ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক শেখ রিয়াজ বিনা চিকিৎসায় মরতে বসেছেন

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৫

মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক  শেখ রিয়াজ বিনা  চিকিৎসায় মরতে  বসেছেন

বাবুল হোসেন, ময়মনসিংহ থেকে ॥ বিজয়ের মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমার জীবনের শেষ চাওয়া- ‘চিকিৎসার একটা সুব্যবস্থা করে দিন’। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও একাত্তরে আগরতলা সোনার বাংলা ইয়থ ক্যাম্পের ইনচার্জ, ভাষা সৈনিক, অধ্যাপক শেখ রিয়াজ উদ্দিন আহমদ জীবনের শেষ সময়ে এসে প্রধানমন্ত্রীর কাছে এভাবেই তার চিকিৎসার জন্য আকুতি জানিয়েছেন। টানা এক বছর ধরে তিনি কিডনি, ডায়াবেটিস ও হার্টসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে শহরের আলিয়া মাদ্রাসা রোডে পালপাড়ার বাসায় বিছানায় পড়ে আছেন। শেখ রিয়াজ বলেন, ‘আমার বিশ্বাস প্রধানমন্ত্রী খবরটি জানতে পারলে উন্নত চিকিৎসার একটা নিশ্চিত ব্যবস্থা হয়ে যাবে’। প্রয়োজনীয় অর্থাভাবে যথাযথ চিকিৎসা করাতে পারছেন না অধ্যাপক শেখ রিয়াজ। ফলে গত এক বছর ধরে স্রেফ বিছানায় পড়ে আছেন তিনি। সহায়সম্বল বলতে মাথাগোঁজার একটু ঠাঁই রয়েছে তার। কিন্তু পরিবারে নেই কোন উপার্জনক্ষম সদস্য। অশীতিপর অধ্যাপক শেখ রিয়াজের দাবি, প্রধানমন্ত্রী আমাকে ভাল করে চেনেন, জানেন। খোদ জাতির পিতার সঙ্গে আমার ভাল সম্পর্ক ছিল- এ কথা অস্বীকার করতে পারবেন না তিনি। প্রয়োজনীয় অর্থ ও চিকিৎসাসেবার অভাবে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা এই মুক্তিযোদ্ধা আক্ষেপ করে আরও জানান, এরকম অবহেলা আর অবমাননাকর অবস্থায় কোন মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যু কাম্য হতে পারে না। এক বছর ধরে আমি অসুস্থ, বিছানায় পড়ে আছি। প্রয়োজনীয় ওষুধ নেই, খাওয়া নেই! অথচ সরকার, স্থানীয় প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও রাজনৈতিক সহকর্মী-কেউই আমার খোঁজ নিচ্ছে না। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ পরিবারের সদস্যসহ স্থানীয় সহযোদ্ধারা। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ময়মনসিংহ জেলা ইউনিটের কমান্ডার আনোয়ার হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, চোখের সামনে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার বিনা চিকিৎসায় ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাওয়া মেনে নেয়া যায় না। মুক্তিযোদ্ধার প্রতি এমন অবজ্ঞা লজ্জা ও দুঃখজনক। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা এ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, আমরা ব্যর্থ যে, প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই খবরটি পৌঁছাতে পারিনি। ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মুস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকীর দাবি, অধ্যাপক শেখ রিয়াজের আবেদনটি প্রধানমন্ত্রী বরাবর পাঠানো হয়েছে। ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার চামর্থা গ্রামের মৃত ওয়াহেদ আলী মাস্টারের পুত্র অধ্যাপক শেখ রিয়াজ উদ্দিন আহমদ চলতি বছরের গত ৮ মার্চ উন্নত চিকিৎসার জন্য স্থানীয় জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সাহায্যের আবেদন করেছিলেন। কিন্তু গত নয় মাসেও তার ভাগ্যে কোন আর্থিক সাহায্য জোটেনি। পুত্রবধূ শাহীদা রানু জানান, বাথরুমে পড়ে গিয়ে তার একটি পা ভেঙ্গে গেছে, অর্থাভাবে পায়ের কোন চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়নি। স্ত্রী ফাতেমা জানান, বর্তমানে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে না পারায় বিছানাতেই চলছে সব। মুখে কোন খাবার খেতে পারছেন না বলে নাকে নল দিয়ে খাওয়ানো হচ্ছে তাকে তরল খাবার। এ নিয়ে পরিবারের সদস্যরা হতাশ হয়ে ভেঙ্গে পড়েছেন। স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, অধ্যাপক শেখ রিয়াজ উদ্দিন স্কুল জীবনেই ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের ছাত্রলীগের জিএস ও পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের নানা দায়িত্ব পালন করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের পর দেশ মাতৃকার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেন। এর আগে ভাষা আন্দোলনে যোগ দিয়ে পুলিশের গ্রেফতার এড়াতে টানা দুই বছর ছিলেন আত্মগোপনে। স্কুলে ৫ বছর ও কলেজে ৩০ বছরের অধ্যাপনা শেষে অবসর নিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু ও গফরগাঁওয়ের ইতিহাস ঐতিহ্যসহ নানা বিষয়ে লিখেছেন বেশ কয়েকটি বই।
×