ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ময়মনসিংহে প্রচারে এগিয়ে বিদ্রোহীরা

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ২০ ডিসেম্বর ২০১৫

ময়মনসিংহে প্রচারে এগিয়ে বিদ্রোহীরা

স্টাফ রিপোর্টার, ময়মনসিংহ ॥ মেয়র পদে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থীদের নাম ভোটারদের আলোচনায় প্রাধান্য পাচ্ছে। কেন্দ্রীয় নির্দেশ অমান্য করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থীদের নিয়ে বিব্রত দলের প্রার্থীরা। স্থানীয় ভোটারদের দাবি, অনেক পৌরসভায় এসব বিদ্রোহী প্রার্থী একটা ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াতে পারে। দলের প্রার্থীর পক্ষে নেতাকর্মী ও সমর্থকরা প্রকাশ্য মাঠে নামলেও তলে তলে অনেক নেতা দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করছেন বলে প্রচার রয়েছে। এদিকে বিএনপির একাধিক মেয়র প্রার্থী অভিযোগ করে বলেছেন, তাদের কর্মী ও সমর্থকদের ভয়ভীতিসহ হুমকি দেয়া হচ্ছে। এ নিয়ে বিএনপির মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে নানা অজানা শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে আচরণ-বিধি নিয়ে স্থানীয় নির্বাচন কমিশনের কাছে এখন পর্যন্ত কোন প্রার্থী অভিযোগ করেনি। স্থানীয় সূত্র জানায়, গত পৌরসভা নির্বাচনে গৌরীপুরে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন শফিকুল ইসলাম হবি। কিন্তু দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে এক হাজারের বেশি ভোটের ব্যবধানে জয় ছিনিয়ে নিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন বিদ্রোহী প্রার্থী সৈয়দ রফিকুল ইসলাম। এর আগে এ পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী হয়েছিলেন আব্দুল আলী। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন শফিকুল ইসলাম। এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মেয়র মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলাম। আর দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে এ পৌরসভায় আবারও বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে ভোটারদের আলোচনায় উঠে এসেছেন সাবেক মেয়র শফিকুল ইসলাম হবি। মুক্তাগাছা পৌরসভার নির্বাচনে গতবার আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে বিপুল জনসমর্থন নিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন আব্দুল হাই আকন্দ। এর আগে এ পৌরসভার মেয়র পদটি ছিল বিএনপির দখলে। এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান মেয়র আব্দুল হাই আকন্দ। আর দলের মনোনয়ন বঞ্চিত দেবাশীষ ঘোষ বাপ্পী দল থেকে পদত্যাগ করে মেয়র প্রার্থী হয়ে ভোটারদের আলোচনায় এসেছেন। যদিও এ পৌরসভার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকরা সভা করে মনোনীত প্রার্থী আব্দুল হাই আকন্দের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেছেন। প্রচার রয়েছে স্থানীয় এক প্রভাবশালী নেতা ও তার কর্মী সমর্থকরা তলে তলে মনোনীত প্রার্থীরা বিপক্ষে কাজ করছেন। আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী ও একাধিক বারের নির্বাচিত মেয়র আব্দুল আকন্দের মেয়াদে পৌর এলাকায় দৃশ্যমান উন্নয়ন কাজ না হলেও ১২ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ শুরুর প্রক্রিয়ায় রয়েছে বলে দাবি বর্তমান মেয়রের। ফুলপুর পৌরসভার নির্বাচনে এবার আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন নতুন মুখ শশধর সেন। এ পৌরসভায় দলের মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান মেয়র মোঃ শাহজাহান। এর আগেও নির্বাচনে দলের মনোনয়নে মেয়র নির্বাচিত হন ছাত্রলীগ নেতা শাহজাহান। স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটা বড় অংশের নীরব সমর্থন রয়েছে শাহজাহানের প্রতি। ভোটারদের আলোচনাতেই আছেন তিনি। ফুলবাড়িয়া পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন জামায়াত থেকে আসা ওমর ফারুক। তার বিরুদ্ধে নাশকতা ও বিস্ফোরক দ্রব্যসহ ৪টি মামলা বিচারাধীন। বিপরীতে দলের মনোনয়ন না পেয়ে মেয়র প্রার্থী হয়েছেন বিএনপির ক্লিন ইমেজের চান মাহমুদ। এর আগেও তিনি ২ বার এ পৌরসভায় মেয়র পদে নির্বাচনে করে অল্প ভোটের ব্যবধানে হেরে যান। তবে দলের মনোনয়ন বঞ্চিত ব্যবসায়ী এ বিএনপি নেতা এবার আঞ্চলিকতার প্রশ্নে ভোটারদের আলোচনায় আছেন। ঈশ্বরগঞ্জ পৌরসভায় এবার আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের সাবেক স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুস সাত্তারের শ্যালক ও একাধিক বার নির্বাচিত বর্তমান মেয়র হাবিবুর রহমান। এ নিয়ে ঈশ্বরগঞ্জের স্থানীয় রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্র প্রতিষ্ঠা নিয়ে রয়েছে নানা অসন্তোষ। এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে মেয়র প্রার্থী হয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা আব্দুছ ছাত্তার কমান্ডার ও দেলোয়ার হোসেন রিপন। এর আগেও আব্দুছ ছাত্তার মেয়র পদে নির্বাচন করে হেরে যান। তবে এবারের নির্বাচনে স্থানীয় আওয়ামী লীগের ক্ষুব্ধ একটি অংশের সমথর্নের সঙ্গে ভোটারদের সিমপ্যাথি রয়েছে ছাত্তার কমান্ডারের প্রতি। এসব নানা কারণে বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী ছাত্তার কমান্ডারের নাম এবার আলোচনায় আসছে। ত্রিশালে এবার আওয়ামী লীগ থেকে মেয়র পদে মনোনয়ন পেয়েছেন নতুন মুখ জাহিদুল ইসলাম সরকার। বিপরীতে এ পৌরসভায় দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে মেয়র প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান মেয়র এবিএম আনিছুজ্জামান। অভিযোগ রয়েছে ত্রিশালের স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেটর রেজা আলীর আর্শিবাদপুষ্ট আনিছুজ্জামান মেয়র নির্বাচিত হয়ে পৌর এলাকার উন্নয়নের বদলে নিজের ভাগ্যের উন্নয়ন করেছেন। দলের তৃণমূল নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সঙ্গেও তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের অভিযোগ রয়েছে এই প্রভাবশালী মেয়রের বিরুদ্ধে। এসব নানা কারণে মনোনয়ন বঞ্চিত হন আনিছুজ্জামান। এবারের নির্বাচনে এ্যাডভোকেট রেজা আলী ও সুবিধাবাদী আওয়ামী লীগের একটি অংশ ছাড়া আনিছুজ্জামানের পাশে নেই কেউ।
×