ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কুয়াশা ও কনকনে ঠাণ্ডায় উত্তরাঞ্চলে দুর্ভোগ, রোগবালাই বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ২০ ডিসেম্বর ২০১৫

কুয়াশা ও কনকনে ঠাণ্ডায় উত্তরাঞ্চলে দুর্ভোগ, রোগবালাই বাড়ছে

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ দেশের উত্তরাঞ্চলে ঘন কুয়াশা ও কনকনে ঠা-ায় জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে। হিমালয়ঘেঁষা নীলফামারী জেলায় বইছে শৈত্যপ্রবাহ। শনিবার কুড়িগ্রামের তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রীর নিচে নেমে আসে। তীব্র শীতে এসব জেলায় কর্মহীন হয়ে পড়েছে শ্রমজীবীরা। জমিতে কাজ করতে পারছে না কৃষকরা। হাসপাতালগুলোতে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ঘন কুয়াশা অব্যাহত থাকায় দিনের বেলায়ও হেডলাইট জ্বালিয়ে চলছে গাড়ি। গরম কাপড়ের অভাবে কষ্টে রয়েছে ছিন্নমূলরা। খবর স্টাফ রিপোর্টার। কুড়িগ্রাম ॥ ঘন কুয়াশা ও কনকনে ঠা-ায় কুড়িগ্রাম জেলার জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে। এ অবস্থায় গরম কাপড়ের অভাবে শীতকষ্টে ভুগছে দিনমজুর ও ছিন্নমূল শ্রেণীর মানুষজন। সাত দিন ধরে চলছে এ অবস্থা। দিনের বেশিরভাগ সময় সূর্যের আলো ঘন কুয়াশার চাদরে ঢেকে থাকায় দিনমুজর শ্রেণীর মানুষরা কাজে যেতে পারছে না। ফলে কর্মহীন অলস সময় কাটছে তাদের। শীতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তাসহ ১৬টি নদ-নদীর অববাহিকার দুই শতাধিক চর ও দ্বীপচরের চার লাখ মানুষ। শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচতে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন অনেকেই। গরম কাপড়ের অভাবে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছে শিশু, নারী ও বৃদ্ধরা। রেহাই পাচ্ছে না পশু-পাখিও। দিনের বেলায়ও হেডলাইট জ্বালিয়ে চলছে বাস, ট্রাকসহ ভারি যানবাহন। কুড়িগ্রাম জেলার কৃষকরা বোরো আবাদের প্রস্তুতি নিলেও কনকনে ঠা-া ও ঘন কুয়াশায় মাঠে যেতে পারছেন না। ফলে বোরো চাষ বিলম্ব হওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেকে। কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার চাকিরপাশা ইউনিয়নের কৃষক লুৎফর রহমান জানান, জমিতে বোরো চারা রোপণের সময় হয়েছে। কিন্তু অতিঠা-ায় শ্রমিকরা কাজ করতে চায় না। ফলে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। জেলা শহরের ভ্যানচালক আফজাল হোসেন জানান, বেলা ১১টা পর্যন্ত সূর্যের দেখা মেলে না। ঠা-ায় বাঁচি না। গরম কাপড়ও নাই। আয়রোজগার নাই। বাড়িত বসি আছি। বৃদ্ধা আমেনা বেগম জানান, বাবা হামরা বুড়া মানুষ। গাত দেবার কাপড় নাই। খুব ঠা-া লাগে বাবা। বাইরত বেরোবার পাং না। নীলফামারী ॥ উত্তরের হিমালয়ঘেঁষা নীলফামারীজুড়ে বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। বৃদ্ধি পেয়েছে শীতের তীব্রতা। এ অবস্থায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা খানিকটা ব্যাহত হচ্ছে। তিস্তা নদীবিধৌত জেলার ডিমলা উপজেলায় শনিবার সকাল ৯টায় তাপমাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস, যা দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা। এখানে বিকেল ৩টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এদিন এ জেলার সৈয়দপুর উপজেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস। সূত্র : সংশ্লিষ্ট আবহাওয়া অফিস। তিস্তাপাড়ের পূর্বছাতনাই ইউনিয়নের ঝাড়শিঙ্গেশ্বর এলাকার মতিন মিয়া মুঠোফোনে জানান, কনকনে শীত পড়েছে। ঘর থেকে বের হওয়া মুশকিল হয়ে পড়েছে। ওই এলাকার টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের কিছামতেরচরের বাসিন্দা কেরাম আলী খান জানান, শীতের তীব্রতায় আগুনের কু-লী জ্বালাতে হচ্ছে। এলাকার মানুষজন ক্ষেত-খামারে কাজ করতে পারেনি। কৃষকরা তাদের গবাদিপশুর গায়ে চড়িয়েছে চটের ছালা। ভ্যানচালক ফরমান আলী (৪৫) বলেন, ঠা-া বাতাসে রাস্তায় ভ্যান চালাতে কষ্ট হচ্ছে। ডিমলার খগাখড়িবাড়ি গ্রামের কৃষক ময়েন কবীর (৫০) বলেন, শীতের কারণে কৃষিজমিতে কাজে যাওয়া কষ্টকর হয়ে পড়েছে। এ কারণে স্বাভাবিক কাজের ব্যাঘাত ঘটছে। অপরদিকে ওই গ্রামের কৃষি শ্রমিক আব্দুল মালেক (২৬) বলেন, ‘শীতের কারণে কাজ কমে গেছে। আর যেটুকু মিলছে তাতে মজুরি কম আসছে। পাশাপাশি শীতবস্ত্রের অভাবে পরিবারের দুই শিশুসন্তানসহ দুর্ভোগে আছি।’ লালমনিরহাট ॥ উরাঞ্চলের জেলা লালমনিরহাটে শীতের তীব্রতায় স্বল্পআয়ের ও দিনমজুর শ্রেুণীর কৃষি শ্রমিকের জীবনে বিপর্যয় নেমে এসছে। কনকনে ঠা-ায় তারা ফসলের মাঠে ঠিকমতো কাজ করতে পারছে না। রবিশস্যের এই ভরা মৌসুমে অলস সময় কাটাতে বাধ্য হতে হচ্ছে। এতে করে জমানো অর্থ ভেঙ্গে খেতে হচ্ছে। মঙ্গা নেই। তবে প্রকৃতি বৈরী আচরণ করছে। এবার কয়েক বছরের তুলনায় অগ্রিম ঘন কুয়াশা ও কনকনে ঠা-া পড়েছে। শীত মৌসুম একটু আগে চলে এসেছে। হিমালয়ের কারণে শীত এই অঞ্চলে একটু আগে আসে। শীতের তীব্রতাও একটু বেশি। কয়েক বছরের তুলনায় এবার শীত একটু বেশি। শনিবার লালমনিরহাট জেলায় ২৪ ঘণ্টায় শীতের তীব্রতা ১৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড করেছে একটি এনজিও। শীতের তীব্রতার প্রভাব পড়েছে কৃষি ও কৃষি শ্রমের বাজারে। অতিরিক্ত শীতের কারণে মাঠে সবজি ফলাতে বেগ পেতে হচ্ছে। শীতের কারণে বোরো মৌসুমে উচ্চ ফলনশীল ধানে বীজতলায় বীজ বপন করতে পারছে না। শীতের তীব্রতায় সূর্যের আলো বীজতলায় এসে পৌঁছাতে পারে না। তাই শীতের তীব্রতায় বীজতলায় পচন ধরে যাবে। খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ খায়রুজ্জামান ম-ল বাদল জানান, খুনিয়াগাছের তিস্তা নদীর চরগুলো এখন ফসলের মাঠে ভরপুর। সবজিসহ শীতকালীন বিভিন্ন ফসল এখানে হয়। কিন্তু তীব্র শীতের কারণে কৃষক ও কৃষি শ্রমের কাজে ব্যবহৃত কৃষি শ্রমিকরা জবুথবু হয়ে আছে। ঠা-া থেকে রক্ষা পেতে অতিরিক্ত গরম কাপড় পরতে হচ্ছে। শীতের কারণে কৃষি শ্রমিক কাজে যেতে পারছে না। তাই শীতের মৌসুমে জমানো অর্থ ভেঙ্গে খেতে হচ্ছে। এখন শীত মৌসুমের মঙ্গা নেই। তবে শীতের কারণে দিনমজুর শ্রেণীর মানুষের কাছে কাজ থাকলেও প্রকৃতির বৈরী আচরণে কাজে যেতে পারছে না। এমনকি শীতের তীব্রতায় বিত্তবান ও সমাজের সচেতন মানুষ রোদস্নানে ভরদুপুরে জম্পেশ আড্ডায় মেতে উঠেছে।
×