ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ওষুধ সেবনে মৃত্যুঝুঁকি

প্রকাশিত: ০৩:৫৩, ২২ ডিসেম্বর ২০১৫

ওষুধ সেবনে মৃত্যুঝুঁকি

রীতিমতো উদ্বেগজনক খবর পাওয়া গেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে। ২০১৪ সালে সেখানে মাত্রাতিরিক্ত ওষুধ সেবন করে মৃত্যু হয়েছে ৪৭ হাজারের বেশি মানুষের। এই হার ২০১৩ সালের তুলনায় ৭ শতাংশ বেশি। সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এ্যান্ড প্রিভেনশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, অতিরিক্ত ওষুধ খাওয়ার কারণে এর আগে কোন বছরই মৃত্যুর সংখ্যা এত বাড়েনি। সংস্থাটি বিষয়টিকে উল্লেখ করেছে ‘মহামারী’ হিসেবে। এই পর্যন্ত মনে হতে পারে যে, সম্ভবত ঘুমের ওষুধ অথবা এ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে এত বেশি সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হয়েছে! বাস্তবে তা নয়। ৬১ শতাংশ মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী ব্যথানাশক ওষুধ। যুক্তরাষ্ট্রে এফডিএ বা ফেডারেল ড্রাগ এ্যাডমিনিস্ট্রেশন যাবতীয় খাদ্যপণ্য এবং ওষুধবিষুধ বিক্রির ব্যাপারে অত্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে থাকে। সেখানে রেজিস্টার্ড ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া যে কোন ওষুধ বিক্রি বা হস্তান্তর কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। এরপরও এত বিপুল সংখ্যক মানুষের মৃত্যু উদ্বেগজনক বৈকি। দীর্ঘদিন ধরে যথাযথ প্রতিরোধ-ব্যবস্থা বা প্রতিকার না নিয়ে যে কোন ব্যথানাশক ওষুধ সেবন বিপজ্জনক। প্রতিবেদনে দেখা যায়, অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী বেদনানাশক ওষুধ জোগাড় করতে না পেরে মানুষ বাধ্য হয়ে ঝুঁকে পড়ে প্যাথেড্রিন, হেরোইনের মতো মাদকে। এর ফলেও অনিবার্যভাবে বেড়েছে মৃত্যুঝুঁকি। যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি বিবেচনা করা যেতে পারে আমাদের দেশের পরিস্থিতি। বাংলাদেশে ওষুধ বিক্রি ও বিপণনের ক্ষেত্রে কোন আইন-কানুন বা নিয়ম-নীতির বালাই নেই। সত্য বটে, গত ক’বছরে ওষুধ শিল্প খাতে প্রভূত উন্নতি করেছে বাংলাদেশ। তাই দেশের চাহিদার প্রায় ৯৭ শতাংশ ওষুধ উৎপাদিত হয় দেশে। অনেক দেশে ওষুধ রফতানিও হয়ে থাকে। তবে ওষুধের অভ্যন্তরীণ বাজার একেবারেই লাগামছাড়া ও নিয়ন্ত্রণহীন। সারাদেশের প্রত্যন্ত গ্রাম-গঞ্জ ও ইউনিয়নের কথা বাদ দিলেও খোদ রাজধানীতেই পাওয়া যাবে অগণিত ওষুধের দোকান। যেগুলোর অধিকাংশই বেআইনী বা অবৈধ। মুদি দোকান অথবা হাটবাজারে, ফুটপাথে ফেরি করে ওষুধ বিক্রির নজিরও আছে। অন্যদিকে, বেশ কিছু ওষুধ কোম্পানি আছে যেগুলো মানহীন, ভেজাল ওষুধ তৈরি ও বিপণন করে থাকে। তদুপরি রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ব্যতিরেকে ওষুধ বিক্রি না করার নিয়ম থাকলেও প্রায় কেউই তা মানে না বললেই চলে। হাত বাড়ালেই যে কোন ওষুধ যে কোন দোকানে যথেচ্ছ পরিমাণ পাওয়া যায় কোন প্রেসক্রিপশন ছাড়াই। আর এতে শুধু ব্যথানাশক নয়, বরং ঘুমের ওষুধ থেকে শুরু করে এ্যান্টিবায়োটিক যা চাওয়া যায়, তাই মেলে। অতিরিক্ত ব্যথানাশক ওষুধ সেবনের কুফল আমেরিকার অভিজ্ঞতা থেকে জানতে পারি সহজেই। আমাদের দেশে অনুরূপ কোন সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান নেই। সে অবস্থায় দেশে অতিরিক্ত ওষুধ সেবনের কুফল সম্পর্কে তেমন জানা যায় না। তবে বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, মাত্রাতিরিক্ত ওষুধ সেবনে মৃত্যুঝুঁকি আমাদের দেশেও প্রবল। সাধারণ একজন মানুষ পর্যন্ত যে কোন ওষুধ কিনতে পারে। সাধারণ অসুখবিসুখ হলে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার এমনকি প্রয়োজনও অনেকে অনুভব করে না। হাতের কাছে সর্বদা ডাক্তার পাওয়াও অবশ্য সহজ নয়। ওষুধের দোকানে প্যারামেডিক থাকা বাধ্যতামূলক হলেও বাস্তবে এর প্রয়োগ নেই। অতঃপর সেল্্ফ প্রেসক্রিপশনই ভরসা। সুতরাং মৃত্যুঝুঁকি যে থেকেই যায়, সে কথা অনুমেয়। বছর দুয়েক আগে বিষাক্ত প্যারাসিটামল সিরাপ খেয়ে অর্ধশতাধিক শিশুমৃত্যুর ঘটনাটি নাড়া দিয়েছে দেশকে। অবশ্য এর জন্য দায়ী ওষুধ কোম্পানিটি সিলগালাসহ সংশ্লিষ্টদের আইনানুগ শাস্তি হয়েছে। তবু বলতেই হয় যে, ওষুধ শিল্পের বাজার একেবারেই যেন নিয়ন্ত্রণহীন, মানহীন। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এফডিএ’র আদলে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা জরুরী ও অত্যাবশ্যক।
×