ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নিম্নমানের গম আর আমদানি করা যাবে না

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৫

নিম্নমানের গম আর আমদানি করা যাবে না

তপন বিশ্বাস ॥ নিম্নমানের গম আমদানির সুযোগ বাতিল করে গম আমদানি নীতিমালা সংশোধন করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মান অনুযায়ী ভাল গম আমদানি নিশ্চিত করতে শর্ত কঠিন করে গম আমদানির সংজ্ঞা বা স্পেসিফিকেশনে পরিবর্তন আনা হয়েছে। সংশোধনীত এই নীতিমালার আলোকে বুধবার প্রথম ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে ‘ফিনিক্স ইন্টারন্যাশানাল’ কোম্পানিকে ৫০ হাজার টন গম আমদানির অনুমোদন দিয়েছে ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। আগের নীতিমালা অনুযায়ী অপেক্ষাকৃত কম মানের গম আনার সুযোগ ছিল আমদানিকারকদের। সংজ্ঞা পরিবর্তনের মধ্যে আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমেই নিম্নমানের গম আমদানি আর কোন সুযোগ নেই। এতে এখন থেকে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে এক নম্বর গম বাংলাদেশে আমদানি করা হবে। এ প্রসঙ্গে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা গম আমদানি নীতিমালা সংশোধন করেছি। এখন থেকে প্রোটিনের আদর্শমান ১২.৫ নিচে কোন গম আমদানির সুযোগ থাকল না। তিনি বলেন, গত ৪৪ বছর ধরে ১০ মাত্রার প্রোটিনের গম আমদানি করা হতো। এখন নীতিমালা সংশোধন করে মান নির্ধারিত করা হয়েছে। এতে এখন থেকে দেশে ‘এ’ ক্যাটাগরির গম আমদানি করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গম আমদানির দুর্বল সংজ্ঞা বা স্পেসিফিকেশনের কারণে এতদিন নিম্নমানের গম আমদানির সুযোগ নিয়েছেন আমদানিকারকরা। দুর্বল নীতিমালার সুযোগ নিয়েই ব্রাজিল থেকে দুই লাখ টন নিম্নমানের গম আমদানি করা হয়। নিম্নমানের গম আমদানি ঠেকাতে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচী (ডব্লিউএফপি) এবং বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) স্বীকৃত স্ট্যান্ডার্ড বা আদর্শমান অনুযায়ী গম আমদানির শর্ত ও স্পেসিফিকেশন পুনর্র্নির্ধারণ করা হয়েছে। সূত্র জানায়, সংশোধনের আগের নীতিমালায় অনেক ফাঁকফোকর ছিল। আমদানিকারকদের স্বার্থই বেশি রক্ষিত হতো এতে। তাই আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মান অনুযায়ী গম আমদানির জন্য আমদানি শর্তের কিছু কিছু ধারা বাতিল, নয়টি শর্ত আরও কঠিন ও কয়েকটি ধারা বাতিল করা হয়েছে। নতুন স্পেসিফিকেশন কার্যকর হওয়ায় গমের মান নিয়ে আর প্রশ্ন ওঠার সুযোগ থাকল না। নতুন স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী গম আমদানি শুরু হতে যাচ্ছে। এতে বাজারে আটাসহ গমনির্ভর খাদ্যের দাম কিছুটা বেড়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন আমদানিকারকরা। তারা বলছেন, গম আমদানির শর্ত কঠিন ও মান বাড়ানো হলে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কম দামের গম কেনার আর সুযোগ থাকবে না। বেশি দাম দিয়েই ভালমানের গম আমদানি করতে হবে। তারা বলেন, বেশি দামে ভালমানের গম আমদানি করলে দাম কিছুটা বাড়বে, এটাই স্বাভাবিক। বাংলাদেশে ডব্লিউএফপির পুষ্টি বিশেষজ্ঞ বলেন, আন্তর্জাতিক মানদ- অনুযায়ী গম বা খাদ্য আমদানি একটি স্বাভাবিক বিষয়। গম আমদানির আগের শর্তানুযায়ী গমের আপেক্ষিক ওজন ৭৫ কেজি পার হেক্টো লিটার থাকার বিধান ছিল। অর্থাৎ ১০০ লিটার সিলিন্ডারে (চোঙ্গা) গম ভর্তি করা হলে সেই গমের ওজন হবে ৭৫ কেজি। টেস্ট ওয়েট ৭২ কেজি হলেও গ্রহণ করা হয়। এরপরও আমদানিকারকরা জরিমানা দিয়ে কম ওজনের গম গছিয়ে দিতে পারে- এমন সুযোগ ছিল ওই আমদানি নীতিমালায়। সংশোধিত নীতিমালায় গমের আপেক্ষিক ওজন ৭৬ কেজি পার হেক্টো লিটার করার শর্ত রয়েছে। সর্বনিম্ন মান টেস্ট ওয়েট ৭৬ কেজির নিচে হলে গ্রহণ করা হবে না। জরিমানা দিয়ে নিম্নমানের গম গছিয়ে দেয়ার সুযোগ পুরোপুরি বাতিল করা হয়েছে। এতে বিশ্ব বাজারের এক নম্বর গমই আমদানি করা হবে। এ প্রসঙ্গে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, জরিমানা দিয়ে নিম্নমানের গম আমদানির সুযোগ আমরা বাতিল করেছি। এখন জরিমানা দিয়ে নিম্নমানের গম গছিয়ে দেয়া যাবে না। আমরা কোয়ালিটির সঙ্গে কোন আপোস করব না। তিনি বলেন, ২০১০ সালের নীতিমালায় জরিমানা দিয়ে নিম্নমানের গম আমদানির সুযোগ রাখা হয়েছিল। আমদানি করা গমে ৪ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত দানা থাকার বিষয়টি স্ট্যান্ডার্ড বা আদর্শমান হলেও ইতোপূর্বে বাংলাদেশে তা ৭ শতাংশ পর্যন্ত গ্রহণ করা হয়। জরিমানা দিয়ে এর চেয়েও খারাপ মানের গম দেয়া সম্ভব ছিল। সংশোধিত আমদানি শর্ত বা স্পেসিফিকেশনে গমে ৩ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত দানা গ্রহণ এবং সর্বোচ্চ ক্ষতিগ্রস্ত বা কালো দানার পরিমাণও ৩ শতাংশ রাখা হয়েছে। এক্ষেত্রেও জরিমানা দিয়ে বেশি পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত দানার নিম্নমানের গম আনার শর্ত বাতিল করা হয়েছে।
×