ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মৃদু শৈত্যপ্রবাহ

জেঁকে বসেছে শীত, হাল্কা বৃষ্টিতে বেড়েছে তীব্রতা

প্রকাশিত: ০৫:২০, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৫

জেঁকে বসেছে শীত, হাল্কা বৃষ্টিতে বেড়েছে তীব্রতা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশে জেঁকে বসেছে শীত। দেরিতে আসা উত্তুরে হাওয়ার জমানো ঠা-া যেন একেবারে হামলে পড়েছে। শীতের থাবায় হাড়ে কাঁপুনি শুরু হয়ে গেছে দেশবাসীর। উলের সোয়েটার, হাতমোজা, কানঢাকা টুপিতেও যেন রক্ষা মিলছে না হিমেল হাওয়ার দাপট থেকে। মেঘে ঢাকা পড়েছে সূর্যের রশ্মি। রাজধানীসহ দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় শুক্রবার সকালের হালকা বৃষ্টি বাড়িয়ে দিয়েছে শীতের তীব্রতা। মানুষের পা থেকে মাথা পর্যন্ত উঠেছে শীতের কাপড়। গত দু’দিনে গরম কাপড়ের দোকানে দোকানে ক্রেতার ভিড় কয়েকগুণ বেড়েছে। হাসি ফুটেছে গরম কাপড় দোকানিদের মুখে। তবে আগামী কয়েকদিন শীত আর বাড়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানায় আবহাওয়া অফিস। এমনিতে নবেম্বরের শেষ দিক থেকেই মোটের ওপর শীতের আমেজ পড়ে যায় দেশে। তবে এ বছর উল্টো চিত্রই দেখা গেছে বাংলাদেশে। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি এসেও উত্তুরে হাওয়ার দেখা মিলছিল না দেশে। ভরদুপুরে সরকারী অফিস কাছারি থেকে গৃহস্থের ঘরে পাখার বাতাসের প্রয়োজন পড়ছিল। অনেকেই আক্ষেপ করে বলছিলেন, এবার বুঝি শীত আর পড়ল না। মঙ্গলবার পর্যন্ত আবহাওয়া অধিদফতরের রেকর্ডে কনকনে শীতের পূর্বাভাস ছিল না। পরিস্থিতি বদলে গেল বুধবার থেকেই। তাপমাত্রা এক ধাক্কায় গিয়ে ঠেকল ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াসে। অধিকাংশ সেন্টারের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমে এলো ১১ থেকে ১৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে। এই দু’দিন আগেই ভরদুপুরে গায়ে জামা রাখা যাচ্ছিল না, রোদে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে ঘেমে অস্থির হতে হচ্ছিল। দু’দিনেই চিত্রটা বদলে গেল! শুক্রবার মৃদু শৈত্যপ্রবাহ আর কুয়াশার মধ্যেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় হালকা বৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়া অফিস জানায়, এই বৃষ্টির ফলে বাতাসের তাপমাত্রা আপাতত সামান্য বাড়তে পারে। তবে মাসের শেষ দিকে জেঁকে বসতে পারে শীত। শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সড়কে যান চলাচল ও পথচারীদের চলাফেরা এমনিতেই কম। এর মধ্যে বৃষ্টির কারণে রাজপথ সকাল থেকে অনেকটাই ফাঁকা। শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ঢাকায় এক দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড হয়েছে বলে জানায় আবহাওয়া অফিস। আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। পাশাপাশি দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে রয়েছে স্বাভাবিক লঘুচাপ। মূলত এর প্রভাবেই হালকা বৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে ঢাকা, খুলনা ও রাজশাহী বিভাগে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, যা আরও কয়েক দিন অব্যাহত থাকবে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের নদী অববাহিকার কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা দেখা যেতে পারে। তবে আগামী কয়েকদিন শীত আর বাড়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানায় আবহাওয়া অফিস। আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক মোঃ শাহ আলম জানান, ডিসেম্বরের শেষভাগে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে আরও দুয়েকটি মৃদু (৮-১০ ডিগ্রী সেলসিয়াস) এবং মাঝারি (৬-৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস) শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। ডিসেম্বরের বাকি দিনগুলোতে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানান মোঃ শাহ আলম। চট্টগ্রামে কনকনে শীত ॥ স্টাফ রিপোর্টার চট্টগ্রাম অফিস থেকে জানান, কনকনে শীতে ভোর থেকেই সূর্যের দেখা মেলেনি শুক্রবার সারাদিনেও। শুধু চট্টগ্রাম নগরীই নয়, সারাদেশেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির সঙ্গে কনকনে ঠা-ায় শীতের কাপড় জড়াতে হয়েছে ছেলে বুড়ো সকলকেই। সরকারী বন্ধের দিন হওয়ায় অফিস আদালতমুখীদের যেমন পদচারণা ছিল না তেমনি ছিল না শিক্ষার্থীদেরও। ফলে জনজীবনে অনেকটা স্থবিরতা নেমে এসেছে হঠাৎ শৈত্যপ্রবাহের কারণে। এদিকে, ফুটপাথ ও চট্টগ্রামের হকার্স মার্কেটসহ বিভিন্ন বিপণি কেন্দ্রগুলোতে শীতবস্ত্র কিনতে ক্রেতারা ছিল কেনাকাটায় ব্যস্ত। পৌষের মাত্র শুরু। শুক্রবার ছিল পৌষ মাসের ৪ তারিখ। অন্য বছরগুলোতে শীত অনেকটা আগেই জেঁকে বসত। কিন্তু এ বছর অতিবর্ষণ যেমন পরিলক্ষিত হয়েছে, তেমনি দীর্ঘায়িত ছিল বর্ষাকাল। এদিকে, শীতের বেলায়ও বিপরীত ঋতু পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে। সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে শীতের আগমনী বার্তা শুরু হলেও এবার লেগেছে ডিসেম্বরের মাঝামাঝিতে। ফলে শীতের যেমন শুরুতে দেরি, তেমনি শীত বিদায়েও দেরি হবে বলে আবহাওয়াবিদরা মনে করছেন। এদিকে, শীতের প্রভাবে রাস্তাঘাটে মানুষজনের আধিক্য ছিল খুবই কম। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গুঁড়ি বৃষ্টির কারণে মুখোমুখি বাসের সংঘর্ষও ঘটেছে মীরসরাই পান্থছিলা এলাকায়। চট্টগ্রামস্থ আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানানো হয়, শুক্রবার সকাল থেকেই শৈত্যপ্রবাহের কারণে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পরিলক্ষিত হওয়ায় সূর্য দেখা যায়নি। সারাদিনের তাপমাত্রা অনেক কমে যাওয়ার কারণে ঠা-ার প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। একদিকে গুঁড়ি বৃষ্টি, অন্যদিকে সূর্যের তাপমাত্রা বিকশিত না হওয়ায় শীতের প্রভাব ছিল অনেক বেশি। এ তাপমাত্রা আগামী ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় কার্যকর থাকতে পারে। বিপর্যস্ত কলাপাড়ায় জনজীবন ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা কলাপাড়া থেকে জানান, হঠাৎ করে শুক্রবার ভোর রাত থেকে কলাপাড়ার গোটা উপকূলজুড়ে জেঁকে বসেছে তীব্র শীত। ভোর রাত থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত মাঝারি বৃষ্টিতে আরেক দফা দুর্ভোগে পড়ে মানুষ। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েন কৃষক। ক্ষেতে পাকা ধান নুইয়ে পড়েছে। এছাড়া কাটা ও মাড়াই করা ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা। কুয়াকাটায় আসা পর্যটকরাও পড়েছেন বিপাকে। এদিকে ভোর থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত গোটা এলাকায় বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ থাকায় মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। কলাপাড়া পৌরসভার দশ সহস্রাধিক পরিবার পানির সঙ্কটে পড়ে। কলাপাড়া আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, এখানে ১৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
×