ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চট্টগ্রামে নৌবাহিনীর শীতকালীন রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজে প্রধানমন্ত্রী

আমরা পাকিস্তানের চেয়ে সকল সূচকে এগিয়ে

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৫

আমরা পাকিস্তানের চেয়ে সকল সূচকে এগিয়ে

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ আজ প্রতিটি সেক্টরে এগিয়ে যাচ্ছে। গত চার দশকে বিভিন্ন সূচকে আমরা প্রতিবেশী অনেক দেশ এমনকি ভারতকেও কোন কোন ক্ষেত্রে ছাড়িয়ে গেছি। পাকিস্তান সকল সূচকে আমাদের চেয়ে অনেক পিছিয়ে। আমাদের মাথা পিছু আয় আজ ১ হাজার ৩১৪ মার্কিন ডলার। ৫ কোটি মানুষ মধ্য আয়ের স্তরে উন্নীত হয়েছে। দারিদ্র্যের হার কমেছে। আমাদের রফতানি ও রিজার্ভ বেড়েছে। বৈদেশিক কর্মসংস্থান বেড়েছে বহুগুণে। মানুষের গড় আয়ু উন্নীত হয়েছে ৭০ বছরে। সারাবিশ্বে বাংলাদেশের উন্নয়ন ভূয়সী প্রশংসা পেয়েছে। পদ্মা সেতুর মতো বৃহত অবকাঠামোর কাজ আমরা নিজেরাই নিজেদের অর্থে শুরু করেছি। এশিয়ায় একটি উন্নত ও শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে এই বাংলাদেশ। বুধবার চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় নেভাল একাডেমিতে শীতকালীন রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপরোক্ত কথাগুলো বলেন। একই দিনে তিনি ড্রাই ডক লিমিটেডকে নৌবাহিনীর কাছে হস্তান্তর অনুষ্ঠানেও বক্তব্য রাখেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, শক্তিশালী নৌবাহিনী প্রতিষ্ঠা করা ছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন। দেশের সমুদ্র সম্পদ রক্ষায় ঐতিহাসিক ৬ দফাতেও বাংলাদেশে নৌবাহিনীর সদর দফতর স্থাপনের দাবি তুলেছিলেন বঙ্গবন্ধু। নৌবাহিনীতে কমিশন্ড হওয়া প্রবীণ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আন্তর্জাতিক আদালতে সমুদ্র সীমা সংক্রান্ত আইনী লড়াইয়ে মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে জয়ী হয়ে গভীর সমুদ্রে ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় বিপুল সম্পদের মালিকানা অর্জন করেছি। আমাদের অর্জিত এ বিশাল সামুদ্রিক এলাকায় সমুদ্র পথে বাণিজ্য পরিচালনা ছাড়াও আছে মৎস্য, তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস এবং অন্যান্য মূল্যবান সম্পদ। এ সম্পদ রক্ষা ও সমুদ্রসীমার নিরাপত্তা বিধানের পবিত্র দায়িত্ব আপনাদের ওপর। আপনারা এ দায়িত্ব পালনে সফল হবেন এ প্রত্যাশা করছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকালে নেভাল একাডেমিতে এসে পৌঁছালে তাঁকে স্বাগত জানান নৌবাহিনীর প্রধান ভাইস এ্যাডমিরাল এম ফরিদ হাবিব এবং কমান্ডার চট্টগ্রাম নৌ অঞ্চল রিয়ার এ্যাডমিরাল মোহাম্মদ আখতার হাবিব। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন শিল্পমন্ত্রী আমীর হোসেন আমু, প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি, ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, সাবেক মন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ এমপি, ফজলে করিম চৌধুরী এমপি, এমএ লতিফ এমপি, শামসুল হক চৌধুরী এমপি এবং নৌবাহিনী ও প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তারা। প্রধানমন্ত্রী সেখানে কুচকাওয়াজে নবীন অফিসারদের সালাম গ্রহণ করেন। নৌবাহিনী সূত্রে জানানো হয়, শীতকালীন এ কুচকাওয়াজের মধ্য দিয়ে নৌবাহিনীর ডাইরেক্ট এন্ট্রি অফিসার ২০১৫/বি ব্যাচের ২৪ জন এবং মিডশীপম্যান ২০১৪/এ ব্যাচের ৫৩ জনসহ মোট ৭৭ জন কর্মকর্তা কমিশন লাভ করেন। এদের মধ্যে ১ জন শ্রীলঙ্কান মিডশীপম্যান রয়েছেন। ডাইরেক্ট এন্ট্রি অফিসার ব্যাচ হতে এ্যাক্টিং সাব লে. এম রেহানুরজামান শ্রেষ্ঠ ফলাফল অর্জনকারী হিসেবে ‘শহীদ মোয়াজ্জেম পদক’ লাভ করেন। অপরদিকে, মিডশীপম্যান ব্যাচ হতে ফাহিদ উদ্দিন সাকিব সেরা চৌকস মিডশীপম্যান হওয়ার গৌরব অর্জন করে ‘সোড অব অনার’ লাভ করেন। এছাড়া পেশাগত ও শিক্ষাগত বিষয়ে সর্বোচ্চ মান অর্জনকারী হিসেবে মিডশীপম্যান জাহিদ মোহসীন কবির ‘বীর শ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্বর্ণপদক’ এবং মিডশীপম্যান এম রিয়াজুল ইসলাম ‘নৌপ্রধান স্বর্ণপদক’ লাভ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বক্তব্যে বিশেষভাবে উল্লেখ করেন তিনজন মহিলা ডাইরেক্ট এন্ট্রি অফিসার এবং ৬ জন মহিলা মিডশীপম্যান অফিসারের কথা। তাদের প্রতি আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, আমি