ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অর্থনীতিতে উদারীকরণে ব্যাপক সাফল্য এসেছে ॥ বিরূপাক্ষ পাল

বিনিয়োগ বাড়াতে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় প্রয়োজন

প্রকাশিত: ০৫:০৬, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৫

বিনিয়োগ বাড়াতে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় প্রয়োজন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে বিশ্ববাজারের সঙ্গে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় প্রয়োজন মন্তব্য করে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. বিরূপাক্ষ পাল বলেছেন, অর্থনীতিতে উদারীকরণের ফলে বাংলাদেশে ব্যাপক সাফল্য এসেছে। বর্তমানে দেশে মুদ্রাস্ফীতি ৬ শতাংশ। তবে পেট্রোলের দাম কমালে তা ৫ শতাংশে নেমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। মুদ্রাস্ফীতি কমার ফলে লেন্ডিং রেট হ্রাস পাবে। ফলে দেশের বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে। মঙ্গলবার রাজধানীর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব এ্যাডমিনিস্ট্রেশন এ্যান্ড ম্যানেজমেন্টের (বিয়াম) অডিটরিয়ামে বিনিয়োগ বোর্ড আয়োজিত ‘স্টেট অব ইকোনমি’ শীষর্ক এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। মূল প্রবন্ধ পাঠকালে বিরুপাক্ষ পাল বলেন, বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে দেশের অবকাঠামোর উন্নয়ন করতে হবে। এক্ষেত্রে ঢাকা ও চট্টগ্রামকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম নগরকে বিশেষ প্রাধান্য দেয়া হলে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ২ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া সঞ্চয়পত্রে সুদের হার হ্রাস, কর জিডিপি অনুপাত বৃদ্ধি করতে হবে। তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতিতে বর্তমানে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি বিরাজ করছে। একই সঙ্গে মুদ্রাস্ফীতিতেও সাম্যাবস্থা রয়েছে। দেশে মানুষের আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি পেয়ে ৭১ বছরে উন্নীত হয়েছে, দারিদ্র্য হ্রাস পেয়ে ২৪ ভাগে নেমে এসেছে। বর্তমানে এশিয়া অঞ্চলের যে কোন দেশের চেয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা অনেক ভাল। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৭ শতাংশের মধ্যে রয়েছে। মোট দেশজ উৎপাদন ২০০ বিলিয়ন ডলার, মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৩১৪ ডলার। এছাড়া বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের মাধ্যমে ৬ থেকে ৭ মাসের আমদানি ব্যয় নির্বাহ করার ক্ষমতা রয়েছে বাংলাদেশের। ভারত ঠিক সেই পরিমাণ রিজার্ভ রাখে যা দিয়ে তারা ৯ থেকে ১০ মাসের আমদানি ব্যয় নির্বাহের ক্ষমতা রাখে। চীনের এই ক্ষমতা আরও বেশি। আমাদের রিজার্ভ এতটা বৃদ্ধি সম্ভব না হলেও ৮ থেকে ৯ মাসের ব্যায় নির্বাহের ক্ষমতা হলে তখন তা নিয়ে ভাবা যাবে। এ সময় পুঁজি বাজারের ওপর বিশেষ নজর দেয়ার আহ্বান জানিয়ে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার ক্ষেত্রে পুঁজিবাজার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে এর জন্য ব্যাপক গবেষণা প্রয়োজন। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর অর্থনীতিতে তাদের পুঁজিবাজার ব্যাপক ভূমিকা রাখলেও বাংলাদেশের পুঁজিবাজার এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কোন ভূমিকা রাখতে পারেনি। এ খাতের মূল ঘাটতিগুলো জানার জন্য ব্যাপক গবেষণা প্রয়োজন। সুষ্ঠু গবেষণার পর উদ্ভুত সমস্যার সমাধান হলে পুঁজিবাজার অর্থনীতি চাঙ্গা করতে ভূমিকা রাখবে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর বিদুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ক্লাসের গড় ছাত্রের চেয়ে ভাল করছে। তবে দেশের উন্নয়নে মেধা শক্তি আরও বাড়াতে হবে। দেশের এই ভাল করার মূল কারণ নেতৃত্বগুণ। শেখ হাসিনা তার নতুন নতুন ধারণা প্রয়োগ করছেন। কৃষকের জন্য ১০ টাকায় ব্যাংক হিসাব খোলা, ডিজিটাল বাংলাদেশসহ নানা উদ্যোগ তার সফল নেতৃত্বের কারণেই সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, মাত্র ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত থেকে তা ১২ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। তখনকার যে কোন অর্থনীতিবিদ ও নীতি নির্ধারকরা তা কল্পনাও করতে পারেননি। তারা এও কল্পনা করতে পারেননি যে, কেবল জ্বালানি খাতেই ৮ থেকে ৯ বিলিয়ন ডলার বিনোয়োগ হতে পারে। মূল প্রবন্ধ পাঠকালে ড. বিরুপাক্ষ পাল জ্বালানি তেলের দাম হ্রাস করার তাগিদ জানালেও তা নাকচ করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা বলেন, তেলের দাম কমলে বিনোয়োগ বৃদ্ধি পাবে এর যথাযথ কোন প্রমাণ প্রবন্ধে উল্লেখ নেই। তেলের দাম বৃদ্ধি পেলে বাস ভাড়া বাড়ে, তবে দাম কমলে ভাড়া হ্রাস পাবে কিনা এমন কোন সম্ভাবনা নেই। এছাড়া বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন ২৪ হাজার কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে। সাম্যাবস্থা অর্জন এখন আমাদের মূল লক্ষ্য। তবে দীর্ঘমেয়াদে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য অব্যাহতভাবে হ্রাস পেলে তখন তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। ওই অনুষ্ঠানে বিনিয়োগ বোর্ডের এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান এম. এ. সামাদের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সাবেক শিক্ষা সচিব মোকাম্মেল হক।
×