ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এশিয়া কাপের পর পরই টি২০ বিশ্বকাপ

টাইগারদের ওপর বাড়তি চাপ!

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৫

টাইগারদের ওপর বাড়তি চাপ!

মিথুন আশরাফ ॥ একটি টুর্নামেন্ট হচ্ছে, এশিয়ার বিশ্বকাপ। এশিয়া কাপ। যেটিতে এশিয়ার দলগুলোই শুধু খেলে। এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই হয়। আরেকটি টুর্নামেন্ট হচ্ছে, টি২০ বিশ্বকাপ। যেটিতে বিশ্বের শক্তিশালী দলগুলো অংশ নেয়। এ ফরমেটে বিশ্ব সেরা হওয়ার লড়াই হয়। এ দুই টুর্নামেন্ট নিয়েই এবার গ্যাঁড়াকলে পড়ে গেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশে অনুষ্ঠেয় এশিয়া কাপ শেষ হওয়ার মাত্র ২ দিন পরই যে বাংলাদেশকে ভারতে অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপের ম্যাচে খেলতে নামতে হবে। কোন টুর্নামেন্টকে গুরুত্ব দেবে বাংলাদেশ, এশিয়া কাপ না টি২০ বিশ্বকাপ; তা নিয়েই এখন সমস্যায় পড়ে গেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। প্রশ্ন জাগছে মনে? একটু খেয়াল করলেই সেই প্রশ্নের উত্তর মিলে যাবে। বাংলাদেশে টানা তৃতীয়বারের মতো আয়োজিত হবে এশিয়া কাপ। যেহেতু সামনে টি২০ বিশ্বকাপ। তাই এশিয়া কাপও টি২০ ফরমেটেই অনুষ্ঠিত হবে। এশিয়া কাপ শুরু হবে ২৪ ফেব্রুয়ারি। শেষ হবে ৬ মার্চ। ঠিক তার দুই দিন পরেই ৮ মার্চ থেকে ভারতে শুরু হয়ে যাবে টি২০ বিশ্বকাপ। বাছাইপর্বে বাংলাদেশের খেলা আছে ৯ মার্চ। সেই হিমাচল প্রদেশে, ধর্মশালায়। যদি এশিয়া কাপের ফাইনালে খেলে বাংলাদেশ, তাহলে ৬ মার্চ শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচ খেলতে হবে। সেই খেলা খেলে ৭ মার্চ ভারতের উদ্দেশে রওনা হবে দল। নিশ্চয়ই সেদিনই ধর্মশালায় দল অনুশীলন করবে না। তার মানে ৮ মার্চ শুধু একদিনের অনুশীলন করে ৯ মার্চ ধর্মশালায় খেলতে নামতে হবে! যে মাঠে কোনদিন বাংলাদেশ খেলেনি। যে প্রদেশের আবহাওয়া, পরিবেশের সঙ্গে কখনই মিশে যাওয়ার সুযোগ হয়নি। সেখানে মাত্র ১ দিনের অনুশীলন করে কিভাবে খেলবে বাংলাদেশ? বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে আগে বাছাইপর্ব খেলতে হবে। যদিও বলা হচ্ছে, প্রথম রাউন্ডে খেলবে বাংলাদেশ। কিন্তু কোন সেরা দলই যেহেতু প্রতিপক্ষ নেই, আছে আইসিসির সহযোগী সদস্যরা; তাই বাছাইপর্বই ধরা হচ্ছে এটিকে। কারণ, এ পর্বে জিতলেই যে বিশ্বের সেরা দলগুলোর সঙ্গে সেরা আটে খেলার সুযোগ করে নেবে বাংলাদেশ। ঠিক যেমন ২০১৪ সালে বাংলাদেশে হওয়া টি২০ বিশ্বকাপে হয়েছিল। ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশ কোয়ার্টার ফাইনালে খেলেছে। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের মতো কন্ডিশনে ভাল করেছে বাংলাদেশ। ২০১৫ সালটি দুর্দান্ত কাটিয়েছে। ভারতের কন্ডিশনে, উপমহাদেশের কন্ডিশনে বাংলাদেশ যে আরও ভাল করার সামর্থ্য রাখে তা সবারই জানা। কিন্তু এমন কঠিন সিডিউলে কী সেই ভালটা আসবে? যেখানে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলারই সুযোগ থাকছে না। যেখানে কোনদিন না খেলেই হুট করে খেলতে নামতে হবে। এমন করে খেলে কী সুবিধা করা যাবে? এ প্রশ্নগুলোই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে। এশিয়া কাপে বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা খেলবে। আরেকটি আইসিসির সহযোগী সদস্যও খেলবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশ আর সহযোগী দেশেরই শুধু অসুবিধা হবে। যেহেতু বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে খেলতে হবে বাংলাদেশকে