ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশের মেয়েরা

হিমালয়ের কোলে বাংলাদেশের বিজয় কেতন

প্রকাশিত: ০৪:১৫, ২১ ডিসেম্বর ২০১৫

হিমালয়ের কোলে বাংলাদেশের বিজয় কেতন

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ গৌরবটা একটু দেরিতেই আসল। ভয়াবহ ভূমিকম্পের কারণে ফাইনাল না খেলেই দেশে ফিরতে হয়েছিল বাংলাদেশের কিশোরী ফুটবলারদের। তবে আট মাস পর অনুষ্ঠিত ফাইনালে দেশের জন্য গৌরব বয়ে এনেছে বাংলাদেশ অনুর্ধ ১৪ ফুটবল দল। নেপালের আর্মি গ্রাউন্ডে রবিবার এএফসি গার্লস রিজিওনাল চ্যাম্পিয়নশিপে গত আসরের শিরোপাধারী স্বাগতিক নেপালকে ১-০ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশের মেয়েরা। সকালে অনুষ্ঠিত ম্যাচে জয়সূচক গোলটি করেছেন ১৬ মিনিটের সমসয় মারিয়া মান্দা। যে কোন পর্যায়ের মহিলা ফুটবলে এই প্রথম শিরোপা জয় করে অনন্য এক ইতিহাস গড়ল। আর এমন গৌরব বয়ে আনা সম্ভব হয়েছে মহিলা ফুটবলের প্রতি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) যতœ, নিরলস চেষ্টা এবং সুযোগ-সুবিধা দেয়ার কারণে। এছাড়া কোচ হিসেবে গোলাম রব্বানী ছোটনও নিজের সর্বোচ্চটা দিয়েই মহিলা ফুটবলারদের প্রশিক্ষণ দিয়ে গেছেন। রবিবারই শিরোপা নিয়ে দেশে ফিরতে চাই দল। ভেন্যু এবং সময় বদলেছে, তবে বাংলাদেশের মেয়েরা এএফসির এ আসরে গ্রুপ পর্বে যে দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখিয়েছে সেটাতে যেন বিন্দুমাত্র ছেদ পড়েনি। গ্রুপ পর্বে ভারতের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করলেও ভুটানকে ১৬-০ গোলের বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছিল। সেমিফাইনালে শক্তিশালী ইরানকে ২-০ গোলে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে বাংলাদেশের বালিকারা। ফাইনালের প্রতিপক্ষ হিসেবে নেপালই ফেবারিট ছিল। একে তারা স্বাগতিক, এর পাশাপাশি গতবারের চ্যাম্পিয়ন। দীর্ঘ বিরতির মধ্যে চুপ করে বসে থাকেনি বাংলাদেশের বালিকা ফুটবলাররা। অনুশীলন চালিয়ে গেছে। বছরের এই সময়টাতে নেপালে তাপমাত্রা বেশ কম। তবে বাংলাদেশেও শীতকাল শুরু হয়ে যাওয়াতে ভালভাবেই নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে পেরেছে বাংলাদেশের বালিকা দল। শুক্রবার নেপালে পৌঁছে শনিবার অনুশীলনও করেছে অধিনায়ক কৃষ্ণা রানীর দল। আর এসবেরই ছাপ দেখা গেল ম্যাচের শুরু থেকে। প্রথম থেকেই স্বাগতিকদের চেপে ধরে ছিল কৃষ্ণা-সানজিদা আক্তাররা। আর সেজন্যই সুফল পেতে বেশিক্ষণ দেরি করতে হয়নি। ১৬ মিনিটের সময় গোল করে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেন মারিয়া (১-০)। প্রথমার্ধে আর কোন দলই গোল পায়নি। দ্বিতীয়ার্ধে স্বাগতিকরা চেষ্টা চালিয়ে গেছে সমতায় ফেরার। কিন্তু বাংলাদেশের কড়া রক্ষণভাগ ভেদ করে গোলের দেখা পায়নি নেপালের কিশোরীরা। শেষ পর্যন্ত জয় নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ বালিকা দল। এটাই প্রথম কোন মহিলা ফুটবলের বড় আসরে বাংলাদেশের শিরোপা জয়। এর আগে ২০১৩ সালে বাংলাদেশ অনুর্ধ ১৪ মহিলা দল শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত এই আসরে অংশ নিয়ে তৃতীয় হয়েছিল এবং ফেয়ার প্লে ট্রফি লাভ করেছিল। আর এবার হয়ে গেল চ্যাম্পিয়ন। লড়াইয়ে নেমে শিরোপা জিততে উন্মুখ ছিল উজ্জীবিত বাংলাদেশ। গত ২৫ এপ্রিল শিরোপা জয়ের আত্মবিশ্বাস নিয়েই নেপালে গিয়েছিল বাংলাদেশের মেয়েরা। কিন্তু ভয়াবহ ভূমিকম্পে ফাইনালের ভেন্যু দশরথ স্টেডিয়ামে ফাটল ধরে এবং বিপদগ্রস্ত মেয়েদের বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে করে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। সে কারণে যেন বাংলাদেশের মেয়েদের ইতিহাস গড়ার অপেক্ষাটাও দীর্ঘ হয়ে যায়। এবার ফাইনালের ভেন্যু ঠিক করা হয় কাঠমান্ডুর আর্মি গ্রাউন্ড। এখানে নামার আগেই আত্মবিশ্বাস ঝরছিল অধিনায়ক কৃষ্ণার কণ্ঠে। তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা আমাদের সামর্থ্যরে সেরাটা দিয়েই খেলব। নেপাল অবশ্যই ভাল দল। তবে ম্যাচটা জিততে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করব।’ আর কোচ গোলাম রব্বানী ভাল করেই জানেন প্রতিপক্ষ সম্পর্কে। কিন্তু যেভাবে তিনি গড়েছেন শিষ্যদের সেটার কারণেই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন তিনিও, ‘আশা করি ফাইনালে যথেষ্ট লড়াই হবে। আমরা অবশ্যই আক্রমণাত্মক মেজাজে খেলব এবং দেশবাসীর জন্য ভাল কিছু নিয়ে যাব এবং আমরাই আশা করি জিতব।’ ছোটন পেরেছেন। শিষ্যদের দিয়ে বয়ে এনেছেন গৌরব, সৃষ্টি করেছেন ইতিহাস। এ ইতিহাস আগামী দিনে বাংলাদেশ মহিলা ফুটবলের অগ্রযাত্রায় বড় অবদান রাখবে। আর বাফুফে দেশে মহিলা ফুটবলের প্রসারে এবং উন্নয়নে যে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সেটাতেও বাড়তি গতি সঞ্চারিত হবে। মহিলা ফুটবলাররাও বাড়তি অনুপ্রেরণায় উজ্জীবিত হয়ে উঠবেন।
×