ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

গৃহকর্মীদের চাকরি সুরক্ষানীতি মন্ত্রিসভায় অনুমোদন

প্রকাশিত: ০৫:০৫, ২২ ডিসেম্বর ২০১৫

গৃহকর্মীদের চাকরি সুরক্ষানীতি মন্ত্রিসভায় অনুমোদন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ গৃহকর্মীদের সুরক্ষা ও কল্যাণে একটি নীতিমালা অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এতে গৃহকর্ম শ্রম হিসেবে স্বীকৃতি পাবে এবং সবেতনে চার মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি ছাড়াও অন্য ছুটি ভোগ করতে পারবেন গৃহকর্মীরা। বৈঠকে দশম জাতীয় সংসদের ২০১৬ সালের প্রথম অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের খসড়াও অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এছাড়া মন্ত্রিসভা তিনটি আইন এবং একটি নীতির অনুমোদন দিয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন-২০১৫ ও বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন আইন-২০১৫’র খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে ‘এশিয়ান ইনফাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক আইন-২০১৫’র। সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠক এই সকল অনুমোদন দেয়া হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করেন। মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণে এই নীতিমালা অনুমোদন পাওয়ায় শ্রম আইন অনুযায়ী গৃহকর্মীরা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাবেন। এতে সর্বনিম্ন ১৪ বছর বয়সী কাউকে গৃহকর্মী নিয়োগ দেয়া যাবে। গৃহকর্মীদের শ্রমঘণ্টা এবং বেতন আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করতে হবে। এই নীতিমালা অনুমোদনের ফলে গৃহকর্ম শ্রম হিসেবে স্বীকৃত পাবে এবং চার মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি পাবেন তারা। নীতিমালায় গৃহকর্মীদের বিশ্রামের পাশাপাশি বিনোদনের সময় দেয়ারও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। গৃহকর্মী নির্যাতনের বহু অভিযোগের প্রেক্ষাপটে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, নির্যাতন করলে প্রচলিত আইন অনুযায়ী সরকার ব্যবস্থা নেবে। শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতিমালার আলোকে পরে আইন করা হবে। ২০১০ সালের এক জরিপের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, রাজধানীতে তখন ২০ লাখ গৃহকর্মী ছিল। তবে এখন এই সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। সারাদেশে কত গৃহকর্মী রয়েছে, সেই তথ্য সরকারের কাছে নেই বলে স্বীকার করেন প্রতিমন্ত্রী। নীতিমালায় যা আছে গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতিমালায় বলা হয়েছে, আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে গৃহকর্মীর মজুরি নির্ধারিত হবে। পূর্ণকালীন গৃহকর্মীর মজুরি যাতে তার পরিবারসহ সামাজিক মর্যাদার সঙ্গে জীবনযাপনের উপযোগী হয় নিয়োগকারীকে তা নিশ্চিত করতে হবে। তবে গৃহকর্মীর ভরণ-পোষণ, পোশাক-পরিচ্ছদ দেয়া হলে তা মজুরির অতিরিক্ত বলে গণ্য হবে। গৃহকর্মী নিয়োগে শ্রম আইনের বিধান অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। কমপক্ষে ১৪ বছর বয়সের কাউকে গৃহকর্মী হিসেবে নিয়োগ দেয়া যাবে। তবে ১২ বছর বয়সের কাউকে গৃহকর্মী রাখতে হলে তার আইনানুগ অভিভাবকের সঙ্গে তৃতীয় কোন পক্ষের উপস্থিতিতে নিয়োগকারীকে আলোচনা করতে হবে। তৃতীয় পক্ষের উপস্থিতিতে এই আলোচনা, চুক্তি, সমঝোতা বা ঐকমত্যের সময় নিয়োগের ধরন, তারিখ, মজুরি, বিশ্রামের সময় ও ছুটি, কাজের ধরন, থাকা-খাওয়া, পোশাক-পরিচ্ছদ এবং গৃহকর্মীর বাধ্যবাধকতা- এসব