ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মজাই কাল হলো শিখ নাবালকের

প্রকাশিত: ১৭:৪০, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৫

মজাই কাল হলো শিখ নাবালকের

অনলাইন ডেস্ক ॥ সামান্য মজা থেকেই শুরু হয়েছিল ঘটনাটা। ছেলেটার ব্যাগে ছিল একটা ব্যাটারি চার্জার। দেখতে ঠিক বোমার মতো! আর সেটা নিয়েই বন্ধুর সঙ্গে মজা করছিল সপ্তম শ্রেণিতে পড়া ছেলেটা। কিন্তু তখনও সে জানত না যে, এর কী পরিণতি হতে চলেছে। এর পরে রোজকার মতো স্কুলও শুরু হয়ে যায়। তবে মাঝপথেই থেমে যায় ক্লাস। কারণ তখন দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে পুলিশ। আর কোনও কিছু বুঝে ওঠার আগেই ক্লাস ফাঁকা করে জেরা করতে শুরু করে ছেলেটাকে। এর পরেই তার বাবা-মাকে না জানিয়েই তাকে স্কুল থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় পুলিশ। গত শুক্রবারের ঘটনা। টেক্সাসের আরলিংটন শহরের নিকোলস‌্ জুনিয়র হাইস্কুল থেকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল শিখ নাবালক আরমান সিংহ সরাইকে। তবে ঘটনার কথা সামনে আসে এ সপ্তাহেই। যখন আরমানের এক তুতো দিদি গোটা ঘটনার কথা জানিয়ে ফেসবুকে একটি লম্বা পোস্ট করেন। সেই সঙ্গে, পুলিশ প্রশাসন এবং স্কুল কর্তৃপক্ষের কড়া নিন্দাও করেন তিনি। সেই পোস্ট মুহূর্তের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়ে। সামনে আসে গোটা ঘটনাটা। ধরে নিয়ে যাওয়ার পরও কিছু বুঝে উঠতে পারছিল না আরমান। কারণ তাকে যে বলাই হয়নি, তার অপরাধটা কী। তখন পুলিশই জানায়, স্কুলে সন্ত্রাস ছড়াচ্ছিল আরমান। সেই আশঙ্কাতেই গ্রেফতার করা হয়েছে তাকে। কারণ সাম্প্রতিক কালে বেশ কিছু মার্কিন স্কুলে হামলার ঘটনা ঘটেছে। তাই এ ধরনের ঘটনায় সব সময় তৎপর থাকে পুলিশ। এমনটাই জানিয়েছে তারা। আর এই ঘটনায় সেই আহমেদ মহম্মদের ছায়া দেখছে পুলিশ। মাস কয়েক আগেই স্কুলে একটি ঘড়ি বানাচ্ছিল আহমেদ। আর সেটাকে বোমা বলে ভুল করেছিলেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। সে ক্ষেত্রেও গ্রেফতার করা হয়েছিল আহমেদকে। আর আরমানের ক্ষেত্রেও অভিযোগটা প্রায় একই রকম। পুলিশ জানায়, প্রথমে মনে হয়েছিল, বছর বারোর ওই কিশোর বোমা মেরে উড়িয়ে দিতে চেয়েছিল স্কুলটাকে। পরে অবশ্য ভুল ভাঙে। পুলিশ এবং স্কুল কর্তৃপক্ষ বুঝতে পারেন, মজা করেই কথাটা বলেছে আরমান। কিন্তু তাতে কী? এর জেরে ছোট্ট ছেলেটাকে তিন দিন কাটাতে হয়েছে জুভেনাইল ডিটেনশন সেন্টারে। পাশাপাশি, স্কুল থেকেও তিন দিনের জন্য আরমানকে সাসপেন্ড করা হয়েছিল। আরমানের স্কুলের তরফে সে রকম কিছুই জানানো হয়নি। তবে পুলিশ জানিয়েছে, বারবার এমন ধরনের ঘটনা ঘটছে। তাই নিরাপত্তা এবং সতর্কতার জন্যই এই সিদ্ধান্ত। তাদের দাবি, আরমান পুলিশকে জানিয়েছে, সে-ই স্কুলে এসে মজার ছলেই বন্ধুকে জানিয়েছিল, তার ব্যাগে একটি বোমা রয়েছে। ভবিষ্যতে কেউ যাতে বোমা নিয়ে এ ধরনের আতঙ্ক না ছড়ায়, তার জন্যই ধরা হয়েছে ওই নাবালককে। এ দিকে, আরমানের পরিবারের দাবি, এই ঘটনার পিছনে রয়েছে আরমানেরই এক বন্ধু। সে-ই এই মজা করেছিল। একই দাবি করেছে আরমানও। সে জানাচ্ছে, গত বৃহস্পতিবার তার ব্যাগে একটি ব্যাটারি চার্জার দেখে তার বন্ধু বলেছিল, ‘‘বাঃ! এটা দেখতে তো বেশ বোমার মতো।’’ এ নিয়ে দু’জনের মধ্যে বেশ হাসাহাসিও হয়েছিল। এর ঠিক পরের দিনই ওই বন্ধুটি আরমানকে জানিয়েছিল, সে গিয়ে শিক্ষককে জানাবে যে, আরমানের ব্যাগে একটি বোমা রয়েছে। এর পরেই ক্লাস শুরু হয়ে যায়। তবে মাঝপথেই পড়া থামাতে বাধ্য হন শিক্ষক। কারণ পুলিশ এসে ধরে নিয়ে যায় তাকে। আরমানের অভিযোগ, তার বাবা-মা-কে না জানিয়েই স্কুল কর্তৃপক্ষ পুলিশ ডেকেছিলেন। আর অভিভাবকের অনুপস্থিতিতেই পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে শুরু করে। এর পরেই হাতকড়া পরিয়ে জুভেনাইল ডিটেনশন সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। তখনও ঘটনার কথা বিন্দুমাত্র জানতেন না পরিবারের সদস্যরা। আরমানের বাবা-মা জানাচ্ছেন, ছেলে স্কুল থেকে বাড়ি না ফেরায় প্রথমে অ্যাপার্টমেন্টে চত্বরে খোঁজ করেন তাঁরা। পরে স্কুলে ফোন করে জানতে পারেন, পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়েছে আরমানকে। তাঁদের অভিযোগ, ‘‘আরমান এমনিতেই অসুস্থ। হৃৎপিণ্ডে তিন-তিন বার অস্ত্রোপচারও হয়েছে ছেলেটার। ফলে ওর উপর এই ঘটনার কী প্রভাব পড়বে, সেটা নিয়েই চিন্তিত আমরা।’’ ঠাকুরমা-ঠাকুর্দা, বাবা-মা এবং তিন ভাই-বোনের সঙ্গে গ্র্যান্ড প্রেইরিতে একটি ছোট্ট অ্যাপার্টমেন্টে থাকে আরমান। পরিবার সূত্রে খবর, ১৯৯৭ সালে ভারত থেকে আরমানের পরিবার মার্কিন মুলুকে পাড়ি দিয়েছিল। তার পর থেকে সান অ্যান্তোনিওতেই তারা বসবাস করতে শুরু করে। মাত্র চার মাস আগেই সেখান থেকে গ্র্যান্ড প্রেইরিতে এসেছে পরিবারটি। ভবিষ্যতে বড় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন দেখে ছোট্ট ছেলেটা। যদিও এই ঘটনার পর যে আরমানের স্বপ্নটার কী হবে, তা নিয়ে চিন্তায় পরিবার। আর ছোট্ট ছেলেটার স্বপ্ন পূরণ করতে বেশি রোজগারের আশায় আরমানের মা গুরদীপ কৌরই গ্র্যান্ড প্রেইরিতে আসার সিদ্ধান্তটা নিয়েছিলেন। তাই ঘটনার পর তাঁর আফশোস, ‘‘কেন যে এই সিদ্ধান্তটা নিতে গিয়েছিলাম!’’ সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা
×