ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শীঘ্রই কর্মসূচী চূড়ান্ত হবে

পৌর নির্বাচনে কারচুপি হলে আন্দোলনে যাবে বিএনপি

প্রকাশিত: ০৫:২২, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৫

পৌর নির্বাচনে কারচুপি হলে আন্দোলনে যাবে বিএনপি

শরীফুল ইসলাম ॥ আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে কারচুপি হলে আন্দোলনে যাবে বিএনপি। ইতোমধ্যেই আন্দোলনের বিষয়ে দলের বিভিন্ন পর্যায়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। আন্দোলনের ধরন কি হবে তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে সম্ভাব্য কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে হরতাল এবং সারাদেশের সকল পৌরসভা, উপজেলা, জেলা ও মহানগর পর্যায়ে বিক্ষোভ। শীঘ্রই দলীয় ফোরাম ও ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে বৈঠক করে এ কর্মসূচী চূড়ান্ত করা হবে। সূত্র মতে, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে আর কোন নির্বাচনে অংশ নেবে না এমন কথা জোরেশোরে বলে আসলেও আন্দোলনের স্বার্থেই আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নিয়েছে বিএনপি। আর এ কারণেই নির্বাচনের আগে দফায় দফায় নির্বাচন কমিশনে গিয়ে বেশ কিছু অভিযোগ উত্থাপন করে রেখেছে দলটি। সেই সঙ্গে প্রতিদিনই সংবাদ সম্মেলন কিংবা সভা-সমাবেশ করে দলের নেতারা এ নির্বাচনে ভোট কারচুপি হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। সম্প্রতি বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠক ও ২০ দলীয় জোটের বৈঠকেও পৌরসভা নির্বাচনে কারচুপি হলে আন্দোলনের বিষয়টি আলোচনায় আসে। এতে আন্দোলনের ধরন ঠিক করা না হলেও সারাদেশে হরতাল ও বিক্ষোভ কর্মসূচী পালনের বিষয়টি আলোচনায় প্রাধান্য পেয়েছে এবং কর্মসূচী চূড়ান্ত করার দায়িত্ব খালেদা জিয়াকে দেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। জানা যায়, আসছে ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তিকে কেন্দ্র করে আন্দোলনের কি কর্মসূচী হাতে নেয়া যায় তা অনেক আগে থেকেই চিন্তাভাবনা করে আসছিল বিএনপি হাইকমান্ড। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রথম বর্ষপূর্তিকে কেন্দ্র করে টানা ৯২ দিনের অবরোধ ও দফায় দফায় হরতাল কর্মসূচী ব্যর্থ হওয়ার পর দলের নাজুক পরিস্থিতিতে যেখানে স্বাভাবিক সাংগঠনিক কর্মসূচীই সফল করতে পারছে না সেখানে কি করে আবার সরকারবিরোধী আন্দোলন হবে এ নিয়ে মহাটেনশনে ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ দলের সিনিয়র নেতারা। আসন্ন পৌরসভা নির্বাচন বিএনপিকে সে সুযোগ তৈরি করে দেয়। কারণ ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সারাদেশের ৩৩৪টি পৌরসভার নির্বাচন। এর ৫ দিন পরই দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ২ বছর পূর্তি। সূত্র মতে, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সবসময়ই যে দল রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকে সে দল কম-বেশি কারচুপির আশ্রয় নেয়। আর এবারের পৌরসভা নির্বাচনেও এমনটি হবে ধরে নিয়েই সরকারবিরোধী আন্দোলনের কথা ভাবছে বিএনপি। আর এ নির্বাচনে কোথায় কি ধরনের অনিয়ম হয় তা পর্যবেক্ষণ করতে ইতোমধ্যেই কেন্দ্রীয় ও বিভাগীয় পর্যায়ে সমন্বয় কমিটি গঠন করেছে বিএনপি। এ পর্যবেক্ষণ অনুসারে কারচুপির কোন অভিযোগ থাকলে তা নিয়ে নির্বাচনের পরদিন থেকে সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন শুরু করবে বিএনপি। আর এ কর্মসূচীকে কেন্দ্র করে দলের নেতাকর্মীদের ওপর আঘাত এলে ৫ জানুয়ারিকে সামনে রেখে আন্দোলন বেগবান করতে হরতালসহ আরও কিছু কর্মসূচী দেবে তারা। আর এ কর্মসূচী সফল করতে ২০ দলীয় জোটের শরিকদেরও সঙ্গে নেয়া হবে। প্রসঙ্গত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরদার করার কৌশল নেয় বিএনপি। কিন্তু বিএনপি নেতাকর্মীদের প্রতি সরকারের কঠোর নজরদারির কারণে তারা আন্দোলনের ক্ষেত্র তৈরি করতে ব্যর্থ হয়। এরপর দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রথম বছর পূর্তিকে টার্গেট করে আন্দোলনের পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে ৬ জানুয়ারি থেকে দেশব্যাপী লাগাতার অবরোধ কর্মসূচী শুরু করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। টানা ৯২ দিনের অবরোধ ও দফায় দফায় হরতাল পালন করতে গিয়ে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেও সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থানের কারণে সে আন্দোলনে ব্যর্থ হয় বিএনপি জোট। কিন্তু এ আন্দোলনে পেট্রোলবোমাসহ বিভিন্ন নাশকতামূলক কর্মকা-ে শতাধিক মানুষ নিহত হওয়ার বিষয়টিকে ভাল চোখে দেখেনি দেশ-বিদেশের মানুষ। আর এজন্যই এ আন্দোলনের পর রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা হয়ে পড়ে বিএনপি। রাজনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর কৌশল হিসেবে এক পর্যায়ে সারাদেশের সকল পর্যায়ে দল পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। ৯ আগস্ট কেন্দ্র থেকে সারাদেশের সকল সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে চিঠি দিয়ে এক মাসের মধ্যে তৃণমূল পর্যায়ে কমিটি পুনর্গঠন কাজ শেষ করতে বলা হয়। এরই মধ্যে ১৫ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়া লন্ডন সফরে যান। তাঁর লন্ডনে যাবার পর দলের সর্বস্তরে পুনর্গঠন প্রক্রিয়া থেমে যায়। এমতাবস্থায় ২১ নবেম্বর খালেদা জিয়া দেশে ফিরে পৌরসভা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সক্রিয় করে এগিয়ে যাওয়ার কৌশল নেন। আর এ নির্বাচনে কারচুপি হবে এমন সম্ভাবনাকে সামনে রেখেই তিনি আবার সরকারবিরোধী আন্দোলনের কথা চিন্তা করেন। বিএনপি মনে করে ৩০ ডিসেম্বর দলীয় প্রতীকে পৌরসভা নির্বাচনে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে দলের আত্মগোপনে থাকা, নিষ্ক্রিয় ও হতাশাগ্রস্ত নেতাকর্মীদের মধ্যে একটি বড় অংশ রাজনীতিতে সক্রিয় হবে। কারণ নিজ নিজ এলাকায় রাজনৈতিক অবস্থান ধরে রাখতে তারা মাঠে নামবেন। আর সরকারী দল প্রশাসনের সহায়তায় নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে ভোট কারচুপির চেষ্টা করলে বিএনপি নেতাকর্মীরাও এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে। আর এ সুযোগে আন্দোলন কর্মসূচী দিলে তা সফল করতে জোরালো চেষ্টা চালানো যাবে। সম্প্রতি দলীয় এক অনুষ্ঠানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের দেয়া বক্তব্য থেকেই স্পষ্টতই বোঝা যায় দলটি পৌরসভা নির্বাচনের পর আন্দোলনে যাবে। ওই অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, পৌরসভা নির্বাচনে কারচুপি হবে জেনেও আমরা নীল নকশার একটা নির্বাচনে যাচ্ছি। কারণ একটাই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিকল্প কোন পথ না থাকায় নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের মানুষের গণতন্ত্রের অধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে। তিনি অভিযোগ করেন, এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভরাডুবি জেনেই বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর দমন-পীড়ন চালাচ্ছে সরকার। পৌর নির্বাচনের ইশতেহার ঘোষণার পরও সারাদেশ বিএনপির ১০ হাজার নেতকর্মীকে আটক করা হয়েছে। দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ফখরুল বলেন, মানুষ তাদের অধিকার ফিরে পেতে সাত বছর ধরে আন্দোলন করছে। এ আন্দোলনকে আর ও বেগবান করতে হবে। তবে আন্দোলনে ব্যর্থতা আসতে পারে, কিন্তু আমাদের থেমে থাকলে চলবে না। আন্দোলনের মধ্য দিয়েই নির্দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন দিতে ক্ষমতাসীনদের বাধ্য করতে হবে। বিএনপি সরকার পরিবর্তনে বিশ্বাসী। তাই পৌর নির্বাাচনে অংশ নিয়ে বিএনপি সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা দেখতে চাই সরকার ও নির্বাচন কমিশন কি করে। এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, আমরা এখন পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের বিজয়ী করতে কাজ করে যাচ্ছি। তবে আমরা সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে বলছি যেন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়। তা না হলে আমরা অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা গ্রহণ করব। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান বলেন, আমরা নির্বাচন কমিশনকে বার বার বলেছি যেন তারা সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন। সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবর্তে সরকারী দল কারচুপির আশ্রয় নিলে আমরা আন্দোলন করেই এর প্রতিবাদ করব। তাই আশা করছি সরকার ও নির্বাচন কমিশন গণতন্ত্রের স্বার্থে আসন্ন পৌরসভা নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করবেন।
×