এবং সহযোগী সদস্য দেশটিকে, তাই ৮ অথবা ৯ মার্চ থেকেই তাদের খেলা শুরু হবে। বাংলাদেশের খেলা যেমন ৯ মার্চ শুরু হবে, তেমনি সহযোগী দেশটির একদিন আগেই খেলতে নামতে হতে পারে। ক্রিকেট অনিশ্চয়তার খেলা। এখানে কোন দল ফাইনালে উঠে যাবে বলা যায় না। যদি সহযোগী দেশ কোনভাবে ফাইনালে উঠে যায়, আর সেই দলটি হয় আফগানিস্তান; তাহলে বিশ্বকাপে খেলাই ঝুঁকির মধ্যে পড়বে দলটির। কারণ, ৮ মার্চ নাগপুরে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ রয়েছে আফগানদের। কোন অনুশীলন ছাড়াই সহযোগী দেশটিকে বিশ্বকাপে খেলতে নামতে হবে। আর যদি ২০১২ সালের এশিয়া কাপের ফাইনালে ওঠা বাংলাদেশ দল এবারও ফাইনালে খেলে তাহলে ৭ মার্চের আগে কোনভাবেই ধর্মশালায় পৌঁছাতে পারবে না। তার মানে একদিনের অনুশীলন করেই হল্যান্ডের বিপক্ষে খেলতে নামতে হবে। যদি কোনভাবে এমন কঠিন সূচীর জন্য বাংলাদেশ হেরে যায় এবং ১১ মার্চ আয়ারল্যান্ড ও ১৩ মার্চ ওমানের বিপক্ষে ম্যাচেও এর প্রভাব পড়ে, এ দায় নেবে কে? ভাল বিপাকেই পড়ে গেছে বাংলাদেশ। সবচাইতে আশ্চর্য্য করা বিষয় হলো, এ ভাবনা আছে, কিন্তু কিছুই করার নেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি)! অক্টোবরে এশিয়া কাপ শুরু হওয়ার ও শেষ হওয়ার তারিখ নির্ধারিত হয়েছে। আর ডিসেম্বরে টি২০ বিশ্বকাপে সূচী নির্ধারিত হয়েছে। ভারত ও পাকিস্তানকে গুরুত্ব দিয়েই সূচী করা হয়েছে। আর তাতে বিপাকে পড়ে গেছে বাংলাদেশ। ভারত ও পাকিস্তানকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে এমন গ্যাঁড়াকলেই এখন পড়েছে বাংলাদেশ, সেখান থেকে বের হতে পারছে না। বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজন যেমন বললেন, ‘এশিয়া কাপে যারা অংশ নেবে তাদের মধ্যে পাকিস্তান ও ভারত হচ্ছে শক্তিশালী দেশ। এ দুই দেশের উপর নির্ভর করেই, এ দুই দলের অংশগ্রহণের উপর নির্ভর করেই এশিয়া কাপের সূচীটা হয়। ৬ মার্চ এশিয়া কাপের ফাইনাল ম্যাচ। টি২০ বিশ্বকাপে ৯ মার্চ বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ হবে। এশিয়ার দেশগুলোর সিদ্ধান্ত, আমরা যদি বিশ্বকাপের আগে এশিয়া কাপ করতে পারি, এটা হবে ভাল প্রস্তুতি। বিশেষ করে এশিয়ার দলগুলোর জন্য। এ ভেবেই এশিয়া কাপের সূচী করা হয়েছে।’ সঙ্গে এটাও জানান, ‘হিসেব হচ্ছে, যদি আমাদের দল এশিয়া কাপের ফাইনালে যায়, ৯ তারিখে আমাদের প্রথম ম্যাচ। ধর্মশালায় হবে সেটি। আমাদের কাছে তথ্য আছে যে, ধর্মশালায় কন্ডিশন আমাদের দেশের মতোই ১৫ থেকে ২০ থাকবে। কাছাকাছি থাকবে। সেই হিসেবে এশিয়া কাপে খেলে বিশ্বকাপের প্রস্তুতিটাও ভাল হবে। এছাড়া আর কোন অপশনও আমাদের কাছে নেই। আমরা ফাইনালে গেলেই কেবল ৭ মার্চ ধর্মশালার জন্য রওনা হতে হবে। আমি বলছি না কোন সমস্যা হচ্ছে না, বা হবে না। আমাদের আসলে কোন অপশন নেই।’ তাহলে কী করার? সুজন জানালেন, ‘আমরা এখন চাচ্ছি, এশিয়া কাপের আগে ধর্মশালায় গিয়ে যদি দলটাকে অনুশীলন করানো যায়। আমরা এ নিয়ে কাজও করছি। তবে পিএসএলেও কয়েকজন ক্রিকেটার খেলবে। আর যদি জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সিরিজ খেলা হয়, সেক্ষেত্রে ধর্মশালায় গিয়ে অনুশীলন করতে পারবে কি না দল, তাও দেখতে হবে। আবার এশিয়া কাপের আগে ধর্মশালায় গেলে সেটাও কতটা কার্যকর হবে সেটাও দেখার বিষয়। বাংলাদেশে ম্যাচ খেলেই বিশ্বকাপে খেলতে নামাটাকে অসুবিধা ধরছি না এমন না। তবে সত্যিই এটা একটা ইস্যু। আসলে এটা করা ছাড়া আমাদের হাতে কোন অপশন নেই।’ বোঝাই যাচ্ছে, গ্যাঁড়াকলে পড়ে গেছে বিসিবি। আর তাই গ্যাঁড়াকলে পড়েছে বাংলাদেশ দলও।
×