ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ত্বক সুরক্ষায় সানস্ক্রিন

প্রকাশিত: ১৬:৫৭, ২২ ডিসেম্বর ২০১৫

ত্বক সুরক্ষায় সানস্ক্রিন

একটা সময় ছিল যখন সানক্রিন বলতে কি বোঝায় তাই জানত না। কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে সানক্রিনের গুরুত্বও মানুষের কাছে বিকশিত হয়ে উঠেছে। ত্বকের যৌবন ধরে রাখতে রূপবিজ্ঞানীদের কাছে সানক্রিনের আবিষ্কার নিঃসন্দেহে একটি দুর্লভ বিজয়। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি যে মানব ত্বকের ব্যাপক ক্ষতি করে তা এক সময় মানুষ জানতই না। কিন্তু বিজ্ঞান আর জ্ঞানের উত্তরণের সঙ্গে সঙ্গে আজ একেবারেই পরিষ্কার হয়ে গেছে যে ত্বককে মোহনীয়, উজ্জ্বল আর কোমনীয় করে রাখতে এর চেয়ে উত্তম কোন আবিষ্কার বোধ হয় আর নেই। আরও সহজ করে বললে বলতে হয়, সূর্যরশ্মি ত্বকের যে দারুণ ক্ষতি করে তা থেকে ত্বককে বাঁচাতে সানস্ক্রিনই হলো এক বিশাল অস্ত্র। একজন ক্রিকেটার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রকট আর তীব্র রৌদ্রের মধ্যে দাঁড়িয়ে ক্রিকেট খেলেও যে তার ত্বককে রক্ষা করতে সক্ষম তা শুধু ঐ সানস্ক্রিনের গুণাবলীর কারণে সম্ভব হয়েছে এবং এটাও আমাদের জেনে রাখা প্রয়োজন। অনেকেই মনে করেন যে, সানক্রিন শুধুমাত্র প্রখর গ্রীষ্মের দিনেই ব্যবহার করতে হয়, কথাটি মোটেই সঠিক নয়। ত্বককে উজ্জ্বল, কোমল, সুন্দর আর মোহনীয় করে রাখতে শীত-গ্রীষ্মসহ সব ঋতুতেই সানক্রিন ব্যবহার করতে হয়। সানস্ক্রিন ক্রিমের মধ্যে থাকে সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর। এই প্রটেকশন ফ্যাক্টর আবার বিভিন্ন (ঝঃৎবহমঃয) অনুপাতের হয়ে থাকে যার মাত্রা ১৫, ৩০, ৪৫ ও ৬০ পর্যন্ত হয়ে থাকে। আমাদের বাদামি রংয়ের ত্বকের ক্ষেত্রে সান প্রটেকশন ফ্যাক্টর (ঝ.চ.ঋ) ৩০ থাকলেই যথেষ্ট। তবে প্রটেকশন ফ্যাক্টর ১৫-এর নিচে কোনভাবেই না হওয়া উচিত। কারণ এর নিচে হলে আমাদের ত্বকের সুরক্ষায় তেমনি দীর্ঘস্থায়ী ভূমিকা রাখতে সক্ষম নাও হতে পারে। আমাদের ত্বকের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে ‘বি’ অতিবেগুনি রশ্মি আর এই সানস্ক্রিন সেই ‘বি’ অতিবেগুনি রশ্মিকেই প্রতিহত করে। সান প্রটেকশন ফ্যাক্টর বা ঝ.চ.ঋ বলতে কি বোঝায় সেটা বোধ হয় একটু বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। মনে করুন আপনি রোদে দাঁড়িয়েছেন। যদি এমন হয় যে আপনি দশ মিনিট দাঁড়ালেই ত্বক পুড়ে যাওয়ার অবস্থা হয়। তাহলে আপনি যদি ঝ.চ.ঋ-১৫ সানস্ক্রিনটি ব্যবহার করেন সেক্ষেত্রে আপনি ১০ী১৫ = ১৫০ মিনিট অনায়াসেই রোদে থাকতে পারবেন। অর্থাৎ এই ১৫০ মিনিট পর্যন্ত সূর্যরশ্মি আপনার ত্বকের ক্ষতি করতে পারবে না। আবার যদি এমন হয় যে আপনি রোদে ২০ মিনিট কাটানোর ফলে আপনার ত্বকে লালছে ভাব ফুটে ওঠে তাহলে যে সানস্ক্রিনের ঝ.