ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অটোরিক্সা নৈরাজ্য

মালিক চালক কেউ সরকারের নির্দেশ মানছেন না

প্রকাশিত: ০৫:০৪, ২২ ডিসেম্বর ২০১৫

মালিক চালক কেউ সরকারের নির্দেশ মানছেন না

রাজন ভট্টাচার্য ॥ সরকার নির্ধারিত ভাড়া ও জমার তোয়াক্কা করছেন না সিএনজি চালিত অটোরিক্সা মালিক ও চালকরা। ইচ্ছেমতো চালকদের কাছ থেকে জমা নেয়া হচ্ছে। সর্বোচ্চ এক হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত জমা আদায়ের অভিযোগ মিলেছে। অন্তত ছয় হাজার গাড়ি মালিকের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ। স্বল্প দূরত্বে ও মিটারে যেতে নারাজ চালকদের কেউ কেউ। বিলের পাশাপাশি ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে যাত্রীদের থেকে। সব মিলিয়ে নগরীতে চলা প্রায় ১৩ হাজার অটোরিক্সার বেশিরভাগই এখনও নিয়ন্ত্রণের বাইরে। বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ বলছে, শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত। এদিকে অটোরিক্সার নৈরাজ্য থামাতে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ১১ সদস্যের গঠিত টাস্কফোর্সের কার্যক্রম নিয়েও অসন্তোষ রয়েছে। চালক ও মালিকদের নানা অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটিএ সচিব শওকত আলী বলেন, এ সেক্টরে শৃঙ্খলা ফেরাতে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। প্রতিদিন মোবাইল কোর্ট চলছে। আশা করি, দ্রুত পরিস্থিতির উন্নতি হবে। পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার লক্ষে এক নবেম্বর থেকে সিএনজি চালিত অটোরিক্সার ভাড়া ও জমা পুনর্নির্ধারণ করে সরকার। মালিকদের জমা বাড়িয়ে ৬০০ টাকার স্থলে করা হয়েছে ৯০০ টাকা। নতুন ভাড়া অনুযায়ী প্রথম দুই কিলোমিটারের ভাড়া ২৫ টাকার স্থলে ৪০ টাকা করা হয়েছে। সর্বনিম্ন ভাড়াও তাই। পরবর্তী প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া সাত টাকা ৬৪ পয়সার স্থলে ১২ টাকা করা হয়েছে। যানজট বা অন্য কোন কারণে রাস্তায় বিরতিকালে প্রতি মিনিটের ভাড়া এক টাকা ৪০ পয়সার স্থলে ২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সর্বশেষ ২০১১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা ও চট্টগ্রামে গণপরিবহনের ভাড়া বাড়ানো হয়েছিল। ভাড়া নির্ধারণী কমিটির সদস্যরা বলছেন, সঠিক ব্যয় বিশ্লেষণ করা হলে কোন অবস্থাতেই মালিকের জমা ৯০০ টাকা হবে না। তবুও পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা আনতেই মালিকদের ক্ষেত্রে বাড়তি সুযোগ নিশ্চিত করা হয়েছে। তারা বলছেন, ব্যয় বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে ৩০০ কার্যদিবসকে বছর ধরা হয়েছে। এ হিসেবে ব্যয় ধরা হয় ৮৫২ টাকা। এর মধ্যে প্রতিদিনের গ্যারেজ ভাড়া হিসেবে আটচল্লিশ টাকা যুক্ত হয়েছে। পরবর্তীতে মালিক সমিতির আবেদনের প্রেক্ষিতে ১০ সেপ্টেম্বর মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে জমা বাড়িয়ে ৯০০ টাকা চূড়ান্ত হয়। শ্রমিক নেতাদের অভিযোগ, সর্বোচ্চ সুবিধা নিশ্চিত করার পরও এক শ্রেণীর গ্যারেজ মালিকরা চালকদের জিম্মি করে দারোয়ানের নামে গাড়িপ্রতি সর্বোচ্চ ৭০ টাকা পর্যন্ত প্রতিদিন আদায় করছেন। ফলে চালকদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। মূলত এসব কারণেই কিছু চালক মিটারে যেতে রাজী হন না। পাশাপাশি অনেকে মিটারে গেলেও বাড়তি টিপস্ হিসেবে যাত্রীদের কাছ থেকে ২০-৫০ টাকা পর্যন্ত আদায় করছেন। প্রায় ছয় হাজার গাড়ি চলছে দুই শিফটে ॥ ঢাকা অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়েনের হিসেব মতে, সরকারী নিয়ম-নীতি তোয়াক্কা করে প্রায় ছয় হাজার অটোরিক্সা চলছে দুই শিফটে। এর মধ্যে দুই হাজার ২৩৩টি গাড়ির বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে মন্ত্রণালয়সহ বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের কাছে। পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনুমোদিত অটোরিক্সা রয়েছে ১২ হাজার ৭১৫টি। মিশুকের পরিবর্তে আরও ৪১৫টি নতুন অটোরিক্সা নামানো হয়েছে। প্রাইভেট অটোরিক্সা নামে রাজধানীতে ভাড়ায় চলছে প্রায় ছয় হাজার গাড়ি। এছাড়াও গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জসহ ঢাকা জেলা মিলিয়ে আরও চার হাজার অটোরিক্সা অবৈধভাবে রাজধানীতে চলাচল করছে। বাড়তি জমার অভিযোগ পাহাড় সমান ॥ অটোরিক্সা চালকদের বক্তব্য, বাড়তি ভাড়া ও জমা নেয়ার ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ফেরাতে গঠিত টাস্কফোর্সের তেমন কোন তৎপরতা নেই। যা সবচেয়ে দুঃখজনক। বাড়তি ভাড়া নেয়া হলে সবাই খবর পায়। কিন্তু বাড়তি জমা নেয়া ও চালকদের নির্যাতনের খবর কেউ রাখে না। বাস্তবতা হলো, যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায়ে চালকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছেই। বাড়তি জমা নেয়ার পাহাড় সমান অভিযোগ মালিকদের বিরুদ্ধে। কে শোনে কার কথা। প্রশ্ন ওঠেছে? রাজধানীতে চলা প্রায় ১৩ হাজার পরিবহন নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে সরকার। তাহলে সারাদেশের পরিবহন সেক্টরে চলা অরাজগতা কিভাবে বন্ধ হবে। ঢাকা অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে সরেজমিন তদন্ত করে বাড়তি জমা আদায়কারী মালিকদের নাম ঠিকানা উল্লেখ করে মন্ত্রণালয়সহ বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের কাছে আনুষ্ঠানিক চিঠি দেয়া হয়েছে। চিঠিতে বাড়তি অর্থ আদায়কারী গ্যারেজ মালিকদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ারও অনুরোধ রয়েছে। রাজধানীর ভাটারা এলাকার নর্দা জগন্নাথপুর বাস টার্মিনাল সংলগ্ন মাজহারের গ্যারেজে বেআইনীভাবে দুই শিফটে অটোরিক্সা ভাড়া দেয়া হচ্ছে। মোট ২৮ অটোরিক্সার প্রতিটি থেকে ৭০০ টাকা করে দুই পর্বে