ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দাম নির্ধারণে উভয় পক্ষের ঐকমত্য হয়নি

প্রস্তুতি সত্ত্বেও ত্রিপুরা থেকে বিদ্যুত আমদানি শুরু হচ্ছে না

প্রকাশিত: ০৪:৪৬, ২১ ডিসেম্বর ২০১৫

প্রস্তুতি সত্ত্বেও ত্রিপুরা থেকে বিদ্যুত আমদানি শুরু হচ্ছে না

রশিদ মামুন ॥ ত্রিপুরা-কুমিল্লা গ্রিড লাইন বিদ্যুত সরবরাহের জন্য প্রস্তুত করা হলেও বিদ্যুত ক্রয় চুক্তি (পিপিএ) সম্পন্ন না হওয়ায় ত্রিপুরার ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানি শুরু করা যাচ্ছে না। ভারত-বাংলাদেশ উভয়পক্ষই ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে বিদ্যুত সরবরাহের বিষয়ে একমত হয়েছিল। তবে উভয় দেশ ওই সময়ের মধ্যে বিদ্যুতের দাম নির্ধারণে ঐকমত্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হওয়ায় জটিলতা তৈরি হয়েছে। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ পিজিসিবি বলছে আজ সোমবার বাংলাদেশ অংশের গ্রিড লাইন চার্জ (সরবরাহের জন্য প্রস্তুত) করা হবে আর শনিবার ভারত অংশের গ্রিড লাইন চার্জ করা হয়েছে। অর্থাৎ এখন গ্রিড লাইনটি বিদ্যুত সরবরাহ করার জন্য আজ থেকে সম্পূর্ণ প্রস্তুত হচ্ছে। পিডিবির একটি কমিটি ত্রিপুরা থেকে বিদ্যুত আমদানির জন্য কাজ করছে। ওই কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আমাদের পর্যায়ে এখন আর কিছু নেই সরকারের উচ্চপর্যায়ের সঙ্গে আলোচনার ওপর বিষয়টি নির্ভর করছে। তিনি বলেন, দুই দেশের সচিব পর্যায়ের বৈঠকের পরও বিদ্যুতের দর ঠিক করা সম্ভব হয়নি। জানতে চাইলে পিজিসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুম আল বেরুনী জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা বিতরণ লাইন প্রস্তত করেছি। কিন্তু পিপিএ না হওয়ায় বিদ্যুত সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। দুই দেশের সরকার পর্যায়ে বিষয়টি নির্ধারণ হবে বলে জানান তিনি।এখন ভারত থেকে আনা বিদ্যুতের ইউনিটপ্রতি গড় মূল্য পড়ছে চার টাকা। কিন্তু ত্রিপুরার বিদ্যুতের প্রতি কিলোওয়াট/ঘণ্টা মূল্য হিসেবে ৬ টাকা ৩৪ পয়সা (আট সেন্ট) চাওয়া হচ্ছে। গত ২৭ ও ২৮ নবেম্বর সচিব পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতি ইউনিটের জন্য ৬ সেন্ট (৪ টাকা ৭৫ পয়সা) প্রস্তাবের বিপরীতে ভারত ইউনিটপ্রতি ৯ সেন্ট (৭ টাকা ১৩ পয়সা) দাবি করে। পরে ভারত এক সেন্ট ছাড় দিতে সম্মত হয়। বাংলাদেশ-ভারত উভয়পক্ষ নিজেদের অবস্থানে অটল থাকলে বৈঠকে বিদ্যুত ক্রয় চুক্তি (পিপিএ) হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত মতৈক্য হয়নি। