ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এবার খুলনায় এলএনজিতে ৮শ’ মেও বিদ্যুত কেন্দ্র হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৭:৪৩, ২০ ডিসেম্বর ২০১৫

এবার খুলনায় এলএনজিতে ৮শ’ মেও বিদ্যুত কেন্দ্র হচ্ছে

রশিদ মামুন ॥ ভারত থেকে আমদানি করা এলএনজিতে নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি খুলনায় একটি ৮০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করতে যাচ্ছে। তরল জ্বালানিনির্ভর কেন্দ্র থেকে বিদ্যুতের দাম কম পড়বে এলএনজিতে। নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বলছে সর্বোচ্চ ১১ ডলার পড়বে প্রতি মিলিয়ন বিটিইউ এলএনজির দর। আর এই দামে এলএনজি পাওয়া গেলে প্রতি কিলোওয়াট/আওয়ার (ইউনিট) বিদ্যুতের দাম পড়বে সাত টাকা ৫০ পয়সা। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র বলছে, এখন আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দাম কমে এসেছে। জ্বালানি তেলের তুলনায় এলএনজি ব্যবহার সাশ্রয়ী। এখন জ্বালানি তেলের দাম কমার পরও তেলভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্রে প্রতিইউনিট বিদ্যুতের দাম পড়ছে ১৪ টাকা। সেখানে এলএনজি ব্যবহার করে বিদ্যুত উৎপাদন করলে খরচ অর্ধেকে নেমে আসে। দেশে তরল জ্বালানির যে বিদ্যুত কেন্দ্র রয়েছে তার সবই দ্রুত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র। সব বিদ্যুত কেন্দ্রেই কয়েকবার মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। সরকারের হাতে বিকল্প না থাকায় ভাড়ায়চালিত বিদ্যুত কেন্দ্র বন্ধ করা যাচ্ছে না। পিডিবি সূত্র বলছে, এখন বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করায় গ্যাসে উৎপাদিত বিদ্যুতে লাভ হচ্ছে। কিন্তু তরল জ্বালানিতে বিদ্যুত উৎপাদনে সরকারকে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। চলতি বছরে সরকারের বিদ্যুত খাতে ভর্তুকির পরিমাণ হতে পারে পাঁচ হাজার কোটি টাকা। গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুতের লাভের টাকা সমন্বয়ের পর আরও পাঁচ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে শুধু তেলচালিত বিদ্যুত কেন্দ্রের জন্য। গত বৃহস্পতিবারের বিদ্যুত উৎপাদন চার্ট বলছে শীতে চাহিদা কম থাকায় তেলচালিত বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো কম চালানো হচ্ছে। বৃহস্পতিবার গ্যাসচালিত কেন্দ্রগুলো থেকে ৮৬ দশমিক ৮২ মিলিয়ন কিলোওয়াট আওয়ার (ইউনিট) বিদ্যুত কিনেছে পিডিবি। অন্যদিকে একই দিন তেলচালিত কেন্দ্রগুলো থেকে সাত দশমিক ২৯ মিলিয়ন কিলোওয়াট/আওয়ার বিদ্যুত কেনা হয়েছে। কিন্তু গরমের সময় তেলচালিত বিদ্যুত কেন্দ্রগুলোকে পূর্ণ ক্ষমতায় উৎপাদন করতে হয়। গ্রীষ্মে দেখা যায়, প্রতিদিন অন্তত ৩০ থেকে ৩৫ মিলিয়ন কিলোওয়াট আওয়ার বিদ্যুত কেনা হয় তেলচালিত কেন্দ্র থেকে। শুধু জ্বালানির ধরন পরিবর্তন করলে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় করা সম্ভব। হিসাব বলছে, তেলের পরিবর্তে এলএনজি ব্যবহার করলে ভর্তুকি তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা কমানো সম্ভব। গত সপ্তাহে বিদ্যুত বিভাগের সচিব মনোয়ার হোসেন স্বাক্ষরিত একটি কার্যবিবরণীতে দেখা যায়, ভারতের এইচ এনার্জি প্রাইভেট লিমিটেড ওই এলএনজি সরবরাহ করবে। এ জন্য ভারতীয় কোম্পানিটির সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করবে নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি। ইতোমধ্যে খসড়া এমওইউ এর ওপর মতামতের (ভ্যাটিং) জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ওই চিঠিতে বলা হয়ছে, গত ১২ আগস্ট ভারত থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে এলএনজি আমদানির বিষয়ে মন্ত্রণালয় নীতিগত সম্মতি দিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি এবং এইচ এনার্জি প্রাইভেট লিমিটেড একটি খসড়া এমওইউ প্রস্তুত করেছে। সেখানে এইচ এনার্জি খুলনায় প্রস্তাবিত ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্রর জন্য এলএনজি সরবরাহে সম্মতি দিয়েছে। নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির বোর্ড সভায় গত ১৫ নবেম্বরের বৈঠকে বিষয়টির অনুমোদন দেয়া হয়। গত ৬ ডিসেম্বর বিদ্যুত সচিব মনোয়ার ইসলামের সভাপতিত্বে এক বৈঠকে মন্ত্রণালয় এমওইউটি আইন মন্ত্রণালয়ে ভ্যাটিংয়ের জন্য প্রেরণের সিদ্ধান্ত হয়। দেশে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করার প্রক্রিয়া শুরু হলেও এলএনজির সঙ্গে বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের এই প্রক্রিয়া প্রথম। বিদ্যুত কেন্দ্রটিতে বিনিয়োগের জন্য এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এডিবি এর মধ্যে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। জানতে চাইলে নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএম খোরশেদুল আলম জনকণ্ঠকে বলেন, এখন বিশ্ববাজারে এলএনজির দাম কম। আমরা সেই সুযোগ নিতে চাচ্ছি। সব মিলিয়ে এলএনজি বিদ্যুত কেন্দ্রে পৌঁছানো পর্যন্ত প্রতি ইউনিটের দর ১১ ডলার খরচ পড়বে। আমরা ধারণা করছি, এলএনজি দিয়ে বিদ্যুত উৎপাদন করলে প্রতি ইউনিটের দর পড়বে সাড়ে সাত টাকা। তিনি জানান এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) প্রকল্পে অর্থ সহায়তা দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সরকারের অনুমোদন পেলে শীঘ্র কার্যক্রম শুরু করা হবে।
×