ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশীদের জন্য ওমরাহ ভিসা ফের চালু

প্রকাশিত: ০৫:০৬, ২২ ডিসেম্বর ২০১৫

বাংলাদেশীদের জন্য ওমরাহ ভিসা ফের চালু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মানবপাচারের অভিযোগে নয় মাস বন্ধ থাকার পর বাংলাদেশীদের জন্য ওমরাহ ভিসার ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে সৌদি সরকার। রবিবার রয়েল এম্ব্যাসি অব সৌদি আরব এক চিঠিতে বাংলাদেশের ধর্ম মন্ত্রণালয়কে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বাংলাদেশের লাখ লাখ ওমরাহ প্রত্যাশীদের মধ্যে স্বস্তির নিশ্বাস নেমে আসে। ভিসা প্রক্রিয়াসহ অন্যান্য কার্যক্রম আগের নিয়মে থাকলেও আগামী জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহেই ওমরাহ ফ্লাইট চালু করা সম্ভব হবে আশা প্রকাশ করেছেন আটাব সভাপতি সৈয়দ শাহে নূরে মঞ্জুর মোর্শেদ মাহবুব। তিনি বলেছেন, এটা শুধু ঘোষণা হয়েছে। ওমরাহ ভিসার অনলাইন যখন চালু হবে- তখনই কেবল বলা যাবে কবেনাগাদ ফ্লাইট চালু করা সম্ভব। এ সম্পর্কে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন জনকণ্ঠকে জানান, মানবপাচারের অভিযোগ পেয়ে মন্ত্রণালয় দোষীদের বিরুদ্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার পর সৌদি সরকার বাংলাদেশীদের ভিসা উন্মুক্ত করে দিয়েছে। আমাদের কাছে ২০ ডিসেম্বর ইস্যু করা একটি আনুষ্ঠানিক চিঠি এসেছে। অবশ্য তার আগেই সৌদি সরকার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়। তিনি বলেন, আপাতত ৭০টি এজেন্সিকে ওমরাহ করার জন্য অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এটা পর্যায়ক্রমে বাড়বে। জানা যায়, গত বছর ওমরাহ করতে গিয়ে ১১ হাজার ৪৮৫ জন বাংলাদেশী ফেরত আসেননি। এ অভিযোগেসৌদি আরব বাংলাদেশীদের জন্য ওমরা ভিসা বন্ধ করে দেয় চলতি বছরের এপ্রিলে। এ অবস্থায় গত ১৯ নবেম্বর ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান সংবাদ সম্মেলন করে জানান, ১১ হাজার ৪৮৫ জন ওমরা করতে গিয়ে ফেরত আসেননি। ওমরায় পাঠানো ১০৪ এজেন্সির বিরুদ্ধে আমরা তদন্ত শুরু করি। এর মধ্যে ৯৪টির লাইসেন্স বাতিলসহ অন্যান্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এছাড়া এসব এজেন্সির বিরুদ্ধে অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী সর্বোচ্চ ২ কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হয়। বাংলাদেশের পক্ষে ওমরা ভিসা চালুর দাবির প্রেক্ষিতে সৌদি আরবের প্রস্তাবনা ছিল প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে শাস্তি দিতে হবে অভিযুক্তদের। এ দিকে গত আগস্টে জেদ্দায় এক বৈঠকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের অনুরোধে সাড়া দিয়ে দেশটির পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ড. নিজার বিন ওবায়েদ মাদানী বলেন, হজ মৌসুমের পরই বাংলাদেশীরা ওমরা ভিসা পাবেন। একই সঙ্গে সৌদির বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশ থেকে জনবল নেয়া হবে। উল্লেখ্য, গত বছর ওমরাহ মৌসুমে বাংলাদেশ থেকে ৫১ হাজার ৩২১ জন ওমরাহ ভিসায় সৌদি আরব যান। এদের বেশিরভাগই ত্রিশ দিনের ভিসা দেয়া হয়। বিধি মোতাবেক ওমরাহ শেষে তারা ফিরে আসবেন এমন অঙ্গিকার দিয়েই সৌদি যান। পরে দেখা গেছে নির্দিষ্ট ভিসার মেয়াদ শেষ হবার পরও বিপুলসংখ্যক হাজী দেশে ফেরেননি। এত সংখ্যক হাজী দেশে ফিরেননি এটা গোপনই থেকে। সংশ্লিষ্ট হজ এজেন্সি এদের ফেরত আনার বিষয়ে কোন উদ্যোগ নেয়নি। উপরন্ত এ বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার কৌশল অবলম্বন করে অভিযুক্ত হজ এজেন্সিগুলো। এত বিপূুলসংখ্যক হাজী দেশে ফিরেননি এটা