ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অবসর নিচ্ছেন ম্যাককুলাম

প্রকাশিত: ০৬:১০, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৫

অবসর নিচ্ছেন ম্যাককুলাম

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ খুব শীঘ্রই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানাবেন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক ব্রেন্ডন ম্যাককুলাম। আগামী ২০১৬Ñএর ফেব্রুয়ারি মাসে ব্যাট বল তুলে রাখবেন বলে সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন তিনি। বয়স ৩৪। ব্যাট হাতে ছিলেন দুর্দান্ত ছন্দে। সেখানে হুট করে বিদায়ের এ সিদ্ধান্ত আশ্চর্যের বৈকী। যেখানে চল্লিশোর্ধ বয়সে এখনও সাদা পোশাকের টেস্টে চালিয়ে যাচ্ছেন পাকিস্তান অধিনায়ক মিসবাহ-উল হক। তবে বাস্তববাদী ম্যাককুলামের বিশ্বাস একটা সময় থামতেই হতো। সম্মানের সঙ্গে বিদায় নিতে চান বলেই এমন ভাবনা। এতে নিজে যেমন পরিবারকে আরও বেশ করে সময় দিতে পারবেন, তেমনি প্রতিভাবান নতুন ক্রিকেটার নিউজিল্যান্ড দলে সুযোগ পাবে। নেতৃত্বে ধারালো হয়ে উঠবেন তুখোড় কেন উইলিয়ামসন। এই তো ক’দিন আগে টানা টেস্ট খেলে ভেঙ্গেছেন এবি ডি ভিলিয়ার্সের রেকর্ড। ইতিহাসের মাত্র দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে ১শ’ ছক্কা হাঁকিয়ে নাম লিখিয়েছেন এ্যাডাম গিলক্রিস্টের পাশে। শ্রীলঙ্কাকে ‘হোয়াইটওয়াশ’ করা হ্যামিল্টনে অধিনায়ক হিসেবে পেয়েছেন ১১তম টেস্ট জয়ের স্বাদ। সব মিলিয়ে বৃহস্পতিটা তুঙ্গেই ছিল। তবে হঠাৎ কেন থেমে যাওয়ার এই ভাবনাÑ এমন প্রশ্নে ম্যাককুলামের জবাব, ‘সব কিছুরই একটা শেষ আছে, সেটা যত ভালই হোক!’ আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে ঘরের মাটিতে দুই ম্যাচ সিরিজের টেস্ট সিরিজ খেলবে নিউজিল্যন্ড। ওয়েলিংটনের বেসিন রিজার্ভে প্রথম টেস্ট। আর ক্রাইস্টচার্চে সিরিজের দ্বিতীয় ও নিজের ১০১তম টেস্ট খেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ‘অতীত’ হয়ে যাবেন আধুনিক নিউজিল্যান্ডের অন্যতম সফল এই মারকুটে ব্যাটসম্যান। ডুনেডিনে জন্ম হলেও ম্যাককুলামের বেড়ে ওঠা ক্রাইস্টচার্চে, ক্রিকেটার ম্যাকের পূর্ণতা এখানেই। নিজের প্রিয় সেই শহরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর এই উপলক্ষ তাকে এখন থেকেই রোমাঞ্চিত করতে শুরু করেছে। ‘নিউজিল্যান্ডের মাঠ ও দর্শকের সামনে ক্যারিয়ার শেষ করার মধ্যে একটা আবেগ জড়িয়ে আছে। ওয়েলিংটনের বেসিন রিজার্ভ যে কোন খেলোয়াড়ের কাছে বিশেষ কিছু। আর ক্রাইস্টচার্চ তো আমার নিজের শহর। দুটি মাঠের সঙ্গেই অনেক আবেগ জড়িয়ে। সত্যি বলতে, অবসর ভাবনায় আমি মূলত এই দিকটাতেই নজর দিচ্ছিলাম।’ কেবল কি ঘরের মাঠ, আর কিছু নয়? এই প্রশ্নের উত্তরে বাস্তবের মানুষ ম্যাককুলাম, ‘যার শুরু আছে তার শেষও আছে। আমাদের ক্রিকেটের জন্য সময়টা খুবই ভাল। এই সময় বিদায়ে তৃপ্তি রয়েছে। গত কয়েক মৌসুম আমরা অসাধারণ ক্রিকেট খেলছি। এরপর পরিবার-সন্তানদের আরও সময় দিতে পারব।’ ফেব্রুয়ারি আসতে এখনও বেশ কিছুদিন বাকি। চাইলে ঘোষণাটা পরেও দিতে পারতেন। কিন্তু তাতে বিভ্রান্তি তৈরি হতো। ভক্তরা তাকে টি২০ বিশ্বকাপে দেখতে মুখিয়ে থাকতেন। ফেব্রুয়ারিতে সরে যাওয়ায় সেটি আর হচ্ছে না। মার্চে ভারতে টি২০ বিশ্বকাপ। তাই আগে ভাগেই সব পরিষ্কার করেন ম্যাককুলাম। এ নিয়ে কোনরকম বিভ্রান্তি রাখতে চাননি, ‘খুব শীঘ্রই হয়ত টি২০ বিশ্বকাপের দল ঘোষণা হবে। সেখানে আমার নাম না দেখলে সবার মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতো, তাই সিদ্ধান্তটা আগেই জানিয়ে রাখলাম। আমি ঝামেলা এড়িয়ে পরিষ্কার একটা বিদায় নিতে চাই।’ তাহলে কি খেলাটা আর টানছে নাÑ মোটেই তা নয়। ম্যাককুলাম আরও বলেন, ‘নিউজিল্যান্ডের হয়ে খেলার সুযোগ পাওয়ায় আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি। এটা আমি দারুণভাবে উপভোগ করি। ব্ল্যাক-ক্যাপসদের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করাটাও বিশেষ কিছু। এ জন্য আমি খুবই গর্বিত। সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।’ দেশের হয়ে খেলার সময় এক ঝাঁক তুখোড় ক্রিকেটার পেয়ে ধন্য বলেও জানিয়েছেন তিনি। ম্যাককুলাম বলেন, ‘গত কয়েক মৌসুমে অধিনায়ক হিসেবে আমি এক ঝাঁক তুখোড় খেলোয়াড় পেয়েছি। যাদের সঙ্গটা খুবই উপভোগ্য। ছিল ট্রেন্ট বোল্ট, টিম সাউদি, ড্যানিয়েল ভেট্টরি। ব্যাট হাতে কেন উইলিয়ামসন-কোরি এ্যান্ডারসন আর রস টেইলরের কথা আলাদা করে বলতে হয়। ফলও এসেছে। একাধিক বড় দলের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ জিতেছি। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনলে উঠেছি, যদিও একটুর জন্য শিরোপা ছোঁয়া হয়নি। আমাদের হাতে অনেক প্রতিভা রয়েছে, যাদের নিয়ে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট আরও সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। একদিন বিশ্বকাপ জিতবে। উইলিয়ামসনের মধ্যে নেতৃত্বগুণ রয়েছে। ও তুখোর ব্যাটসম্যানও। আশা করছি টি২০ বিশ্বকাপে সাফল্য দিয়ে সে তার মিশনটা শুরু করতে পারবে। সব মিলিয়ে কিউই ক্রিকেটের জন্য এটা দারুণ সময়। বিদায়ের জন্য আমি তাই এই সময়টাকেই বেছে নিয়েছি।’ বর্ণাঢ্য এক ক্যারিয়ার সঙ্গী করেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানাতে যাচ্ছেন ম্যাককুলাম। নিউজিল্যান্ডের হয়ে টেস্টে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড (৩০২) তারই দখলে। ২০০৪ সালে অভিষেকের পর খেলেছেন টানা ৯৯ টেস্টÑ ঐতিহ্যের সাদা পোশাকে যা একটি নতুন রেকর্ড। ১১ সেঞ্চুরিসহ করেছেন ৬২৭৩ রান। উইন্ডিজের বিপক্ষে ইতিহাসের মাত্র দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ১শ’ ছক্কা হাঁকানোর রেকর্ড গড়েন তিনি। ম্যাককুলাম ওয়ানডে খেলেছেন ২৫৪। ৫ সেঞ্চুরিতে করেছেন ৫৯০৯ রান। বিশ্বের একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে টি২০তে দুটি সেঞ্চুরির বিরল রেকর্ডও তার দখলে। যেখানে ৭১ ম্যাচে করেছেন ২১৪০ রান।
×