ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাইলেন কমিশনার শাহনেওয়াজ

অর্ধশতাধিক এমপির বিরুদ্ধে ইসিতে অভিযোগ দায়ের

প্রকাশিত: ০৪:৪০, ২১ ডিসেম্বর ২০১৫

অর্ধশতাধিক এমপির বিরুদ্ধে ইসিতে অভিযোগ দায়ের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পৌরসভা নির্বাচন সুষ্ঠু করতে এবং জনপ্রতিনিধিদের আচরণবিধি মেনে চলতে এবার প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করল নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশনার শাহ নেওয়াজ বলেন, পৌর নির্বাচন সুষ্ঠু করতে নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি ক্ষমতাসীনদেরও দায়িত্ব অনেক। একটি নির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে গিয়ে ঢালাও আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হতে পারে। এ কারণে সরকারের জনপ্রতিনিধিরা যাতে আচরণবিধি লঙ্ঘন না করে বরং আচরণবিধি অনুসরণ করে চলেন এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে। রবিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, বর্তমানে যারা সরকারে রয়েছেন, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তাদের অনুরোধ করব, তারা যেন নির্বাচনে কমিশনকে সহযোগিতা করেন। যদিও আমরা নির্বাচন কমিশন আলাদা প্রতিষ্ঠান তারপরও সরকারের থাকা অবস্থায় নির্বাচন করছি। নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে সরকারের ভাবমূর্তির প্রশ্ন উঠবে। নির্বাচিত সরকারের অধীনে ভোট করতে গিয়ে এভাবে আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনায় সরকারের ভাবমূর্তির বিষয়টিও জড়িত। আমরা বলব, যারা সরকারের আছেন, তারা অন্যদের চেয়ে বেশি দায়িত্বশীল হবেন, উল্লেখ করেন তিনি। পৌর নির্বাচন সামনে রেখে ইতোমধ্যে অর্ধশতাধিক জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে পৌর নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ দেয়া হয়েছে নির্বাচন কমিশনে। যাদের বেশিরভাগই আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি। অনেক ক্ষেত্রে মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। আইন অনুযায়ী মন্ত্রী এমপিরা দলীয় কোন প্রার্থীর পক্ষে প্রচার চালাতে পারবে না। ইতোমধ্যে ইসির পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট রিটার্র্নিং কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে। তবে ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় বিভিন্ন মহল থেকে সমালোচনা হচ্ছে। প্রধান নির্বাচন কমিশার কাজী রকিব উদ্দিন আহমেদ বলেন, জনপ্রতিনিধিদের আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পুনরায় যাতে আর কেউ আচরণবিধি লঙ্ঘন না করে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও সরকারী সুবিধাভোগী অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি অবহিত করতে ইতোমধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি দিয়েছেন ইসি সচিব। এরপরও পৌর নির্বাচনে মন্ত্রী এমপিদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠছে। বিষয়টি নিয়ে খোদ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। এছাড়াও বিএনপির পক্ষ থেকে প্রতিনিয়তই ইসির বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ আনা হচ্ছে। রবিবারও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, নির্বাচন কমিশন সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে কাজ করছে। কেবল সরকার নয়, নির্বাচন কমিশনও স্বচ্ছ নির্বাচন করতে উৎসাহী নয়। বিএনপির এ ধরনের সমালোচনার প্রেক্ষিতে শাহ নেওয়াজ সাংবাদিকদের আরও বলেন, পৌর নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘন নিয়ে বিএনপি অযথা দোষারোপ করে যাচ্ছে। ইসির বিরুদ্ধে অযথা অভিযোগ না করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনে কমিশন নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। এছাড়া অতীতে বিভিন্ন সময় নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে চেষ্টা করা হয়েছে। এখনও করছি। এরপরও