গাড়ি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে এক হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত। ২৭০ সিপাহীবাগের ফরিদের গ্যারেজের ৫০টি গাড়ি দুই শিফটে ভাড়া দেয়া হচ্ছে। একটি গাড়ি থেকে প্রতি বেলা ৬৫০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে এক হাজার ৩০০ টাকা পর্যন্ত। সিপাহীবাগ নতুন রাস্তার ৩৩৩/৪ নম্বর বাড়ির মোঃ ইব্রাহিমের গ্যারেজেও এক হাজার ৩০০ টাকায় দুই ভাগে ৪০টি অটোরিক্সার থেকে প্রতিদিন জমা নেয়া হচ্ছে। সিপাহীবাগ নতুন রাস্তায় মেঘনা অটোর পেছনে বাবুলের গ্যারেজেও ২২টি গাড়ি এক হাজার ৩০০ টাকায় দুই ভাগে জমা নেয়া হচ্ছে। খিলগাঁওয়ের সিপাহীবাগের নবাবীর মোড়ের নজরুল মহাজনও ৭০টি গাড়ির প্রতিটি থেকে দুই ভাগে এক হাজার ৩০০ টাকায় ভাড়া দিচ্ছেন। খিলগাঁও ঈদগাহ মসজিদের পূর্ব পাশে ফারুকের গ্যারেজ থেকেও ৫০টি অটোরিক্সা থেকে দুই বেলা ভাড়া নেয়া হচ্ছে এক হাজার ৩০০ টাকা পর্যন্ত। খিলগাঁও ঈদগাহ মসজিদ সংলগ্ন কাদির মিস্ত্রির গ্যারেজেও ৪০টি গাড়ির প্রতিটি থেকে এক হাজার ৩০০ টাকা ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। হাতিরঝিল সংলগ্ন মধুবাগের রোকেনের গ্যারেজেও ৩৫ গাড়ির প্রতিটি থেকে দু’ বেলা এক হাজার ৪৫০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া দেয়া হচ্ছে। রাজধানীর কদমতলী এলাকার ৮৪৫/৫৫ শনির আখড়া মন্দির গেট শহীদ মহাজনের গ্যারেজে ৭০ গাড়ির প্রতিটি থেকে দুই বেলায় প্রতিদিন আদায় করা হচ্ছে এক হাজার ৪৫০ টাকা পর্যন্ত। মগবাজার রেলগেট এলাকায় দিগন্ত অটো সেন্টারের মালিক কমল কুমার দে (গৌতম) ৪০ গাড়ির প্রতিটি থেকে দুই বেলায় এক হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করছেন। এছাড়াও কদমতলী থানার পলাশপুর এলাকায় রোড নং-৪, বাড়ি নং-১ কুদ্দুস আলীর গ্যারেজের ৩৫ অটোরিক্সার প্রতিটি থেকে দুই বেলা ভাড়া নেয়া হচ্ছে এক হাজার ৪০০ টাকা। একই এলাকার ২ নম্বর বাড়ি কামালের গ্যারেজে ৩৫ অটোরিক্সার প্রতিটি থেকে আদায় করা হচ্ছে সমপরিমাণ অর্থ। একই এলাকার ৬ নম্বর বাড়ির মোঃ শাজাহারের গ্যারেজের ১৭ অটোরিক্সার সবকটি থেকে সরকার নির্ধারিত জমার ৫০০ টাকা বাড়তি আদায় করা হচ্ছে। ধনিয়া এলাকার ৫৭৬ নম্বর বাড়ির কালামের গ্যারেজের ১৪ গাড়ির প্রতিটি থেকে এক হাজার ৪০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে প্রতিদিন। ৫৫৯ ধনিয়া বাজার রোডের রিপন সরদারের গ্যারেজ থেকে ২৫ অটোরিক্সার মধ্যে প্রতিটি থেকে এক হাজার ১০০ টাকা করে আদায় করা হয়। মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, ৪৮৭ উত্তর ধনিয়া আদর্শ স্কুল রোডের অরুণের গ্যারেজের ৩৫ অটোরিক্সা প্রতিটি থেকে দুই বেলায় আদায় হচ্ছে এক হাজার ১০০ টাকা। সায়েদাবাদ নতুন রাস্তা এলাকার পশ্চিম যাত্রাবাড়ির মোঃ নুরুর গ্যারেজের ৩৫ গাড়ির প্রতিটি থেকে এক হাজার ৫০ টাকা করে জমা নেয়া হচ্ছে। মীরহাজীরবাগের বড়বাড়ি ১নং গেট কামাল মাহাজনের গ্যারেজে