মাস্তানিও। সদ্য মুক্তি পেয়েছে রণবীর-দীপিকা-প্রিয়াঙ্কা অভিনীত এই ছবি। দেড় মাস আগেই ট্রেইলার মুক্তি পেয়েছে আর এতেই ব্যাপক সাড়া ফেলেছে দর্শক মনে। সঞ্জয়লীলা বানসালির ছবিটি মুক্তি পায় গত ১৮ ডিসেম্বর। ছবিটি প্রযোজনা ও সঙ্গিতায়োজন করেছেন সঞ্জয়লীলা বানসালি নিজেই। তবে এখন প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছে প্রিয়াঙ্কার ‘বাজিরাও মাস্তানি’র ও একই দিনে মুক্তি পাওয়া শাহরুখ-কাজলের ‘দিলওয়ালে’র। বলিউডের ছবিতে সঞ্জয়লীলা বানসালি মানেই ছবি হিট। সঞ্জয়লীলা বানসালির ছবি মানেই অন্যকিছু। হাম দিল দে চুকে সানাম, ব্ল্যাক, দেবদাসসহ অসংখ্য ব্যবসা সফল ছবি উপহার তো দিয়েছেনই, পাশাপাশি মুম্বাই চলচ্চিত্রকে নিয়ে গেছেন অন্যরকম উচ্চতায়, তার সর্বশেষ পরিচালিত ছবি ‘রামলীলা’ পর্যন্ত সবক’টি ছবিই দারুণ সাড়া জাগিয়েছে পুরো ভারতবর্ষে। অনেকেই মনে করছেন সঞ্জয়লীলার অতীত কর্মের জন্যই তিনি তার বর্তমান মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘বাজিরাও মাস্তানি’ ছবিটিতেও সেই একই স্বাক্ষর রেখেছেন। ‘বাজিরাও মাস্তানি’র অভিনেতা রণবীর সিং বলেছেন, তার সহ-অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা চোপড়া শূটিং করতে গিয়ে তৃতীয় দিন কান্না করে ফেলেছিলেন। কিছুদিন আগে ছবিটির টেুলর প্রকাশ অনুষ্ঠানে এমন কথাই জানিয়েছেন রণবীর। অনুষ্ঠানে প্রিয়াঙ্কা বলেছেন, আমাকে খুব বেশি কঠিন কাজ করতে হয়নি। আমি শুধু সেটে আসতাম ও নৌভারি (নয় গজ শাড়ি) ও ঐতিহ্যবাহী অলঙ্কার পড়তাম। আমি এগুলোর সঙ্গে অভ্যস্ত না হওয়ার কারণে আমার কাছে এটি কঠিন মনে হয়েছিল। অবশ্য অল্পসময়ের মধ্যে নিজেকে সামলে নিতে পেরেছিলেন প্রিয়াঙ্কা। এরপর কাজের ধরনটিতে তিনি আয়ত্ত করে নিয়ে সে অনুযায়ী কাজ করেছিলেন। ছবিটিতে ঐতিহ্যবাহী সাজে দেখা যাবে প্রিয়াঙ্কাকে। আর এজন্য সাবেক বিশ্ব সুন্দরীকে পরতে হয়েছিল নৌভারি শাড়ি (মহারাষ্ট্রের নয় গজ দীর্ঘ শাড়ি)। প্রিয়াঙ্কার জন্য ৮৫টি এই রকম শাড়ি সংগ্রহ করা হয়েছিল। প্রিয়াঙ্কা চোপড়া মনে করেন বাজিরাও ও মাস্তানি চরিত্রের জন্য রণবীর সিং ও দীপিকা পাড়ুকোণের চেয়ে আর ভাল কেউ নেই। তিনি বলেন, ছবিটি বানানো হয়েছে যেসব অভিনেতা-অভিনেত্রী এতে অভিনয় করেছেন তাদেরই জন্য। ‘দেবদাস’ ছবিতে ‘ডোলা রে’ গানে মাধুরী দীক্ষিত ও ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চনকে একসঙ্গে নাচিয়ে ইতিহাস রচনা করেছিলেন পরিচালক সঞ্জয়লীলা বানসালি। এবারও ‘বাজিরাও মাস্তানি’তে একই জাদুর পুনরাবৃত্তি ঘটিয়েছেন তিনি। এই ছবিতে প্রিয়াঙ্কা ও দীপিকাকে প্রথমবার একফ্রেমে নাচিয়েছেন বানসালি ‘পিঙ্গা’ গানে, অবশ্য এ জন্য তাদের কথ্যক নাচও শিখতে হয়েছিল। এই ছবির জন্য প্রথম প্রিয়াঙ্কা চোপড়া সঙ্গে কথা বলেছিলেন পরিচালক সঞ্জয়লীলা বানসালি। আর এ তথ্য শেয়ার করেছেন