বিজয়ের উজ্জ্বল সকালে
এক ষোড়শী রমণী
কপালে টিপ
লাল ডুরে শাড়ি
হাতে রং বেরঙের চুড়ি পরে নিজেকে সাজিয়েছে
ষোড়শীর ডাগর চোখে অপেক্ষা;
মুক্তিযোদ্ধা স্বামী ফিরবে
অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা বন্দুক উঁচিয়ে ঘরে ফিরছে
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু সেøাগান দিতে দিতে বিজয়ের উল্লাসের উল্লসিত,
ষোড়শী রমণী খুশিতে আত্মহারা
স্বামী ফিরবে, মুক্তিযোদ্ধা স্বামী
উঃ কী আনন্দ!!
অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধাদের চেয়ে চেয়ে দেখে
না, ষোড়শীর চেনা মুখ চোখে পড়ে না
ষোড়শী অস্থির চিত্তে
পাশ দিয়ে যাওয়া এক মুক্তিযোদ্ধাকে শুধায়
মুক্তিযোদ্ধা রফিককে চেনেন
উনি ফিরছে না কেন?
এতো দেরি হচ্ছে কেন?
ন’মাসের অপেক্ষার মহেন্দ্রক্ষণ আজ
রফিক ফিরবে ফিরবেই
সবাই ফিরছেÑ ওর ভালোবাসার মানুষটি অবশ্যই ফিরবে।
পাশ দিয়ে এক মুক্তি যেতেই
সাহস করে ষোড়শী কম্পিত কণ্ঠে
শুধায়
মুক্তিযোদ্ধা রফিককে চেনেন?
সবাই ফিরছে ওর এতো দেরি কেন?
মুক্তিযোদ্ধা থমকে দাঁড়ায়
কম্পিত কণ্ঠে শুধায় এটি কি চন্দননগর?
হ্যাঁ হ্যাঁ এটি চন্দননগর
আমি রফিকের স্ত্রীÑ
মুক্তিযোদ্ধা হাঁটু গেড়ে ষোড়শীর পায়ের কাছে বসে
রাইফেলখানা নিয়ে ষোড়শীর পায়ের কাছে হাঁটু গেড়ে বসে
বলেÑ ‘রফিক শহীদ হয়েছে। মৃত্যু যন্ত্রণার মধ্যেই একটা চিরকুট অনেক কষ্টে লিখে আমাকে দিয়ে, বলল চন্দননগরে আমার প্রিয়তমাকে দিস।’
ছোট চিরকুটটা ষোড়শীর হাতে দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা দ্রুত চলে যায়। ষোড়শী চিরকুট হাতে নিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। হাতে ধরা চিরকুটখানা হাতের মুঠোয় ধরে অনেক কষ্টে উঠে বসে। চিরকুটখানা কম্পিত হাতে মেলে ধরে। ঝাপসা চোখে চিরকুটখানা পড়ে।
লক্ষ্মী বৌ আমার। তোমাকে দিয়ে গেলাম ভালবাসা। স্বাধীনতার বাতাসে তোমার আমার মিলন হবে। উঃ বড্ড কষ্ট লক্ষ্মীটি। আর পারছি না। তুমি স্বাধীনতার গর্ব হয়ে বাঁচবে। তোমার অন্তরেই আমার বাস...।
ষোড়শী চিরকুট হাতে চিৎকার করে বলে আমাদের বিজয় দেখা হলো না। হে মানুষ...
তোমরা শোন
আমি এখন শহীদের স্ত্রী। আমি শহীদের স্ত্রী... শহীদের স্ত্রী...
শীর্ষ সংবাদ: