মুক্তিযুদ্ধের একবারে শেষ পর্যায়ে বিজয়ের ৩৫ দিন আগে বগুড়া শহরের ঠনঠনিয়া শাহপাড়া, মধ্যপাড়া, তেঁতুলতলা, হাজিপাড়া, পশারিপাড়ায় এ দেশী দোসর রাজাকারদের দেখিয়ে দেয়া বাড়িতে হানা দেয় পাক সেনা। ওই দিন ১৯৭১ সালের ১১ নবেম্বর ছিল পবিত্র রমজান মাস। মুক্তিযোদ্ধারা রাত শেষে কেউ সেহরি খাচ্ছিল কেউ কেবলই খেতে বসেছে। এমনই সময়ে মুসলমান ধর্মের পরিচয়বাহী পাকিস্তানী সেনারা বাড়িতে ঢুকে মুক্তিযোদ্ধাদের অমানুষিক নির্যাতন করে টেনে হেঁচড়ে গাড়িতে তোলে। এক নারী মুক্তিযোদ্ধাসহ ১৪ জনকে নিয়ে যায় বর্তমানের শাজাহানপুর উপজেলার বগুড়া-নাটোর মহাসড়কের ধারে বাবুরপুকুরে। ভোর বেলা যখন ফজরের নামাজের আজান হয় তখনই মুক্তিযোদ্ধাদের সারিবদ্ধ করে ব্রাশ ফায়ারে হত্যার পর বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে রাজাকার ও সেনাবাহিনীর জওয়ানরা উল্লাস করে চলে যায় ফজরের নামাজ শেষে এলাকার লোক মুক্তিযোদ্ধাদের এক সারিতে কবর দেয়। বিজয়ের ৮ বছর পর ১৯৭৯ সালে বগুড়া প্রেসক্লাবের উদ্যোগে কবরগুলো পাকা করা হয়। এরপর ওই জায়গায় স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের দাবি ওঠে। অনেকটা নীরবে ২০১০ সালের দিকে বগুড়া জিলা পরিষদ সেখানে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। প্রকল্প তৈরির পর ব্যয়ের প্রাক্কলন করা হয় প্রায় ৩৩ লাখ টাকা।
শহীদদের কবরের কাছেই স্মৃতি সৌধ নির্মাণের জায়গা নির্ধারণ করা হলে ১৫ শতাংশ জমি দান করেন ওই দিনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী তিতক্ষুর গ্রামের আলতাফ হোসেন। দ্রুত এই স্মারক স্থাপনার নকশা বানিয়ে দেন ভাস্কর শিল্পী অনিক রেজা। এই স্থাপনার বর্ণনায় বলা হয় ১৪ শহীদের সারিবদ্ধ কবরকে সম্পৃক্ত করে মূল কাঠামো তৈরি হয়েছে পূর্বাংশে। ৭৫ ফুট প্লাটফর্মের ওপর বেদি রয়েছে ২৫ ফুট। কবরের সারির উত্তর ধারে ছোট্ট লেক রয়েছে। মূল কাঠামোতে রয়েছে মানুষের বুকের বিমূর্ত রূপ। আরেকটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে বগুড়া রেলওয়ে স্টেশনের পশ্চিমে গণকবরের কাছে। বগুড়া পৌরসভার তৎকালীন মেয়র মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম মন্টুর উদ্যোগে নির্মিত হয় এই স্মৃতিস্তম্ভ।
Ñসমুদ্র হক
বগুড়া থেকে
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: