ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

২০১৫ সালে ইইউতে শুধু নেতিবাচক খবর

ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভাঙ্গনের মুখে!

প্রকাশিত: ০৩:৪৫, ২০ ডিসেম্বর ২০১৫

ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভাঙ্গনের মুখে!

শরণার্থীর চাপ, গ্রীসের ঋণ সঙ্কট, রাশিয়ার সামরিক শক্তি প্রদর্শনী এবং রাজপথে সন্ত্রাসী হামলা সব মিলিয়ে বিদায়ী ২০১৫ সাল ইউরোপীয় ইউনিয়নকে ভেঙ্গে পড়ার মুখে ঠেলে দিয়ে গেল। ইইউর উদ্বেগের কারণস্বরূপ হাঙ্গেরি কয়েক সপ্তাহ আগে যে বেড়া নির্মাণ করেছে সেটি দেখতে গিয়েছিলেন নিউইয়র্ক টাইমসের নিবন্ধকার জিম ইয়ার্ডলিডিক। হাঙ্গেরি দক্ষিণ পাশে ১শ’ মাইলের বেশি জায়গাজুড়ে কাঁটাতারের এ বেড়া বসিয়েছে। এ বছর গ্রীষ্মকাল থেকে ইউরোপ অভিমুখে যে শরণার্থীর ঢল নেমেছে তা প্রতিরোধ করার জন্যই বসানো হয়েছে এ বেড়া। হাঙ্গেরির দক্ষিণ-পশ্চিমে অস্ট্রিয়া তার পশ্চিমে জার্মানি। জার্মানি থেকে শরণার্থীরা সাধারণত হাঙ্গেরিকে রুট হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। কাঁটাতারের বেড়ার কিছু দূর পরপরই বসানো হয়েছে চৌকি। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা সেসব চৌকিতে পালা করে দায়িত্ব পালন করছে। সার্বিয়ার সীমান্তসংলগ্ন অস্ট্রিয়ার কৃষিপ্রধান শহর আসোটালোমের মেয়র লাসজলো টরোজকাই অবশ্য কাঁটাতারের বেড়া বসানোয় খুশিই হয়েছেন। ইউরোপে উগ্র ডানপন্থী রাজনীতি যে হালে ভোটারদের আকৃষ্ট হয়েছে এ রকম একটি রাজনৈতিক দলের উদীয়মান তারকা ৩৭ বছর বয়সী টরোজকাই। কাঁটাতারের বেড়া বসানোর কয়েক মাস আগে থেকেই তিনি অভিবাসন প্রত্যাশীর আগমন ঠেকাতে উদ্যোগ নেয়ার জন্য সরকারকে বলে আসছিলেন। বেড়া দেয়ার পর টরোজকাই ইউটিউবে ‘ডার্টি হ্যারি’ (আমেরিকান এ্যাকশন থ্রিলার) অবলম্বনে কয়েকটি ভিডিও পোস্ট করেন। তিনি এতে জানিয়ে দেন, তার শহর অবৈধ অভিবাসীর থেকে পুরোপুরি মুক্ত করা হবে। শিকলের মতো এই কাঁটাতারের বেড়া টরোজকাইয়ের মতো উগ্র ডানপন্থীদের উল্লসিত করলেও এটি ইইউর স্থিতির জন্য হুমকিস্বরূপ। আধুনিক ইউরোপের বৃহৎ অর্জনগুলোর অন্যতম হলো উন্মুক্ত সীমান্ত। শেনজেন চুক্তি বলে ইউরোপ সীমান্তবিহীন রূপ পেয়েছিল। ১৯৯৫ সালে চুক্তিটি কার্যকর হয়। চুক্তিতে পর্র্যায়ক্রমে ইইউর ২৬টি দেশের বেশিরভাগ এই চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। ইউরোপীয় সংহতির ভিত্তিমূলে রয়েছে উন্মুক্ত সীমান্তের ধারণাটি। চুক্তি সম্পাদনকারীদের প্রত্যাশা ছিল এর ফলে ইউরোপে শান্তি ও স্থিতিশীলতা স্থায়ীরূপ পাবে এবং জাতীয়তাবাদের অশুভ চিন্তা দূর হবে, সমৃদ্ধ ও বৈচিত্র্যময় অর্থনীতি গড়ে উঠবে ইউরোপে। উদার ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ তুলে ধরার মাধ্যমে ইউরোপের বাইরে প্রভাব খাটাতে পারবে ইইউ। যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধংদেহী ও আগ্রাসনমূলক অর্থনৈতিক শক্তির বাইরে তুলনামূলক সহজ পশ্চিমা মূল্যবোধ তুলে ধরাই ছিল ইইউর অন্যতম লক্ষ্য। জনকল্যাণমূলক নীতির কারণে শ্রমিকরা ইউরোপের এক দেশ থেকে অনায়াসে অন্য দেশে যেতে পারত। হাঙ্গেরি দক্ষিণে যে কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছে তার সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে সার্বিয়া ও ক্রোয়েশিয়ার। এই দেশগুলো শেনজেন চুক্তির বাইরে রয়েছে। সে কারণে হাঙ্গেরির বিরুদ্ধে সরাসরি চুক্তিভঙ্গে অভিযোগ ওঠেনি ঠিকই কিন্তু দেশটির এই কাজ পুরো ইউরোপে উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে দিয়েছে। এই বেড়া অস্পষ্ট করে তুলেছে ইউরোপীয় রাজনীতির অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক সীমারেখা। শুধু তাই নয়, এই বেড়া আরও বেড়ার জন্ম দিতে পারে। সেøাভেনিয়া, ক্রোয়েশিয়ার মতো শেনজেনের বাইরে থেকে দেশগুলো বেড়া দিতে উদ্বুদ্ধ হতে পারে। এরপর অস্ট্রিয়া শ্লোভেনিয়ার দিকে তৈরি করতে পারে এ রকম বেড়া। হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবান অবশ্য বলেছেন যে, তিনি শেনজেন চুক্তি রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রয়েছেন। কিন্তু পাশাপাশি বেড়া তৈরির প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেলে শেষ পর্যন্ত ইইউর ভবিষ্যত কোন্ দিকে গড়াবে তা এখনই অনুমান করা যাচ্ছে না। এদিকে ১১ মাসের মধ্যে ফ্রান্সে দু’বার সন্ত্রাসী হামলা ঘটেছে। এসব ঘটনা ফ্রান্সের পাশাপাশি ইউরোপে মুসলিমভীতি ছড়িয়ে দিয়েছে। উগ্র দক্ষিণপন্থীরা রাজনৈতিক ফায়দা লোটার সুযোগ পেয়ে গেছেন। বেকায়দায় পড়েছেন ইউরোপের নির্ভরযোগ্য নেতা জার্মান চ্যান্সেলর এ্যাঞ্জেলা মেরকেল। গ্রীস এখনও অর্থনৈতিক সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে পারেনি। ইউক্রেন ও সিরিয়ায় সামরিক উচ্চাভিলাষ পূরণের একতরফা সুযোগ পেয়ে গেছে রাশিয়া। অন্যদিকে যুক্তরাজ্য এখন ইইউ ছাড়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। -ইন্টারন্যাশনাল নিউইয়র্ক টাইমস
×