বিষয়ের উল্লেখ রাখতে বলা হয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী, প্রত্যেক গৃহকর্মীর কর্মঘণ্টা এমনভাবে বিন্যস্ত করতে হবে যাতে তিনি পর্যাপ্ত ঘুম, বিশ্রাম, চিত্তবিনোদন ও প্রয়োজনীয় ছুটির সুযোগ পান। গৃহকর্মীর ঘুম ও বিশ্রামের জন্য নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত স্থানও নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী, অসুস্থ অবস্থায় কোন গৃহকর্মীকে দিয়ে কাজ করান যাবে না। নিয়োগকারীকেই নিজের অর্থে গৃহকর্মীর চিকিৎসা করাতে হবে। এছাড়া গৃহকর্মীকে তার নিজের ধর্ম পালনের সুযোগ দিতে হবে। কর্মরত অবস্থায় কোন গৃহকর্মী দুর্ঘটনার শিকার হলে চিকিৎসাসহ দুর্ঘটনা ও ক্ষতির ধরন অনুযায়ী নিয়োগকারীকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। গৃহকর্মীদের সঙ্গে অশালীন আচরণ, দৈহিক বা মানসিক নির্যাতন করা যাবে না উল্লেখ করে নীতিমালায় বলা হয়েছে, গৃহকর্মীর ওপর কোন হয়রানি ও নির্যাতন হলে বিচারের দায়িত্ব সরকারের। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র, শ্রম, মহিলা ও শিশু এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় ও সুস্পষ্ট নির্দেশাবলী দেবে। কোন গৃহকর্মী নিয়োগকারী বা তার পরিবারের সদস্য বা অতিথিদের দ্বারা শারীরিক, মানসিক বা যৌন হয়রানির শিকার হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। নীতিমালা অনুযায়ী, গৃহকর্মী নির্যাতন বা হয়রানির ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানা যেন দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারে সেজন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দাফতরিক নির্দেশনা জারি করতে হবে। কোন গৃহকর্মী যৌন হয়রানি, যৌন নির্যাতন, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগে মামলা করলে সরকারী খরচে সেই মামলা পরিচালিত হবে। গৃহকর্মী যদি কর্মরত পরিবারের শিশু, অসুস্থ ও বৃদ্ধ ব্যক্তিসহ কোন সদস্যের সঙ্গে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন বা পীড়াদায়ক আচরণ করেন তবে নিয়োগকারী তার নিয়োগ বাতিল করে তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারবেন। কাউকে না জানিয়ে গৃহকর্মী চলে গেলে নিয়োগকারী সংশ্লিষ্ট থানায় জিডি করতে পারবেন। তবে অর্থ বা মালামাল নিয়ে গৃহকর্মী পালালে সেক্ষেত্রে আইনের আশ্রয় নিতে পারবেন নিয়োগকারী। নিয়োগকারী পূর্ণকালীন গৃহকর্মী নিয়োগ দিয়ে তার ছবিসহ বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানাকে অবহিত করতে পারবেন। স্বাভাবিক অবস্থায় কোন গৃহকর্মীকে চাকরি থেকে অপসারণ করতে হলে এক মাস আগে জানাতে হবে। গৃহকর্মীও যদি চাকরি ছাড়তে চান তবে নিয়োগকারীকে তা এক মাস আগে জানাতে হবে। তাৎক্ষণিকভাবে কেউ গৃহকর্মীকে চাকরি থেকে বাদ দিলে এক মাসের মজুরি দিয়ে বিদায় করতে হবে। এই নীতিমালা বাস্তবায়নে শ্রম মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি তদারকি সেল থাকবে। এছাড়া সিটি কর্পোরেশন এলাকায় আঞ্চলিক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং জেলা-উপজেলায় যথাক্রমে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সভাপতি করে মনিটরিং সেল গঠন করা হবে বলেও নীতিমালায় উল্লেখ রয়েছে। ১৯৫৭ সালে প্রণীত বালাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন আইনটিকে বাংলায় অনুবাদ করে সেটির খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভায়। এছাড়া সোমবারের মন্ত্রিসভা বৈঠকে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক আইনের খসড়ায়ও নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে বলেও জানান শফিউল আলম।
×