ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চার শ’ কিলোমিটার পাল্লা ॥ রুশ ক্ষেপণাস্ত্র কিনছে ভারত

প্রকাশিত: ০৩:৪৮, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৫

চার শ’  কিলোমিটার  পাল্লা ॥ রুশ ক্ষেপণাস্ত্র কিনছে ভারত

ভারত সরকার পাঁচটি অত্যাধুনিক রুশ এস ফোর হান্ড্রেড ট্রায়ামফ বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র সংগ্রহের জন্য ৩৯ হাজার কোটি রুপী অনুমোদন করেছে। সেসব ক্ষেপণাস্ত্র ন্যাটো দেশগুলোকেও চমকে দিয়েছে, কারণ সেগুলো ৪০০ কিলোমিটারের মধ্যে আসতে থাকা বৈরী বিমান, স্টেলথ জঙ্গী বিমান, ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ধ্বংস করতে পারে। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়ার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে ২৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় শীর্ষ বৈঠকের প্রাক্কালে প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পরিকরের নেতৃত্বে প্রতিরক্ষা সংগ্রহ পরিষদ (ডিএসি) ঐ সিদ্ধান্ত নেয়। সিদ্ধান্তটি বাণিজ্যিক আলাপ-আলোচনার পর বাস্তব চুক্তিতে রূপ নিতে কিছু সময় লাগবে। টাইমস অব ইন্ডিয়া ১১ অক্টোবর প্রথম জানায় যে, ডিএসি মোদির রাশিয়া সফরের আগে তাক লাগানো এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র সংগ্রহের বিষয়টি চূড়ান্ত করছে। গুরুত্বের কথা বিবেচনায় এনে ৩৬টি ফরাসি রাফেল জঙ্গী বিমান কেনার পরিকল্পনার সঙ্গে তাল রেখে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র কেনা হবে। ফরাসি বিমানের জন্য ৫০০ কোটি ডলারের চুক্তি শীঘ্রই সই করা হবে। ডিএসির অনুমোদন ভারতীয় বিশেষজ্ঞদের জন্য প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। তারা এখন রুশ প্রতিপক্ষের সঙ্গে সরকারী পর্যায়ে চুক্তির জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে কথা বলবেন। এক সূত্রে বলা হয়, এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র সেনাবাহিনীতে বাস্তবে অন্তর্ভুক্ত করতে কয়েক বছর লাগবে। ভারতের পাকিস্তান অভিমুখী পশ্চিম অঞ্চলে তিনটি এবং চীন অভিমুখী পূর্ব অঞ্চলে দুটি ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের পরিকল্পনা রয়েছে। ভারতের বিমান প্রতিরক্ষা সামর্থ্য গুরুত্বপূর্ণ উপায়ে বৃদ্ধি করাই এর উদ্দেশ্য। ভারতীয় বিমানবাহিনী পরমাণু চুল্লিগুলোর মতো গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ রক্ষা করাসহ দেশের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ফাঁক-ফোকর দূর করতে ক্রমশ চেষ্টা করছে। তাই এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র এ বাহিনীর জন্য বড় ধরনের সহায়ক শক্তিই হবে। ভারত হবে ঐ শ্রেণীর ক্ষেপণাস্ত্রের দ্বিতীয় বিদেশী ক্রেতা। ন্যাটো একে এসএ-২১ গ্রোলার বলে থাকে। চীন ২০১৭ সাল থেকে ছয়টি এস-৪০০ ব্যাটারির চালান পাবে বলে জানা যায়। এর আগে গত বছর এ নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে ৩০০ কোটি ডলারের এক চুক্তি সই হয়। ডিএসি বৃহস্পতিবার ২৫ হাজার ৯শ’ ৮৫ কোটি রুপী ব্যয়ে সামরিক আধুনিকায়নের অন্যান্য প্রস্তাবও অনুমোদন করেছে। এদের মধ্যে রয়েছে ১৪ হাজার ৬শ’ কোটি রুপী ব্যয়ে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি পিনাকা মাল্টপল লঞ্চ রকেটের আরও ছয়টি রেজিমেন্ট সংগ্রহ করার প্রস্তাব। সেনাবাহিনীর হাতে ৪০ কিলোমিটার পাল্লার পিনাকা রকেটের দুটি রেজিমেন্ট রয়েছে। আরও দুটি রেজিমেন্ট সংগ্রহের প্রস্তাব ইতোপূর্বেই অনুমোদিত হয়। কিন্তু এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র কেনার প্রস্তাবই মোদির রাশিয়া সফরের সঙ্গে প্রকৃত প্রতিরক্ষা উপকরণ যুক্ত করেছে। এ সফরের সময় দুটি দেশ ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ নীতির আওতায় ২০০টি রুশ ক্যামভ কে-২২৬টি হাল্কা হেলিকপ্টার তৈরির জন্য একশ’ কোটি ডলারেরও বেশি ব্যয়সাপেক্ষ প্রকল্পের জন্য আন্তঃসরকার চুক্তি ও সই করবে। ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে পরমাণু শক্তি চালিত দ্বিতীয় সাবমেরিন ১৫০ কোটি ডলারে লিজ হিসেবে সংগ্রহ করার পথে রয়েছে। প্রথম আকুল-২ সাবমেরিনটি ২০১২ সালের এপ্রিলে রাশিয়া থেকে ১০ বছরের লিজে আইএনএস চক্র নামে ভারতীয় নৌবাহিনীতে যুক্ত করা হয়। এ নিয়ে অনেক আগে ২০০৪-এর জানুয়ারিতে গোপনে ৯০ কোটি ডলারের এ চুক্তি সই করা হয়। এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র চুক্তিটি বাস্তবে সই হলে তা হবে রাশিয়ার সঙ্গে স্বাক্ষরিত অন্যতম বড় চুক্তি। গত চার বছর ধরে ভারতের প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের সবচেয়ে বড় সরবরাহকারী হিসেবে রাশিয়ার স্থান দখল করে নেয় যুক্তরাষ্ট্র। রাশিয়ার সঙ্গে স্বাক্ষরিত অন্যান্য বড় চুক্তির মধ্যে রয়েছে ২৭২টি সুখোই জঙ্গী বিমানের জন্য ১ হাজার ২শ’ কোটিরও বেশি ডলারের চুক্তি এবং বিমানবাহী জাহাজ আইএনএস বিক্রমাদিত্যের জন্য ২৩৩ কোটি ডলারের চুক্তি এবং এর ডেক থেকে চলাচল করবে এমন ৪৫টি মিগ-২৯ বিমানের জন্য ২০০ কোটি ডলারের আরেক চুক্তি।
×