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, এখনও নতুন করে ভারতের সঙ্গে আলোচনার কোন দিনক্ষণ ঠিক করা যায়নি। বিদ্যুত বিভাগ থেকে চেষ্টা করা হচ্ছে ভারতের সঙ্গে আলোচনায় বসার। তবে বিদ্যুত বিভাগের সংশ্লিষ্টরা কবে নাগাদ আলোচনা হতে পারে সে বিষয়ে নিশ্চিত করতে পারেননি। বাংলাদেশ নিজের নদীতে বাঁধ দিয়ে ত্রিপুরার পালাটান বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের ভারি যন্ত্রাংশ ভারতে পৌঁছাতে সহায়তা করে। ভারত সরকার তখনই ওই প্রকল্প থেকে কৃতজ্ঞতা আর সৌহার্দ্যরে নিদর্শন হিসেবে বাংলাদেশকে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তবে কংগ্রেস সরকারের শেষ সময়ে এসে বিদ্যুত কেন্দ্রটি উৎপাদনে গেলেও বাংলাদেশকে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত দেয়ার বিষয়টি আলোচনার টেবিল থেকে অনেকটা হারিয়ে যায়। এমনকি বিদ্যুত কেন্দ্রটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও এ প্রসঙ্গটি তোলা হয়নি। তবে ত্রিপুরা এ বিষয়ে ইতিবাচক ছিল। ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার বাংলাদেশের গণমাধ্যমে বলেছিলেন, ‘কৃতজ্ঞতাস্বরূপ’ বাংলাদেশকে কেন্দ্রটি থেকে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত দেয়া হবে। তবে কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্ত না মেলায় বিষয়টি ঝুলে যায়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দায়িত্ব নেয়ার পর বাংলাদেশ ভারত বিদ্যুত খাতের যৌথ কারিগরি কমিটির বৈঠকে বিষয়টি আবারও তোলা হয়। এর পর কেন্দ্রীয় সরকারে ইতিবাচক মনোভাবের মধ্য দিয়ে বছরের গোড়ার দিকে গ্রিড লাইন নির্মাণের কাজ শুরু করে উভয় দেশ। ত্রিপুরা থেকে বিদ্যুত আনতে কুমিল্লা ও ত্রিপুরা অংশে মোট ৫৪ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন করেছে উভয় দেশ। এর মধ্যে বাংলাদেশ অংশে ২৮ কিলোমিটার এবং ভারত অংশে ২৬ কিলোমিটার লাইন নির্মাণ করা হয়েছে। নতুন এই গ্রিড লাইনটি ত্রিপুরার সুরজমনি নগর থেকে বাংলাদেশের কুমিল্লাকে সংযুক্ত করবে। বাংলাদেশ অংশের ৪০০ কেভি ক্ষমতার আন্তঃদেশীয় ২৮ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন করবে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লি. (পিজিসিবি)। ‘ত্রিপুরা (ভারত) কুমিল্লা দক্ষিণ (বাংলাদেশ) গ্রিড ইন্টারকানেকশন প্রজেক্ট’ প্রকল্পের আওতায় এই সঞ্চালন লাইন করা হয়। আর ভারতীয় অংশের লাইন নির্মাণের দায়িত্ব তাদের। এছাড়া কুমিল্লা (দক্ষিণ) সাবস্টেশন থেকে কুমিল্লা (উত্তর) সাবস্টেশন পর্যন্ত ১৩২ কেভি ডাবল সার্কিটের আরও ১৯ কিলোমিটার লাইন নির্মাণ করা হয়েছে। এখন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বহরমপুর থেকে বাংলাদেশের কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা হয়ে প্রতিদিন ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত জাতীয় গ্রিডে যোগ হচ্ছে। এর মধ্যে ভারতের সরকারী খাত থেকে প্রতিদিন ২৫০ মেগাওয়াট বেসরকারী খাত থেকে আরও ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আসছে। ভারত সরকারের কাছ থেকে আরও ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত ক্রয়ের আগ্রহ দেখিয়েছে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে ভারত সরকারের অনুমোদনের পর ভারত বাংলাদেশ ব্যাক টু ব্যাক সাবস্টেশনের অনুরূপ আরও একটি সাবস্টেশন নির্মাণের কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।
×