প্রিয়াঙ্কা নিজেই। প্রিয়াঙ্কাই ছবির প্রথম কাস্ট। জনপ্রিয় সিরিয়াল কোয়ান্টিকোর শূটিং শুরুর আগেই এ ছবির কাজ শেষ করেছিলেন প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। কেরিয়ারে বেশিরভাগই ‘স্ট্রং ক্যারেক্টার’এ প্রিয়াঙ্কাকে দেখেছেন দর্শক। এই প্রথম একটু অন্য ধরনের চরিত্রে দেখা যাচ্ছে তাঁকে। এ প্রসঙ্গে প্রিয়াঙ্কা বলেছেন, বাজিরাওয়ের জন্য আলাদা করে আর কোন প্রচারের প্রয়োজন নেই। ছবি নিজেই নিজের কথা বলবে। শাহরুখ তার টুইটার ওয়ালে লিখেছেন, মুক্তি পাওয়া ছবি দুটোই আমাদের বন্ধুদের নির্মাণ করা। তাই কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে না। আমার আর কাজলের ছবি হাসিখুশির। আর দীপিকা-রণবীর-প্রিয়াঙ্কার ছবি শোপিসের মতো। দুটো ছবিই হিট হবে। দুই ছবির দর্শকও আলাদা হবে। পরিচালক সঞ্জয়লীলা বানসালির মতে, মোগল-ই-আজম-এর পর সবচেয়ে ব্যয়বহুল সেট তৈরি হয়েছে বাজিরাও মাস্তানিতে। ৪৫ দিন সময় নিয়ে আয়নামহল নামে ছবির একটি সেট তৈরি করেছেন সুজিত ও সালোনি। তাদের করা বিশেষ নক্সা করা ২০ হাজার আয়না ব্যবহার করেছেন ১২ হাজার ৫০০ বর্গফুটের সেটের জন্য। এই বিশাল সেটে ছিল বড় বড় ১৩টি ঝাড়বাতি। এছাড়াও ছবির পোশাক ডিজাইনার অঞ্জু মোদী এই একটি ছবির জন্য প্রায় ৩০০ পোশাক তৈরি করেছেন। ছবিটি শুরু থেকেই নানান তর্ক-বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছে মুক্তির দিনই বন্ধ হয়ে গেল বাজিরাও মাস্তানি। সিনেমা হলের বাইরে বিক্ষোভ দেখিয়ে ছবিটি বন্ধ করে দিল যুব বিজেপির সদস্যেরা। ঘটনাটি ঘটেছে পুণের একটি মাল্টিপ্লেক্সে। বিক্ষোভের জেরে মাল্টিপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ বাজিরাও মাস্তানির সমস্ত টিকেট বাতিল করতে বাধ্য হয়েছেন। বাজিরাও মাস্তানির মুক্তি নিয়ে আশঙ্কাটা অবশ্য অনে আগে থেকেই তৈরি হয়েছিল। ট্রেইলর প্রকাশের পর থেকেই মুক্তিতে স্থগিতাদেশ চেয়ে মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলাও দায়ের করেন পেশোওয়া বাজিরাও এবং মাস্তানির বংশধর (অষ্টম প্রজন্ম)। তাঁদের বক্তব্য, ছবিটির প্রচারে এবং গানগুলোতে যা দেখানো হয়েছে, যেভাবে বাজিরাও এবং মাস্তানিকে দেখানো হয়েছে, তাতে তাঁদের বংশের সম্মানহানি হয়েছে। প্রথমে এই নিয়ে বেশ চাপেই পড়েছিলেন পরিচালক সঞ্জয়লীলা বানসালি। যদিও আদালত এই মামলায় সায় দেয়নি। ছবি মুক্তিতেও কোন নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি। তবে চলচ্চিত্র বোদ্ধারা মনে করছেন, শাহরুখ ও কাজলের ‘দিলওয়ালে’ ছবিটিই বাণিজ্যিক সফলতা ও দর্শকপ্রিয়তার বিচারে এগিয়ে আছে। প্রথম দিনে বক্স অফিস থেকে ‘দিলওয়ালে’ আয় করে ২১ কোটি আর ‘বাজিরাও মাস্তানি’ আয় করে প্রায় ১৩ কোটি টাকা। এখন দেখার বিষয় শাহরুখের ‘দিলওয়ালে’র সামনে প্রিয়াঙ্কার ‘বাজিরাও মাস্তানি’ কতটা টিকে থাকতে পারে।
×