আছে ৯০টি অটোরিক্সা। তিনি দুই বেলা এক হাজার ৫০০ টাকা ভাড়া নিচ্ছেন বলে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। একই ঠিকানার শফি মহাজন তার গ্যারেজের থাকা ৮০ গাড়ির প্রতিটি থেকে দিনে আদায় করছেন এক হাজার ৬০০ টাকা। ধোলাইপাড় স্কুল রোডের মসজিদের সামনে মোজাফফর মহাজনের গ্যারেজের ৭৫ গাড়ির প্রতিটি থেকে দিনে এক হাজার ৫০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। পশ্চিম ধোলাইপাড়ের সাবান ফ্যাক্টরির গলিতে আক্তার মহাজন ৫২ গাড়ির প্রতিটি থেকে দু’বেলা এক হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত জমা নিচ্ছেন। একই এলাকার ২৪ গাড়ি থেকে মকবুল মহাজন আদায় করছেন সমপরিমাণ অর্থ। ১১/১ পশ্চিম যাত্রাবাড়ী খালপাড় নতুন রাস্তা মোঃ আবুল হোসেন তার গ্যারেজে থাকা ২৪ গাড়ির প্রতিটি থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা আদায় করছেন। বাড়তি অর্থ আদায়ে পিছিয়ে নেই মীরহাজিরবাগের বড়বাড়ি এক নম্বর গেটের গ্যারেজ মালিক সেন্টু মহাজন। তিনি দুই বেলা ভাড়া দিচ্ছেন ৬০টি গাড়ি। গাড়ি প্রতি দু’বেলা জমা নিচ্ছেন এক হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত। যাত্রাবাড়ীর ১নং ওয়াপদা গেটের গ্যারেজ মালিক মোঃ দেলোয়ার হোসেন জাপানী। তাঁর গ্যারেজের ৪০ গাড়ির প্রতিটি থেকে দু’বেলা বাড়তি অর্থ নিচ্ছেন ১৫০ টাকা। তেজগাঁও সাত রাস্তা এলাকার আকিজ সিএনজি পাম্পের পেছনে বিদ্যুতের গ্যারেজের প্রতিটি গাড়ি থেকে দু’বেলায় নেয়া হচ্ছে এক হাজার ৪০০ টাকা। একই এলাকার সিরাজ মিয়ার গ্যারেজ থেকে ৩০ গাড়ির প্রতিটি থেকে দু’বেলা বাড়তি নেয়া হচ্ছে ৫০০ টাকা। সাতরাস্তা মোড়ের ২/১০ দক্ষিণ বেগুনবাড়ি এলাকার বাবর মিয়ার গ্যারেজের ৩৯ গাড়ির প্রতিটি থেকে দু’বেলা হিসেবে এক হাজার ৪০০ টাকা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। মোহাম্মদপুরের সরকারী স্কুলের পাশে জীবন মিয়া ও নুরু মিস্ত্রির গ্যারেজের শতাধিক গাড়ির প্রতিটি থেকে দু’বেলায় এক হাজার ৪০০ টাকা নেয়া হচ্ছে। একই এলাকার গজনবী সড়কের শহীদ মিয়ার গ্যারেজের ১৫ গাড়ির প্রতিটি থেকে নেয়া হচ্ছে এক হাজার ৫০০ টাকা। একই এলাকার জহুরি মহল্লার মোতালেব মহাজনের গ্যারেজের আট গাড়ির প্রতিটি থেকে সমান অর্থ আদায় করা হচ্ছে। একই মহল্লার পিচ্চি বাবু ১১ গাড়ির প্রতিটি থেকে নিচ্ছেন এক হাজার ৫০০ টাকা। গজনবী রোডের সাগর অটোপার্স গ্যারেজের মোঃ সাগর ১৪ গাড়ির প্রতিটি থেকে দু’বেলা হিসেবে আদায় করছেন এক হাজার ৩০০ টাকা। টিটি পাড়া সিএনজি পাম্প সংলগ্ন নূর ইসলাম ও বাকেরের গ্যারেজ থেকে ৩৫ অটোরিক্সার প্রতিটি থেকে এক হাজার ৩০০ টাকা নেয়া হচ্ছে। সুলতানা কামাল ব্রিজের পাশে হাজী বাদশা মিয়া মার্কেটের এলমা এন্টারপ্রাইজ গ্যারেজ থেকে মালিক নুরুল হক ৭০ গাড়ির প্রতিটি থেকে দু’বেলায় এক হাজার ৫০ টাকা পর্যন্ত নিচ্ছেন। একই ঠিকানার সুধীর নয়টি অটোরিক্সার প্রতিটি থেকে দিনে সমপরিমাণ অর্থ আদায় করার কথা অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। ঢাকা অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হাসিফ খোকন জনকণ্ঠকে বলেন, আমরাও চাই পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা ফিরে আসুক। মালিকরা সরকার নির্ধারিত জমা আদায় করলে ও শ্রমিকরা ভাড়া মেনে চললেই এ সেক্টরে সুনাম ফিরবে। কিন্তু তা হচ্ছে না। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের গঠিত টাস্কফোর্সের কার্যক্রমও সন্তোষজনক নয়। অভিযোগ করলেও অনেক সময় মালিক ও চালকদের বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। চালকদের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই ॥ অভিযোগ পুরনো। কিন্তু এসব সমস্যা নতুন করে সামনে আসার কথা ছিল না। তবুও আসছে। অল্পদিনেই সরকার নির্ধারিত ভাড়াসহ নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করছেন না অটোরিক্সা চালকরা। নিজের নিয়মে গাড়ি পরিচালনা করছেন তারা। এ সুযোগে যাত্রীদের পকেট থেকে যাচ্ছে বাড়তি ভাড়া। স্বল্প দূরত্বে না যাওয়া, ২০Ñ৫০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি ভাড়া আদায়, মিটারে না চলা, সকাল নয়টার আগে মিটারে চলাচল নয় এরকম অভিযোগ চালকদের বিরুদ্ধে। অভিযোগের ব্যাপারে দ্বিমত নন পরিবহন নেতা থেকে শুরু করে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষও। বিআরটিএ সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গেল ২৫ নবেম্বর ভাড়া বাস্তবায়ন মনিটরিং কমিটির বৈঠকে গ্যারেজ ও রাস্তায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু এর বাস্তবায়ন নেই। ১১ সদস্যবিশিষ্ট টাস্কফোর্সের কোন কার্যক্রম নেই বলেও অভিযোগ মিলেছে। যাত্রীদের কাছ থেকে চালকদের বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ স্বীকার করে, পরিবহন নেতারা বলছেন বিআরটিএ কর্র্তৃপক্ষের মনিটরিংয়ের অভাব এজন্য দায়ী। তারা বলেন, সর্বশেষ ২০০২ সালে অটোরিক্সা ব্যয় বিশ্লেষণ কমিটি দৈনিক ১৬০ কিলোমিটার গড় মাইল নির্ধারণ করে প্রতিদিন চালকদের আয় ধরা হয় ৫০০ টাকা। বাস্তবে ১২০ কিলোমিটারের বেশি একটি অটোরিক্সা দিনে চলতে পারে না। ফলে কাক্সিক্ষত আয় হচ্ছে না। অথচ বাসের চালকদের জন্য প্রতিদিনের আয় ধরা হয়েছে ৯০০ টাকা। আয় বাড়তে অনেক অটোরিক্সাচালক বাড়তি অর্থের দাবি করেন। তিন জানুয়ারি থেকে লাগাতার ধর্মঘটের হুমকি ॥ বাড়তি জমা আদায় বন্ধ, এক শিফটে গাড়ি চালানোসহ ১০ দফা দাবিতে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিআরটিএসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে ঢাকা অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়ন। আগামী দুই জানুয়ারির মধ্যে এসব দাবি-দাওয়া মেনে নেয়া না হলে তিন জানুয়ারি থেকে ঢাকা মহানগরীতে লাগাতার অটোরিক্সা ধর্মঘটের কথা চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
×