ততোক্ষণ পর্যন্ত ফাঁস হয়নি-যতক্ষণ না পর্যন্ত সৌদি আরবের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগসহকারে ঢাকায় চিঠি পাঠানো হয়। তখন সবাই হতবাক। এ অবস্থায় বাংলাদেশের ধর্ম মন্ত্রণালয়কে চিঠির মাধ্যমে কালো তালিকাভুক্ত এসব হজ এজেন্সির নাম পাঠানো হয়। এগুলো হচ্ছে, সিলেটের রাব্বানী ওভারসিজ-২, ঢাকার আল ফাতিহা ট্রাভেলস, হাই লিংকস ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনাল, চট্টগ্রামের যোগাযোগ ট্যুরস এ্যান্ড ট্রাভেলস, ঢাকার ইনসাফ ট্রাভেলস এ্যান্ড ট্যুরস, মেসার্স এসএইচ ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনাল, আবাবিল ট্রাভেলস এ্যান্ড ট্যুরস, মিনি ট্রাভেলস এ্যান্ড ট্যুরস, রাজান ওভারসিজ), আল-আমীন এভিয়েশন, হানা ট্রাভেলস এ্যান্ড ট্যুরস, সোনিয়া ট্রাভেলস, এসএইচ ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনাল, সাদমান এয়ার সার্ভিস, সৌদি-বাংলা হজ সার্ভিস, এয়ার কং ইন্টারন্যাশনাল, বিএমএস ট্রাভেলস, সেন্ট্রাল ট্রাভেলস,গালফ ট্রাভেলস এ্যান্ড ট্যুরস. চট্টগ্রামের রাহাত ট্রাভেলস এ্যান্ড ট্যুরস, এসবি আগা এ্যান্ড কোং, ঢাকার ট্রিশন ওভারসিজ, চট্টগামের নিসান ওভারসিজ, মাসুদ ট্রাভেলস এ্যান্ড ট্যুরস, সিলেটের রাব্বানী ওভারসিজ, ঢাকার ট্রাভেলস স্কাই কানেকশন, গ্রিন হজ ট্রাভেলস, স্বপ্নপুরী ইন্টারন্যাশনাল, গুড জয় ট্রাভেলস এ্যান্ড ট্যুরস, আরিফ ট্যুরস এ্যান্ড ট্রাভেলস এবং চট্টগ্রামের আল আমানাত ট্রাভেলস। সূত্র জানায়, গত ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত ওমরাহ পালনের উদ্দেশে তারা সৌদি আরব যান। আর সেটা সৌদি আরব সরকার অবগত হয় এ বছরের এপ্রিল মাসে। তখনই বাংলাদেশকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়। বাংলাদেশী হজযাত্রীদের ব্যাপারে কঠোর সতর্ক অবস্থান নেয় সৌদি সরকার। সৌদি সরকার হঠাৎ ওমরাহ বন্ধ করে দেয়ায় সরকারও কিছুটা বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে। এ নিয়ে গণমাধ্যমেও ব্যাপক সমালোচনা দেখা দেয়। এতে সরকার কয়েক দফা সৌদি আরবে একাধিক টিম পাঠিয়ে ওমরাহ জটিলতা নিরসনের জন্য চেষ্টা চালায়। কিন্তুু সৌদি সরকার সুস্পষ্ট জানিয়ে দেয়, সৌদিতে পালিয়ে থাকা হাজীদের ফিরিয়ে না নেয়া পর্যন্ত ওমরাহ চালু করা হবে না। তারপরই টনক নড়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের। এ জটিলতা নিরসনে হাব-নেতৃবৃন্দের সঙ্গেও একাধিক বৈঠক ডাকা হয়। কিন্তুু হাব তার দায়ভার স্বীকারই করেনি। এ অবস্থায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে জানান, দায়ী ব্যক্তি যেই হোক, তিনি যদি সচিব বাবুল চৌধুরীও হয়ে থাকেন, ছাড় দেয়া হবে না। কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ সময় তিনি দায়ী হজ এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে মানব পাচারের আইনে মামলা করার নির্দেশ দেন। ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশে প্রায় ১৪০০ হজ এজেন্সি আছে। এর মধ্যে শুধু ওমরাহ হজ এজেন্সি রয়েছে সাড়ে ৩ শতাধিক। সৌদি ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশের মতো এত বেশিসংখ্যক হজ এজেন্সি পৃথিবীর আর কোন দেশের নেই। সারা পৃথিবীতে মোট হজ এজেন্সির সংখ্যা মাত্র ৩ হাজার ১৩৪টি। এর মধ্যে বাংলাদেশের একাই প্রায় অর্ধেক। এত সংখ্যক এজেন্সির প্রয়োজনীয়তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে সৌদি হজ মন্ত্রণালয়। এক সঙ্গে এতগুলো এজেন্সিকে নিয়ন্ত্রণ, তদারকি ও সার্ভিস দেয়া তাদের জন্যও বেশ কঠিন। এ কারণেই এসব এজেন্সির কার্যকলাপ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে সৌদি হজ মন্ত্রণালয়।
×