ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

ছায়ানটের দুই দিনব্যাপী শুদ্ধ সঙ্গীত উৎসব শুরু

প্রকাশিত: ০৭:০৭, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৫

ছায়ানটের দুই দিনব্যাপী শুদ্ধ সঙ্গীত উৎসব শুরু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের উচ্চাঙ্গসঙ্গীত ফিরে পাচ্ছে তার হারানো গৌরব। ক্রমশই সঙ্গীতানুরাগীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে উচ্চমার্গীয় সঙ্গীতের এ ধারাটি। সুর-তাল ও লয়ের সম্মিলিত সঙ্গীতসুধা উপভোগে বয়স্ক থেকে তরুণ গানপ্রেমীরা হাজির হচ্ছেন শাস্ত্রীয় সঙ্গীতাসরে। নিজেদের সমর্পিত করছেন ধ্রুপদী সঙ্গীতের স্রোতস্বিনী তরঙ্গে। নবজাগরণের সেই স্রোতধারায় শুরু হলো ছায়ানট আয়োজিত শুদ্ধসঙ্গীত উৎসব। তিনটি অধিবেশনে সাজানো দুই দিনব্যাপী এ উৎসবের সূচনা হয় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার শিল্পীরা অংশ নিচ্ছেন এ সঙ্গীতাসরে। সুরেলা শব্দঝরা কণ্ঠসঙ্গীতের সঙ্গে যন্ত্রসঙ্গীতের সুর মূর্ছনার সম্মিলন ঘটেছে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতায়োজনটিতে। আর প্রথম দিনেই সুররসিকদের আগমনে জমে ওঠে উৎসব। পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে মিলনায়তন। পৌষের সন্ধ্যায় ধানম-ির ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন মিলনায়তনে সবার জন্য উন্মুক্ত এ উৎসবের সূচনা হয়। বাঙালীর প্রাণের গান আমার সোনার বাংলার সুরধ্বনিতে জাতীয়সঙ্গীতের আশ্রয়ে এগিয়ে যায় উদ্বোধনী পর্ব। উৎসব উদ্বোধন করেন ওস্তাদ মোঃ ইয়াসিন খান। স্বাগত কথনে অংশ নেন ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক খায়রুল আনাম শাকিল। উদ্বোধনী বক্তব্যে ওস্তাদ গুল মোহাম্মদের ছেলে প্রবীণ শাস্ত্রীয় সঙ্গীতশিল্পী ইয়াসিন খান বলেন, এ উৎসব আমাকে খুবই আশান্বিত করেছে। মনে হচ্ছে শাস্ত্রীয়সঙ্গীত ফিরে পাচ্ছে তার হারানো গৌরব। আর এ ধারার সঙ্গীতে চর্চাটা খুবই জরুরী। সাধনার পর্যায়ে নিয়ে যেতে হয় সেই চর্চাকে। এই সঙ্গীতধারায় কঠিন অধ্যাবসায়ের কোন বিকল্প নেই। প্রকৃত শিল্পী হতে হলে তাই খুব অল্প বয়স থেকেই এই সঙ্গীতের তালিম নেয়া শুরু করতে হবে। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে শুরু হয় সাড়ে চার ঘণ্টা ব্যাপ্তির প্রথম অধিবেশনের পরিবেশনা পর্ব। সন্ধ্যা ছয়টায় শুরু হওয়া সূচনা দিনের উৎসব শেষে হয় রাত সাড়ে ১০টায়। প্রথমেই পরিবেশিত ছায়ানটের শিল্পীদের সম্মেলক কণ্ঠসঙ্গীত। অসিত দে’র পরিচালনায় অনেক কণ্ঠের মিলিত সুরে পরিবেশিত হয় রাগ হংসধ্বনি। গানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তবলা বাজিয়ে শোনান রতন কুমার দাস। এরপর রাগ-রাগিনীর আশ্রয়ে একক কণ্ঠসঙ্গীত পরিবেশন করেন ঢাকার শিল্পী অভিজিৎ কু-ু। উপস্থাপন করেন রাগ পুরিয়াধানেশ্রী। শিল্পীর সঙ্গে তবলায় সঙ্গত দেন ইফতেখার আলম ডলার। কণ্ঠের সুরলাপ থামতেই বেজে ওঠে সম্মোহনী বাঁশির সুর। রাগ হংসধ্বনি বাজিয়ে শোনান ঢাকার বংশীবাদক মর্তুজা কবীর মুরাদ। শ্রোতার হৃদয়ে বয়ে যায় বাঁশির মায়াবি সুরের অনুরণন। পরিবেশনাটিতে তবলায় সঙ্গত দেন স্বরূপ হোসেন। এরপর কণ্ঠসঙ্গীতের মুগ্ধতা ছড়ালেন ঢাকার প্রিয়াংকা গোপ। পরিবেশন করেন রাগ শ্যামাকল্যাণ। কণ্ঠের লহরী শেষে বেজে ওঠে শ্রোতার হৃদয় উচাটন করা তবলার তাল। বাদনে অংশ নেন ঢাকার শিল্পী মীর নাকিবুল ইসলাম। প্রথম দিনের সর্বশেষ পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চে আসেন কলকাতার শিল্পী ব্রজেশ্বর মুখোপাধ্যায়। উপস্থাপন করেন কণ্ঠসঙ্গীত। আজকের অনুষ্ঠানসূচী ॥ আজ শুক্রবার এ উৎসবের সমাপনী দিন। এদিন দ্বিতীয় অধিবেশন শুরু হবে সকাল নয়টায়। চলবে বেলা ১টা পর্যন্ত। শুরুতেই থাকবেই ছায়ানটের শিল্পীদের পরিবেশিত সম্মেলক কণ্ঠসঙ্গীত। এছাড়াও এ অধিবেশনে কণ্ঠসঙ্গীত পরিবেশন করবেন রাজশাহীর শিল্পী আলমগীর পারভেজ সুমন, ঢাকার দুই শিল্পী শ্রাবন্তী ধর ও সতীন্দ্রনাথ হালদার। এ অধিবেশনে সব শেষে বেহালায় সুর ছড়াবেন ঢাকার বেহালাবাদক শিউলী ভট্টাচার্যী। তৃতীয় অধিবেশন শুরু হবে সন্ধ্যা ৬টায়। চলবে রাত গড়িয়ে ভোর অবধি। এ পর্বের শুরুতেও থাকবে ছায়ানটের শিল্পীদের কণ্ঠসঙ্গীত। বৃন্দ তবলাবাদনেও অংশ নেবেন ছায়ানটের শিল্পীরা। কণ্ঠসঙ্গীত পরিবেশন করবেন ঢাকার সাত শিল্পী লতিফুন জুলিও, সুপ্রিয়া দাশ, সঞ্জীবন স্যানাল, সুস্মিতা দেবনাথ শুচি, খায়রুল আনাম শাকিল, রেজোয়ান আলী, অসিত কুমার দে, বিজন চন্দ্র মিস্ত্রী ও রাজশাহীর শিল্পী অমরেশ রায়চৌধুরী এবং চট্টগ্রামের শিল্পী তাপস দত্ত। পাখোয়াজ বাজিয়ে শোনাবেন ঢাকার শিল্পী শুষেণ কুমার রায়। সরোদে সিগ্ন সুর তুলবেন কলকাতার শিল্পী দেবস্মিতা ভট্টাচার্য। উদীচীর সাংস্কৃতিক সম্মেলন শুরু ॥ লাখো শহীদের রক্তঋণ শোধ করার আহ্বান জানিয়ে শুরু হলো বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী আয়োজিত তিন দিনব্যাপী জাতীয় সাংস্কৃতিক সম্মেলন। এবারের সম্মেলনের সেøাগান ‘শহীদ স্মরণে আপন মরণে, রক্ত ঋণ শোধ কর, শোধ কর।’ বৃহস্পতিবার বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে সম্মেলন উদ্বোধন করেন বৃহত্তর চট্টগ্রামের প্রখ্যাত লোকশিল্পী আমান উল্লাহ গায়েন। উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি কামাল লোহানীর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক শান্তনু কায়সার এবং সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী অপশক্তির নৃশংস হামলায় নিহত গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম কর্মী রাজীব হায়দার শোভনের বাবা ডাঃ নাজিম উদ্দিন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন উদীচীর সাধারণ সম্পাদক প্রবীর সরদার। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সম্মেলন প্রস্তুতি পরিষদের আহ্বায়ক শংকর সাওজাল। উদ্বোধনী আলোচনায় বক্তারা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ গড়তে সাংস্কৃতিক সংগ্রামের বিকল্প নেই। দেশের আবহমান সংস্কৃতির সংরক্ষণ এবং এর প্রতি নতুন প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করার মাধ্যমেই সত্যিকারের সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে বাউলদের ওপর হামলা, যাত্রাপালায় বোমা হামলা প্রভৃতি ঘটনার নিন্দা জানিয়ে উদীচীর সভাপতি কামাল লোহানী অবিলম্বে এসব অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানান। উদ্বোধন ঘোষণার পর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী গণসঙ্গীত নিয়ে একটি আলেখ্যানুষ্ঠান পরিবেশন করেন উদীচীর শিল্পী-কর্মীরা। এরপর ছিল বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। সারাদেশ থেকে আগত উদীচীর শিল্পী-কর্মীদের উচ্ছল অংশগ্রহণে মুখরিত শোভাযাত্রাটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শুরু হয়ে টিএসসি-শাহবাগ হয়ে আবার শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়। এরপর সন্ধ্যায় শুরু হয় উদীচীর বিভিন্ন জেলা ও শাখা সংসদ থেকে আগত শিল্পীদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এসব পরিবেশনায় বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি এবং কৃষ্টিকে তুলে ধরা হয়। উদীচীর এবারের সাংস্কৃতিক সম্মেলনের উদ্বোধক আমান উল্লাহ গায়েনের অসাধারণ পরিবেশনা দিয়ে শুরু হয় এ পর্ব। এরপর একে একে মঞ্চে নানা পরিবেশনা তুলে ধরেন উদীচীর সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, গোপালগঞ্জ, বান্দরবান এবং অন্যান্য শাখার শিল্পী-কর্মীরা। উদীচী সিলেটের লাখ্যাতুরা চা বাগান শাখার শিল্পীরা পরিবেশন করেন চা বাগানের গান। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবির পাশাপাশি সুন্দরবন রক্ষার দাবি নিয়ে বিভিন্ন গান পরিবেশন করেন তারা। বান্দরবান জেলার শিল্পীরা পরিবেশন করেন আদিবাসী নৃত্য। নরসিংদী উদীচীর শিল্পীরা পরিবেশন করেন জারি গান। এছাড়া দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর ও গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া শাখার শিল্পীরা। গীতি নৃত্যনাট্য পরিবেশন করেন গোপালগঞ্জ জেলার শিল্পীরা। আজ শুক্রবার সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন। এদিন সকাল ১০টায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত হবে ‘দক্ষিণ এশিয়ায় সাম্প্রদায়িকতা ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সাংস্কৃতিক সংগ্রাম’ বিষয়ক সেমিনার। আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন অধ্যাপক ড. শফিউদ্দিন আহমেদ, সিপিবির প্রেসিডিয়াম সদস্য হায়দার আকবর খান রনো, প্রগতি লেখক সংঘের কার্যকরী সভাপতি কবি গোলাম কিবরিয়া পিনু, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের নেতা ডাঃ লেনিন চৌধুরী এবং উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহসভাপতি হাবিবুল আলম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন উদীচীর কেন্দ্রীয় সহসভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান। সেমিনারটি সঞ্চালনা করবেন উদীচীর সাধারণ সম্পাদক প্রবীর সরদার। আর এ পর্বটি সভাপতিত্ব করবেন উদীচীর কেন্দ্রীয় সভাপতি কামাল লোহানী। এরপর সন্ধ্যায় থাকবে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। তৃতীয় ও শেষ দিন ১৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যায়ও গান, নাচ, আবৃত্তি, নাটক, নৃত্যনাট্যসহ নানা বৈচিত্র্যময় পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চে উপস্থিত থাকবেন উদীচীর বিভিন্ন জেলা ও শাখা সংসদ থেকে আগত শিল্পীরা। মুন্সীগঞ্জে বিশাল সাংস্কৃতিক আসর স্টাফ রিপোর্টার মুন্সীগঞ্জ থেকে জানান, সিরাজদিখান উপজেলার সন্তোষপাড়া মাঠে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক বিশাল সাংস্কৃতিক আসর বসে। বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত এ আসরে সঙ্গীত, নৃত্য ও নাটক মঞ্চস্থ হয়। সব মিলিয়ে শীতের রাতের এ আয়োজন মফস্বলে বিশেষ পরিবেশ সৃষ্টি করে। সংগঠনটির সভাপতি বিল্লাল হোসেনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সভাপতি অভিনেতা এটিএম সামসুজ্জামান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সিরাজদিখান উপজেলা চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অরুণ সরকার রানা, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের জেলা সাধারণ সম্পাদক ডাঃ এএসএম মোশারফ, রশুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন চোকদার, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম খান, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের নাট্য সম্পাদক মাহফুজুর রহমান প্রমুখ। এর আগে মুন্সীগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জেলা প্রশাসন আয়োজিত অনুষ্ঠানে জেলা শিল্পকলা একাডেমি, উপজেলা শিল্পকলা একাডেমি ও জেলা শিশু একাডেমি সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশন করে। এ অনুষ্ঠানে ‘সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে ডিজিটাল প্রযুক্তির সার্বজনীন ব্যবহার ও মুক্তিযুদ্ধ’ শীর্ষক আলোচনায় প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মোঃ সাইফুল হাসান বাদল। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সরকারী হরগঙ্গা কলেজের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ রাসেল কবির। এডিসি মোঃ কুদ্দুস আলী সরকারের সভাপতিত্বে প্রবন্ধটি নিয়ে আলোচনায় অংশ নেন সরকারী হরগঙ্গা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম, সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ শহিদুল ইসলাম, মুক্তিযোদ্ধা মোঃ জামাল হোসেন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি মতিউল ইসলাম হিরু ও মুন্সীগঞ্জ প্রেসক্লাব সভাপতি মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল।
×