ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আট বছর নিষিদ্ধ ব্লাটার ও প্লাতিনি

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ২২ ডিসেম্বর ২০১৫

আট বছর নিষিদ্ধ ব্লাটার ও প্লাতিনি

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ অনুমিতই ছিল নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছেন ফুটবলবিশ্বের দুই ক্ষমতাধর সংগঠক সেপ ব্লাটার ও মিশেল প্লাতিনি। অবশেষে সেটাই হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সোমবার ফিফা সভাপতি ব্লাটার ও উয়েফা সভাপতি প্লাতিনিকে ফুটবলের সব ধরনের কর্মকা- থেকে আট বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত শেষে বিশ্ব ফুটবলের সদর দফতর সুইজারল্যান্ডের জুরিখ থেকে ফিফার এথিকস কমিটি এই রায় দিয়েছে। আট বছর নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি দু’জনকে জরিমানাও গুনতে হবে। ব্লাটারকে জরিমানা ৪০ হাজার ডলার ও প্লাতিনির ৮০ হাজার ডলার দিতে হবে। এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ক্রীড়া আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার কথা জানিয়েছে দু’জনই। ব্লাটার বলেছেন, তাকে নিয়ে খেলা হয়েছে। তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে ফিফার এথিকস কমিটি। নিষিদ্ধ হওয়ায় ফুটবলের সঙ্গে সব ধরনের সংশ্লিষ্টতা হারাচ্ছেন ব্লাটার ও প্লাতিনি। বহিষ্কারাদেশ বহাল থাকলে দু’জনেরই ফুটবল ক্যারিয়ার এক প্রকার শেষ বলা যায়। নিষিদ্ধ হওয়ায় ৬০ বছর বয়সী প্লাতিনিকে হারাতে হচ্ছে উয়েফা সভাপতিরও পদ। ২০১১ সালে আর্থিক লেনদেন নিয়ে অস্বচ্ছতার অভিযোগ উত্থাপিত হয় ব্লাটার-প্লাতিনির বিরুদ্ধে। ফিফার একটা প্রকল্পের জন্য পরামর্শক হিসেবে ২০ লাখ ডলার নিয়েছিলেন প্লাতিনি। সেটা হয়েছিল ব্লাটারের মধ্যস্থতায়। অভিযোগ উঠে, ওই লেনদেনে ফিফার স্বার্থ রক্ষিত হয়নি। পরিবর্তীতে ফিফার নৈতিকতা কমিটি দুজনকে ৯০ দিনের জন্য নিষিদ্ধ করে। প্লাতিনি অবশ্য সর্বোচ্চ ক্রীড়া আদালতেও সাময়িক এই শাস্তি প্রত্যাহারের আবেদন করেছিলেন। কিন্তু লাভ হয়নি। দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় হিরো থেকে জিরো হয়ে গেলেন তারা। ব্লাটার ও প্লাতিনির বিরুদ্ধে অভিযোগের ফিরিস্তি কম নয়। অনেক অভিযোগে তাদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়। ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ব্লাটার ও প্লাতিনি ২০ লাখ ডলারের ‘অনৈতিক’ লেনদেন করেছিলেন বলে অভিযোগ তোলেন সুইজারল্যান্ডের আইনজীবীরা। অবশ্য ব্লাটার দাবি করেছিলেন, ১৯৯৯-২০০২ সাল পর্যন্ত প্লাতিনি ফিফার হয়ে যে দায়িত্ব পালন করেছিলেন, তারই পারিশ্রমিক হিসেবে দেয়া হয়েছিল ২০ লাখ ডলার। তবে এতদিন পর কেন এই অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে, সে বিষয়ে কোন ব্যাখ্যা দেননি ব্লাটার বা প্লাতিনি। শেষপর্যন্ত এই আর্থিক লেনদেনকে ‘অনৈতিক’ বলেই ঘোষণা করেছে ফিফার এথিকস বা নৈতিকতা সংক্রান্ত কমিটি। গত মে মাস থেকেই দুর্নীতির অভিযোগে জর্জরিত হয়েছে ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা ফিফা। সে সময় সুইজারল্যান্ডের জুরিখে ফিফার কংগ্রেসের ঠিক আগমুহূর্তে একটি হোটেল থেকে শীর্ষস্থানীয় সাত কর্মকর্তাকে আটক করে সুইস পুলিশ। পঞ্চমবারের মতো ফিফা সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পরও তাই মাত্র চারদিনের মাথায় সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিতে বাধ্য হন ৭৯ বছর বয়সী ব্লাটার। আগামী বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি নতুন করে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ফিফার সভাপতি নির্বাচন। সেখানে অংশগ্রহণ করার কথা ছিল প্লাতিনির। কিন্তু আট বছরের নিষেধাজ্ঞার পর আর সেই নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না ফ্রান্সের এই কিংবদন্তি ফুটবলার। ১৯৯৮ সাল থেকে ফিফার সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করছিলেন ব্লাটার। আর প্লাতিনি ইউরোপিয়ান ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা উয়েফার সভাপতি হিসেবে কাজ করছিলেন ২০০৭ সাল থেকে। এথিকস কমিটির এই নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত কিছুতেই মানতে পারছেন না ব্লাটার। অন্যায়কে তাকে ফাঁসানো হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। নিষিদ্ধ হওয়ার পর জুরিখে সাংবাদিকদের ব্লাটার বলেন, ফিফা সভাপতি হিসেবে আমি দৌড়ের ওপর ছিলাম। আমাকে ফুটবলের মতো ‘লাথি’ মেরে ঘুরানো হয়েছে। ফিফার কাছে আমি দুঃখিত। পাঁচবারের ফিফা সভাপতি অভিযোগ অস্বীকার করে আরও বলেন, আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে এথিকস কমিটি। তারা আমার কোন তথ্যই উপস্থাপন করতে দেয়নি। আমাকে নির্দোষ প্রমাণের কোন সুযোগই তারা দেয়নি। দুই ক্ষমতাধর সংগঠকের শাস্তির পর মিশ্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে ফুটবলবিশ্বে।
×