চ.ঋ-১৫ তা দিয়ে আপনি আপনার ত্বককে ২০ী১৫ = অর্থাৎ ৩০০ মিনিট ত্বককে রক্ষা করতে পারবেন। মনে রাখতে হবে ত্বকের রং যত সাদা হবে ত্বকও তত বেশি নাজুক হবে। এই নাজুক ত্বকের ক্ষেত্রে এসপিএফ (ঝ.চ.ঋ)-১৫ ই হলো উৎকৃষ্টমানের সানস্ক্রিন। এর মাধ্যমেই তিনি ৯৫ শতাংশ অতিবেগুনি রশ্মি ‘বি’ প্রতিহত করতে সক্ষম হবেন। ত্বক যত কালো হবে সেই ত্বকের নাজুক অবস্থাও তত কম হবে। তাই সাদা ত্বক মানেই ভাল ত্বক কথাটি মোটেই প্রযোজ্য নয়। মনে রাখবেন ত্বক যতই সাদা হবে তত বেশি তার সূর্যরশ্মি প্রতিহত করার ক্ষমতাও কম হবে আর সেই জন্যই সূর্যরশ্মির প্রভাবে যে সমস্ত রোগ যেমন ত্বকের ক্যান্সার, তা কিন্তু ঐ সাদা বর্ণের লোকদের ত্বকেই বেশি হয়। যাদের ত্বক কালো তাদের ক্ষেত্রে ঝ.চ.ঋ আট থেকে ১৫ পর্যন্ত হলেই চলে। এখানে বলে নেয়া ভাল যে মেলানিন নামক একটি রঞ্জক পদার্থ যা কিনা কালো বর্ণের লোকদের ত্বকে থাকে, সেটাই প্রাকৃতিক সানস্ক্রিন হিসাবে তার ত্বককে অনেকখানি প্রতিহত করতে সক্ষম। তবে কালো ত্বকে সানস্ক্রিন ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই তাও কিন্তু মোটেই ঠিক নয়। ত্বকের রং যেমনই হোক না কেন, ত্বককে ভাল রাখতে হলে সানস্ক্রিন ব্যবহার করতেই হতো। বিজ্ঞানীদের মতে, সান প্রটেকশন ফ্যাক্টর (ঝ.চ.ঋ) ৩০ এর বেশি ব্যবহার করার উপযুক্ত কোন কারণ নেই। এই ঝ.চ.ঋ ৩০ দিয়েই সূর্যের অতিবেগুনিরশ্মি ‘বি’-এর ৯৭ শতাংশই প্রতিহত করা সম্ভব। সানস্ক্রিন কোথায় মাখবেন, কেমন করে মাখবেন সেটাও জানা প্রয়োজন। এক কথায় যে ত্বক সূর্যালোকে উন্মুক্ত, সেখানেই সানস্ক্রিন মাখতে হবে এবং বেশ গাঢ় করে তা মাখতে হবে। লক্ষ্য করলে দেখবেন ক্রিকেটাররা যখন মাঠে নামে তখন এত গাঢ় সানস্ক্রিন মাখে যে তা টিভির পর্দায় পর্যন্ত ফুটে ওঠে। আর একটি কথা শুধু গ্রীষ্মেই নয় শীতেও সানস্ক্রিন মাখতে হবে কথাটি যেন আমরা ভুলে না যাই। আর মনে রাখতে হবে যে এতে যে সমস্ত উপাদান রয়েছে তা কিন্তু কোন কোন ত্বকে এলার্জিজনিত উপসর্গ। যেমনÑজ্বালাপোড়া ভাব, কিংবা চুলকানি নিয়েও দেখা দিতে পারে। ওষুধ খেতে যেমন কতটুকু খাবেন তা জানতে হয় এক্ষেত্রে, জানা প্রয়োজন যে কতটুকু সানস্ক্রিন আপনি মাখবেন? স্বাভাবিকভাবে ধরা হয় শুধুমাত্র মুখম-লে মাখলে কেবলমাত্র এক চামচ সানস্ক্রিনই যথেষ্ট। কিন্তু যদি শরীরেও মাখতে চান তাহলে আরও আনুমানিক দু’চামচ নিয়ে মেখে দিলেই যথেষ্ট বলে বিবেচিত হয়। আপনার নিশ্চয়ই জানতে ইচ্ছা হতে পারে যে, এটা কোথায় পাওয়া যাবে? মনে রাখবেন এটা এখন আর দুষ্প্রাপ্য বস্তু কিছু নয়। আপনার আশপাশে ওষুধের দোকানে কিংবা প্রসাধনী বিক্রি করে এমন যে কোন দোকানেই আপনি নিঃসন্দেহে এটা পেতে পারেন। ডাঃ দিদারুল আহসান এমবিবিএস ডিডিভি (অস্ট্রিয়া) ফেলো. আরএসএইচ (লন্ডন) চর্ম-এলার্জি ও যৌনরোগ বিশেষজ্ঞ
×