ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এএফসি অনুর্ধ ১৪ গার্লস রিজিওনাল চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল

ইতিহাস সমৃদ্ধ করতে কাঠমান্ডুতে ছোটনের শিষ্যরা

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৫

ইতিহাস সমৃদ্ধ করতে কাঠমান্ডুতে ছোটনের শিষ্যরা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ এটা অস্বীকার করার উপায় নেই, তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশের পুরুষ ফুটবলের চেয়ে মহিলা ফুটবল অনেক দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। এবার আরেকটু এগুনোর পালা। ফাইনালে উঠে আগেই গড়া হয়ে গেছে ইতিহাস। এখন আর হারানোর কিছু নেই। ফাইনালে জিততে পারলে ইতিহাসটা হবে আরও গৌরবময়, আরও সমৃদ্ধ। আর সে লক্ষ্যেই এএফসি অনুর্ধ ১৪ গার্লস রিজিওনাল চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল খেলতে শুক্রবার নেপালের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছে বাংলাদেশ অনুর্ধ ১৪ জাতীয় বালিকা দল। দেশ ছাড়ার আগে শিরোপা জয়ের প্রত্যয়ের কথা জানান দলের কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। শুক্রবার বেলা ২টায় বিমানযোগে কাঠমান্ডুর উদ্দেশে রওনা হয় কৃষ্ণা-সানজিদারা। নির্ধারিত সময়ের আগেই হযরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে যায় ছোটনের শিষ্যরা। এ সময় বিমানবন্দরে কোচ বলেন, ‘প্রস্তুতি অনেক ভাল থাকায় শিরোপা জয়ের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী আমার দল মেয়েরা।’ কোচের সঙ্গে সুর মেলায় দলের অধিনায়ক কৃষ্ণা রানী সরকারও। আগামী রবিবার নেপালের কাঠমান্ডুর আর্মি গ্রাউন্ডে ফাইনালে স্বাগতিক নেপালের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। উল্লেখ্য, যে কোন পর্যায়ের মহিলা ফুটবলের আসরে এই প্রথম বাংলাদেশ ফাইনাল খেলতে যাচ্ছে। উল্লেখ্য, গত ২৫ এপ্রিলে আয়োজক নেপালের বিপক্ষে এই ফাইনালের আগের দিন ভয়াবহ ভূমিকম্প সংঘটিত হয়। ব্যাপক প্রাণহানি ঘটে এবং ক্ষয়-ক্ষতি হয়। ফাইনালের ভেন্যু দশরথ স্টেডিয়ামের একটি অংশে ফাটল ধরে। ফলে সে সময় ফাইনাল খেলাটি আর অনুষ্ঠিত হয়নি। এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন আবারও এই ফাইনালটির দিনক্ষণ নির্ধারণ করে গত ২ ডিসেম্বর। গত এপ্রিলে নেপাল সফরে বাংলাদেশ দলে যেসব খেলোয়াড়রা ছিল, তাদের সবাই আছে বর্তমান স্কোয়াডে। তারা কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের অধীনে অনুশীলন করেছে। নেপালে গত এপ্রিলে দুর্দান্ত খেলেছিল বাংলাদেশের মেয়েরা। এর আগে ২০১৩ সালে বাংলাদেশ অনুর্ধ ১৪ মহিলা দল শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত এই আসরে অংশ নিয়ে তৃতীয় হয়েছিল এবং ফেয়ার প্লে ট্রফি লাভ করেছিল। তার মানে এবার তারা নিশ্চিতভাবেই টপকে গেছে আগের বারের সাফল্যকে। পারফর্ম এবং যোগ্যতা প্রদর্শন করেই এই আসরের ফাইনালে নাম লিখিয়েছে বাংলাদেশ দল। ওই টুর্নামেন্টে ফাইনালের আগ পর্যন্ত সানজিদারা দুর্দান্ত খেলে। যদিও মাঝে আট মাসের লম্বা বিরতি পড়েছিল, তারপরও অনুশীলন ক্যাম্প চালু থাকায় দলের ফুটবলাররা তাদের সেই আগের ফর্ম-ফিটনেস ধরে রাখতে সক্ষম হয়। তাছাড়া এই সময়ের মধ্যে তারা একাধিক ঘরোয়া টুর্নামেন্টও খেলে। ফলে তারা খেলার মধ্যেই ছিল। টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ দলে গ্রুপে ভারতের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করে এবং ভুটানকে ১৬-০ গোলে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়। এই ধরনের টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ দল আগে কখনও গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। সেমিতে ইরানকে ২-০ গোলে হারায়। পক্ষান্তরে সেমিতে নেপাল ভারতকে হারায়। উল্লেখ্য, এই আসরে এর আগে বাংলাদেশ কখনও নেপালের মুখোমুখি হয়নি। দলের কোচ ছোটন বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতির ‘বিএসপিএ স্পোর্টস এ্যাওয়ার্ড’-এ ২০১৪ সালের জন্য ফুটবল কোচ হিসেবে মনোনীত হয়েছেন। ছোটন এক সময় ছিলেন কৃতী ফুটবলার। ১৯৮৮-২০০২ পর্যন্ত খেলেছেন আরামবাগ, ফকিরেরপুল, ওয়ারী ও বিআরটিসির হয়ে। অধিনায়কত্বও করেছেন প্রতি দলেরই। মজার বিষয়Ñ খেলোয়াড়ি জীবন চলাকালেই কোচিং ক্যারিয়ার শুরু করেন তিনি! ২০০৬ সালে বাফুফে কোচ হিসেবে চাকরি হয় তার। ২০০৮ সালে মারদেকা কাপে জাতীয় ফুটবল দলের সহকারী কোচের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১০ এসএ গেমসে তাম্রপদক জেতা বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা দলেরও সহকারী কোচ ছিলেন ছোটন। মেয়েদের বয়সভিত্তিক দলের সঙ্গে ২০০৯ সাল থেকেই সম্পৃক্ত ছোটন। আর জাতীয় বা সিনিয়র দলের সঙ্গে আছেন ২০১০ থেকে। সাফ গেমস, অলিম্পিক বাছাইপর্ব, সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ, এসএ গেমসÑ প্রতি আসরেই দলের সঙ্গে ছিলেন সাবেক ফুটবলার ছোটন। বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে এক ফিফা ফ্রেন্ডলি ম্যাচে নেপাল জাতীয় ফুটবল দলকে ১-০ গোলে হারিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। এবার নেপাল অনুর্ধ ১৪ বালিকা দলকে কি তাদের মাটিতে হারিয়ে ইতিহাসকে আরও সমৃদ্ধ করতে পারবে ছোটনের শিষ্যরা? বাংলাদেশ অনুর্ধ ১৪ বালিকা ফুটবল দল ॥ গোলরক্ষক- তাসলিমা, মাহমুদা আক্তার, রূপা; ডিফেন্ডার- শামসুন নাহার, রুমা আক্তার, শিউলি আজিম, নার্গিস খাতুন, নাজমা, জোৎস্না; মিডফিল্ডার- রাজিয়া খাতুন, সানজিদা আক্তার, মিরশাত জাহান মৌসুমী (সহ-অধিনায়ক), কৃষ্ণ রানী সরকার (অধিনায়ক), মারিয়া মান্দা, তহুরা খাতুন, মনিকা চাকমা; ফরোয়ার্ড- মারজিয়া ও সিরাত জাহান স্বপ্না।
×