কোন দল অভিযোগ করলে তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমাদের দেশে একটা নিয়ম হয়ে গেছে যারা চাপ সৃষ্টি করতে চায় তারা অযথা নির্বাচন কমিশনকে দোষারোপের চেষ্টা করে। তারা মনে করে নির্বাচন কমিশন চাপে পড়বে। আমরা বলতে চাই, কমিশন কোন চাপ সহ্য না করে তার নিজের মতোই চলবে। তিনি সরকার প্রধানের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, সরকারে যারা আছেন তারা যেন আমাদের সহযোগিতা করেন। আচরণবিধি লঙ্ঘন করে আমাদের যেন অপ্রস্তুত না করেন। নিজেরাও যেন অপ্রস্তুত না হন। তাদের একটা ভূমিকা আগেও ছিল। এবারও থাকবে বলেই আশা করি। নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতির বিষয়ে বলেন, এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হয়ে গেছে- এমন কোন কারণ তৈরি হয়নি। রিটার্নিং কর্মকর্তা যে অনিয়ম দেখেছে এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। কিছু বিধিভঙ্গ ইসির অলক্ষ্যে ঘটেছে। কিছু কিছু লোক আচরণবিধি লঙ্ঘনের চেষ্টা করছে। আগে সেগুলো লক্ষ্য করা হয়নি। এখন অভিজ্ঞতা ও পরিবেশের কারণেই হোক শক্ত ব্যবস্থা নিতে পিছপা হব না। রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সতর্ক করে বলেন, যারা আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন না তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ যতটা পাওয়ার কথা তত পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে বৈঠকে তাদের অত্যন্ত খোলামেলা করে বলা হয়েছে এটা জাতীয় দায়িত্ব। সঠিকভাবে পালন করতে হবে। তিনি বলেন, কেউ আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়টি এড়িয়ে গেলে সে যেই হোক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সন্ত্রাসীদের আটকের বিষয়ে তিনি বলেন, সন্ত্রাসীদের ধরার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। তারা তাদের দায়িত্ব পালন করবে। এ বিষয়ে আমরা নির্দেশনা দিয়েছি। উত্তরাঞ্চলে জঙ্গী হামলার আশঙ্কার বিষয়ে বলেন, আইনশৃঙ্খলা বৈঠকে গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, নির্বাচনে জঙ্গী হামলার কোন আশঙ্কা নেই। তবে আশঙ্কা সৃষ্টি হলে তারা ব্যবস্থা নেবে। ভোটকেন্দ্র দখল বিষয়ে বলেন, ভোটকেন্দ্র দখলকারী যেই হোক কাউকেই প্রশ্রয় দেয়া হবে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এ বিষয়ে কঠিন নির্দেশ দেয়া হয়েছে যেন কোন ছাড় দেয়া না হয়। ভোট কেন্দ্রে সাংবাদিক প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপে পুলিশ প্রধানের সুপারিশের বিষয়ে বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠকে সুবিধা-অসুবিধার কথা বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। তাদের এসব সুপারিশের উত্তরে বলে দেয়া হয়েছে সাংবাদিকরা ভোট কেন্দ্রে যেন এলোমেলোভাবে না যান। আগে যেভাবে যেতেন, সেভাবেই যাবেন। তবে অন্যদের সুযোগ দেবেন। কলারোয়ার রিটার্নিং অফিসার বরখাস্ত ॥ নির্বাচনী দায়িত্ব পালেন ক্ষমতার অপপ্রয়োগ ও আইনবহির্ভূত কাজ করায় খুলনার অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা কলারোয়া পৌরসভা নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার আবুল হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে নির্বাচন কমিশন। আবুল হোসেন খুলনার অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। রবিবার নির্বাচন কমিশনের এক অফিস আদেশে বলা হয়, আবুল হোসেন সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভা নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার হিসেবে ক্ষমতার অপপ্রয়োগ ও আইনবহির্ভূত কাজ করেন। তিনি আইনবহির্ভূতভাবে কলারোয়া উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলামের মনোনয়নপত্র গ্রহণ করেন। যা ক্ষমতার অপপ্রয়োগ হয়েছে। আদেশে বলা হয়, উপজেলা পরিষদের কোন পদে থেকে কোন মনোনয়ন প্রত্যাশীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ করা যায় না। আবুল হোসেন শুধু মনোনয়নপত্র গ্রহণ করেননি তাকে বৈধ প্রার্থী হিসেবেও ঘোষণা করেন।
×