ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

গুলিস্তানে অবৈধ স্থাপনা ফুটপাথের দোকান উচ্ছেদ অভিযান

প্রকাশিত: ০৪:৪৬, ২১ ডিসেম্বর ২০১৫

গুলিস্তানে অবৈধ স্থাপনা ফুটপাথের দোকান উচ্ছেদ অভিযান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অবশেষে রাজধানীর গুলিস্তানে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে নেমেছে খোদ ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। এ অভিযান একটানা ১ মাস চলবে। উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনায় কোন বাধা আসলে ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ তা মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় আইনী ব্যবস্থা গ্রহণে পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে বলে জানা গেছে। বেলা সাড়ে এগারোটা থেকে শুরু হওয়া এ অভিযান পরিচালনার সময় র‌্যাব সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। গুলিস্তান থেকে সদরঘাট পর্যন্ত সকল অবৈধ স্থাপনা এ অভিযানের মাধ্যমে দখলমুক্ত করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে। পুরানা ঢাকার যানজট স্থায়ীভাবে দূর করতে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এ বিশেষ উদ্যোগ হাতে নিয়েছে বলে জানা গেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে গুলিস্তানের গোলাপ শাহ মাজারের পশ্চিম পাশে এ উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। সিটি কর্পোরেশনের বুলডোজার দিয়ে একে একে গুঁড়িয়ে দেয়া হয় ফুটপাথে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনাগুলো। এর আগে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কয়েক দফা অভিযান চালালেও তেমন সফলতা অর্জন করতে পারেননি। বিভিন্ন সময় ডিএসসিসির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা ঢাকার অতি ব্যস্ততম এলাকা হিসেবে পরিচিত গুলিস্তান ও এর আশপাশের এলাকায় স্থাপিত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করলেও উচ্ছেদের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আবার দখলদারদের হাতে চলে যেতে দেখা গেছে। এমনও দেখা গেছে যে, একদিকে উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে অপরদিকে উচ্ছেদকৃত স্থানেই আবার অবৈধ স্থাপনা বসানো শুরু করেছে। দীর্ঘ বছরের এসব অভিযোগকে স্থায়ীভাবে দূর করতে এবার নিজেই মাঠে নেমেছেন রাজধানীর নাগরিক সেবা প্রদানকারী এ সংস্থাটির মূল কর্তা ব্যক্তি। নাগরিকদের আশা এবার হয়ত ফুটপাথ ও রাস্তাঘাটে স্থাপিত অবৈধ স্থাপনা থেকে মুক্তি পাবে রাজধানীর বাসিন্দারা। রাজধানীর অতি গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম এলাকা হিসেবে গুলিস্তান থেকে সদরঘাট সমধিক পরিচিতি। রাজধানী থেকে বাইরের বিভিন্ন জেলা শহর থেকে শুরু করে বিভাগীয় শহরে যেতে ও সেখান থেকে রাজধানীতে প্রবেশের অন্যতম রুট হিসেবে গুলিস্তানকে ব্যবহার করা হয়। দেশের অন্যতম বৃহত মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারটি গুলিস্তান এলাকায়ই অবস্থিত। চট্টগ্রাম, সিলেটসহ কয়েকটি বিভাগের যাতায়াতকারী বাস, ট্রাক, প্রাইভেটকার, কাভার্ডভ্যানসহ প্রতিদিন কয়েক হাজার যানবাহন এ ফ্লাইওভার দিয়েই যাতায়াত করতে হয়। এছাড়া ঢাকার আশপাশের নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জসহ সকল জেলা শহরের প্রধান রুট হিসেবে গুলিস্তানকেই ব্যবহার করতে হয়। শুধু এ এলাকায় যত্রতত্র অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলায় রাস্তা সংকুচিত হয়ে পড়েছে। ফলে যানবাহন চালানো তো দূরের কথা ফুটপাথ দখলে রাখায় হেঁটে চলাই কঠিন হয়ে পড়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা যানবাহন রাস্তার ওপর গড়ে তোলা অবৈধ এসব স্থাপনার কারণে গুলিস্তানের এ ফ্লাইওভার থেকে নেমে গাড়ি ঘোরাতে না পারায় রাস্তায় প্রতিদিনই দীর্ঘ যাজটের সৃষ্টি হয়। এতে দৈনিক লাখ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। এসব অবৈধ স্থাপনার অন্যতম সহায়ক শক্তি হচ্ছে স্থানীয় একশ্রেণীর নামসর্বস্ব রাজনৈতিক নেতা। নিয়মিত চাঁদা আদায়ের মাধ্যমে এসব অবৈধ স্থাপনাকে বৈধতা দেয়া হয়। দৈনিক চাঁদার একটি অংশ পুলিশের অসাধু কর্মকর্তারা সরাসরি জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এর আগে সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসকরা এসব অবৈধ স্থাপনা দূর করতে ও দখলদারদের সরাতে কমপক্ষে ১০ বার উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করলেও তা তেমন কোন কাজে আসেনি। এছাড়া ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের সংশ্লিষ্টতা থাকায় অনির্বাচিত প্রশাসকগণ তেমন সাহস দেখাননি। এই প্রথমবারের মতো কোন মেয়র নিজে এ এলাকার সকল অবৈধ স্থাপনা দখলমুক্ত করার ঘোষণা দিলেন ও তা বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছেন। অভিযান প্রসঙ্গে তবে দোকান মালিকরা অভিযোগ করেন, তাদের পূর্বঘোষণা না দিয়ে অতর্কিতে এ অভিযান চালানো হয়েছে। এতে তারা ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে। উচ্ছেদকালে এ বিষয়ে ডিএসসিসি মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন সাংবাদিকদের বলেন, গুলিস্তান থেকে সদরঘাট পর্যন্ত ফুটপাথের সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। প্রোগ্রাম বাস্তবায়নে ৩০ দিনের কর্মসূচী নিয়েছি। কারণ আপনারা জানেন, আমি সকালে উচ্ছেদ করে যাই, বিকেলে আবার বসে যায়। আমি উচ্ছেদ করি, দুই ঘণ্টা পরে বসে যাই। এর সঙ্গে কিছু রাজনৈতিক নামধারী নেতা, পুলিশের অসাধু কর্মকর্তা সম্পূর্ণভাবে জড়িত। আমি হকারদের বলেছি, এক পয়সাও কেউ চাঁদা দেবে না। রাস্তা দখল করতে দেব না। অবৈধ দখল উচ্ছেদে সংশ্লিষ্ট যা কিছু করা প্রয়োজন তাই করা হবে। দখলধারীরা যত ক্ষমতাবানই হোক না কেন তাদের ছাড় দেয়া হবে না। ডিএসসিসি এলাকাকে অবৈধ দখলমুক্ত করা ও যানজটমুক্ত করার অংশ হিসেবেই এ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে ডিএসসিসির সকল অবৈধ স্থাপনাই উচ্ছেদ করা হবে। অভিযান সফল করতে সহায়তা করার জন্য তিনি নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানান।
×