ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জলঢাকায় ছন্দে ছন্দে প্রচার ॥ সৈয়দপুরে উর্দু ভাষায়

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৫

জলঢাকায় ছন্দে ছন্দে প্রচার ॥ সৈয়দপুরে উর্দু ভাষায়

তাহমিন হক ববি, নীলফামারী ॥ জন্ম থেকেই অন্ধ। তবে শ্রবণ ও গুছিয়ে বলার অসাধারণ ক্ষমতা আছে। কে কি বলছে তা তাৎক্ষণিক হুবহু বলে দিতে পারেন। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মমিনুর রহমান পেশায় ভিক্ষুক। পৌর নির্বাচন ঘিরে লেখাপড়া না জানা এই অন্ধ ভিক্ষুক এবার ভোটের মাইকিংয়ের দিনমজুরির কাজে নেমেছেন! মমিনুর রহমান এক মেয়র প্রার্থীর মাইক হাতে প্রচারে ছন্দময় কণ্ঠে বক্তব্য রাখছেন। মমিনুর এখন আর ভিক্ষার কথা ভাবছেন না। প্রতিদিন দুপুর দুইটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত প্রচারযন্ত্র হাতে চষে বেড়াচ্ছেন। মমিনুর রহমান বললেন তিনি জন্মান্ধ। জলঢাকা শহরের বাসস্ট্যান্ডে তিনি ভিক্ষা করেন। নির্বাচন এলে মাইকিং করেন। প্রতিদিন ভোটের মাইকিং শেষে হাতে দিনমজুরির অর্থ হিসাবে বুঝে পান তিনশ টাকা। পরিবারে স্ত্রী, দুই ছেলে ও তিন মেয়ে রয়েছে। এর মধ্যে বড় মেয়ে পঞ্চম শ্রেণী, এক ছেলে তৃতীয় শ্রেণী এবং আরেক মেয়ে দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ে। অপর এক মেয়ে এবং এক ছেলে স্কুলে পাঠানোর বয়স হয়নি। পরিবারের একমাত্র উর্পাজনক্ষ ব্যক্তি তিনি। ভিক্ষাবৃত্তির পেশাটি তার কাছে অপছন্দের কিন্তু অন্ধ বলে নিরুপায় হয়ে তাকে ভিক্ষা করতে হয়। কেউ যদি কোন ভাল কাজ তাকে দিতে পারে তাহলে সে ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে দিবে। চোখে দেখেন না এবং লেখাপড়াও জানেন না তাহলে কিভাবে ভোটের প্রচার মাইকিং করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে জন্মান্ধ মমিনুর রহমান বললেন একবার কিছু শুনলে মনে থাকে। মাইকিং করার আগে প্রার্থী বা প্রার্থীর লোকদের কাছে ভালভাবে শুনে নেই কি কি বলতে হবে। ইজিবাইকের চালক বাবুল হোসেন বলেন, যে দিন থেকে ভোটের প্রচার শুরু হয়েছে সেদিন থেকে মমিনুর কে নিয়ে রয়েছি। তিনি সুন্দরভাবে গুছিয়ে এবং ছন্দ মিলিয়ে ভোট প্রার্থনা করতে পারেন। এলাকার ভোটার হাফিজুর রহমান, আমিনা খাতুন, রইছুল আলমসহ অনেকে বলেন, ভোটের সময়ে বিভিন্ন মাইকের শব্দে কান ঝালাপালা হয়। অনেকের কণ্ঠ শুনতে ইচ্ছা করেনা, কিন্তু মমিনুরের মাইকিং শুনে কখনও বিরক্তি আসে না। বরং তার প্রচার নয় তাকে একনজর দেখতে আমরা ছুটে যাই। সৈয়দপুরে উর্দুতে মাইকিং ॥ নীলফামারীর সৈয়দপুর পৌরসভার নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শহরে ভোট প্রার্থনায় বাংলার পাশাপাশি উর্দু ভাষায় মাইকিং করা হচ্ছে। প্রতিদিন দুপুর ২টার পর থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলছে এই মাইকিং। এতে প্রার্থীদের পক্ষে ভোট প্রার্থনাসহ বিভিন্ন ধরনের সেøাগান দেয়া হচ্ছে। মূলত শহরে বসবাসকারী সংখ্যাগরিষ্ঠ উর্দুভাষী ভোটারদের আকৃষ্ট করতেই এখানে উর্দু ভাষায় মাইকিং করা হচ্ছে। তবে এ ঘটনায় মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। প্রথম শ্রেণীর সৈয়দপুর পৌরসভায় ১৫টি ওয়ার্ডে ৮১ হাজার ৩৬৫ জন ভোটার রয়েছে। যার অর্ধেকই অবাঙালী অর্থাৎ উর্দুভাষী। এখানে মেয়র ও কাউন্সিলার ও সংরক্ষিত নারী আসনের প্রার্থী সকলেই বাংলার পাশাপাশি উর্দুভাষায় মাইকিং করছেন। এ বিষয়ে কয়েকজন প্রার্থী জানান, মূলত উর্দুভাষীদের কাছে ভোটপ্রার্থনা করতেই উর্দুতে মাইকিংয়ের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এতে করে উর্দুভাষীরা সহজে বুঝতে পারছেন কোন প্রার্থীর কি নাম, কোন প্রতীক।
×