ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ধর্মের বাণী

প্রকাশিত: ০৩:৩৯, ২০ ডিসেম্বর ২০১৫

ধর্মের বাণী

মাদ্রাসা মানেই যেমন জঙ্গীদের আস্তানা নয়, তেমনি বিভিন্ন সময়ে আটককৃত জঙ্গীবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অধিকাংশই মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষিত- এটাও অনস্বীকার্য। তবু দুয়ে দুয়ে চার মেলানো অযৌক্তিক। আজ দেশে এটা অত্যন্ত স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে পবিত্র ইসলাম ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে জঙ্গীবাদের সৃষ্টি করা হচ্ছে। বিশেষ করে মাদ্রাসার অল্পবয়সী ছাত্রদের এই মানবধ্বংসী পথে টেনে আনা হচ্ছে ধর্মকে পুঁজি করে। আর এটা করছে ধর্ম ব্যবসায়ীরা তথা ধর্মভিত্তিক রাজনীতির ধ্বজাধারীরা। বহু ধর্মভীরু মুসল্লিদেরও তারা বিভ্রান্ত করছে। ফলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বহু ধর্মভীরু মানুষ ধর্মের দোহাই দিয়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তেমনভাবে সোচ্চার হন না। অথচ ইসলাম শান্তির ধর্ম, এখানে জঙ্গীবাদের বিন্দুমাত্র স্থান নেই। আশার কথা হলো সম্প্রতি কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের ইমাম মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ পুলিশ মহাপরিদর্শকের সঙ্গে জঙ্গীবাদ প্রতিরোধ বিষয়ক এক আলোচনা সভায় একটি সুচিন্তিত ও বাস্তবসম্মত প্রস্তাব দিয়েছেন। ওই প্রস্তাব অনুযায়ী আলেম ওলামা ও পুলিশের তরফ থেকে এ সংক্রান্ত দুটি কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। সঠিক ব্যাখ্যা সংবলিত একটি বিশেষ পুস্তিকা প্রকাশ করে তা গ্রাম পর্যায়ে ছড়িয়ে দেয়ার কথা প্রস্তাবে বলা হয়েছে। দেশবাসীর কাছে গ্রহণযোগ্য ও বিজ্ঞ এক লাখ আলেম সেই পুস্তকের অনুমোদন দেবেন। এই পুস্তকের বক্তব্য মসজিদ, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে বয়ান করা হলে দেশ থেকে জঙ্গীবাদের বীজ উৎপাটন করা সম্ভব বলে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। পুলিশ প্রধান যথার্থ তথ্য দিয়ে বলেন, জঙ্গীবাদের দায়ে এখন পর্যন্ত গ্রেফতারকৃতদের অধিকাংশই জামায়াত-শিবিরের লোক। আমরা দেখেছি এ দেশকে জঙ্গীবাদী রাষ্ট্র বানানোর প্রচেষ্টা বার বার ব্যর্থ হয়েছে অতীতে। জামা’আতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ সে চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। তৎপর ছিল হিযবুত তাহরীরসহ নানা নামের দল। দেশে একযোগে ৬৩ জেলায় বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল। পহেলা বৈশাখে রমনার বটমূলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে, উদীচীর অনুষ্ঠানে, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, যশোরসহ বিভিন্ন স্থানে বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল। এমনকি হযরত শাহজালালের মাজারে, বিচারালয়ে ও শিক্ষাঙ্গনে বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল। শায়খ আবদুর রহমান ও বাংলা ভাইয়ের ভয়ঙ্কর জঙ্গী কর্মকা- জনগণকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছিল। বর্তমানে পরিস্থিতি অতটা প্রকট নয়। যদিও সম্প্রতি দেশে জঙ্গীদের এমন কিছু তৎপরতার সংবাদ গণমাধ্যমে এসেছে যা জানিয়ে দিচ্ছে জঙ্গীরা তাদের কৌশল পরিবর্তনের মাধ্যমে মানবতাবিনাশী কর্মকা- অব্যাহত রেখেছে। শুক্রবারে পতেঙ্গার একটি মসজিদে বোমাহামলা চালিয়েছে জঙ্গীরা। মানুষ শান্তি চায়। হানাহানি কারও কাম্য নয়। বাংলাদেশকে জঙ্গীরাষ্ট্রে পরিণত করার লক্ষ্যে একাত্তরের পরাজিত শক্তির যে কোন চেষ্টা ব্যর্থ করতে দল ও মতের উর্ধে উঠে স্বাধীনতার পক্ষের সকল শক্তিকে তথা দেশবাসীকে সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকাজ সম্পন্ন হতে এখনও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। আগামীতে যত বাধাই আসুক বাংলাদেশ তার পথের কাঁটা সরিয়ে শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে- এমনই প্রত্যয় ও সঙ্কল্প দেশবাসীর। বাংলাদেশে জঙ্গীবাদের কোনও স্থান নেই। মাদ্রাসাগুলোতে এবং মসজিদে নিয়মিত ধর্মের বাণী তথা জঙ্গীবাদবিরোধী বয়ান দেয়া হলে অবশ্যই তা কার্যকর ভূমিকা রাখবে। সাধারণ মানুষ বুঝতে সমর্থ হবে রাজনৈতিক স্বার্থে জঙ্গীবাদ উস্কে দেয়ার জন্যই ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা প্রদান করা হচ্ছে।
×