আশা করি তাদের এ সাফল্য দেশ প্রতিরক্ষায় নারীদের অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করবে। নৌবাহিনীর উন্নয়নে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ উল্লেখ করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি ত্রিমাতৃক নৌবাহিনী গড়ে তুলতে আমরা নৌবাহিনীতে মেরিটাইম হেলিকপ্টার ও মেরিটাইম পেট্রোল এয়ারক্রাফট সংযোজন করি। নেভাল এভিয়েশন ও বিশেষ বাহিনী ‘সোয়াডস’ গঠনের পাশাপাশি নৌবাহিনীতে সংযোজন হয়েছে দুটি মিসাইল ফ্রিগেড, যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি একটি ফ্রিগেড, দুটি মিসাইল করভেট ও খুলনা শিপইয়ার্ডে তৈরি ৫টি পেট্রোল ক্রাফট। এতে নৌবাহিনীর সক্ষমতা ও সামর্থ্য বহুগুণ বেড়েছে। এছাড়া গণচীনে নির্মাণাধীন দুটি করভেট ‘প্রত্যয়’ ও ‘স্বাধীনতা’ এবং যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি একটি ফ্রিগেড ‘সমুদ্র অভিযান’ আগামী মাসে কমিশনের পর নৌবাহিনীতে সংযোজিত হবে। সর্বশেষে দুটি সাবমেরিন সংযোজনের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছে, যা আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ে নৌবাহিনীতে যুক্ত হবে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে ত্রিমাতৃক বাহিনীতে পরিণত করার যে স্বপ্ন জাতির পিতা দেখেছিলেন তা পূর্ণ হবে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এই একাডেমিতে অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স নির্মাণের কাজ চলছে। মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী নৌ-কমান্ডোদের অবদানকে সমুন্নত রাখতে আমরা কর্ণফুলী নদীর মোহনায় জাদুঘর ‘বিজয় তরঙ্গ’ স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছি। শীঘ্রই এর কাজ শুরু হবে। তিনি দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হওয়ার জন্য নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ও নাবিকদের প্রতি আহ্বান জানান। ড্রাই ডকের ব্যবস্থাপনা হস্তান্তর ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এদিন শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল কর্পোরেশনের প্রতিষ্ঠান ড্রাই ডক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা আনুষ্ঠানিকভাবে নৌবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করেন। এ উপলক্ষে ড্রাই ডকে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, এর আগে খুলনা শীপইয়ার্ড ও নারায়ণগঞ্জ ডক ইয়ার্ডের ব্যবস্থাপনা হস্তান্তরিত হওয়ায় সরকারী এ দুটি প্রতিষ্ঠান লোকসান কাটিয়ে লাভের মুখ দেখেছে। নৌবাহিনীর কাছে হস্তান্তরের পর ড্রাই ডক আরও উন্নত হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আমরা শুধু নিজেদের জন্যই তৈরি করব না, জাহাজ ও বিভিন্ন সামগ্রি নির্মাণ করে আমরা বিদেশেও রফতানি করতে পারি। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত এ প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা হস্তান্তরিত হলেও এখানে বর্তমানে যারা চাকরিরত রয়েছেন তারা সেভাবেই থাকবেন। তাদের সুযোগ-সুবিধা কমবে না বরং আরও বাড়বে। চিটাগাং ড্রাই ডক লিমিটেডকে একটি সর্বাধুনিক ও কার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে বাংলাদেশ নৌবাহিনী তার সফলতার সাক্ষর রাখবে বলে প্রধানমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেন। ড্রাই ডক লিমিটেড হস্তান্তর অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেনÑ শিল্পমন্ত্রী আমীর হোসেন আমু, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর প্রধান ভাইস এ্যাডমিরাল এম ফরিদ হাবিব ও শিল্প সচিব মোশারফ হোসেন ভুঁইয়া। বক্তব্যে তাঁরা ড্রাই ডকের যাত্রা শুরু প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে জানান, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশ গড়ার পাশাপাশি বন্ধ থাকা চিটাগং ড্রাই ডককে পুনর্জীবিত করার কাজ হাতে নেন। তাঁরই ঐকান্তিক ইচ্ছায় বন্ধুপ্রতীম দেশ যুগোস্লাভিয়ার সহায়তায় ড্রাই ডক প্রকল্পটি চালুর কাজ শুরু হয়। ড্রাই ডকে এ পর্যন্ত ৭১৪টি ছোট বড় জাহাজ মেরামতের কাজ হয়েছে। এছাড়া শিল্প কারখানার মেশিন, সেতু, ধাতব স্থাপনাসমূহ এখানে মেরামত করা হয়। রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ এ স্থাপনার আরও উন্নয়নের জন্য এর ব্যবস্থাপনা নৌবাহিনীর কাছে হস্তান্তরিত হলো।
×