ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিজয় দিবসেও শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনে বাধাদানের ধৃষ্টতা

চট্টগ্রামের দুটি কলেজ এলাকায় এখনও শিবিরের দৌরাত্ম্য

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৫

চট্টগ্রামের দুটি কলেজ এলাকায় এখনও শিবিরের দৌরাত্ম্য

হাসান নাসির ॥ বিজয়ের মাস স্বাধীনতাবিরোধীদের নয়। বিজয় দিবসও সকলের জন্য নয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে যারা এখনও মেনে নিতে পারেনি তাদের জন্য ১৬ ডিসেম্বর পরাজয় দিবস। মহান এই দিনটিতে মাথা উঁচু থাকবে শুধুই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির। অপরদিকে স্বাধীনতাবিরোধীদের জন্য দিবসটি মাথা নিচু করে থাকার দিন। অথচ বাঙালী জাতির বিশেষ এই দিনটিতেও চট্টগ্রামে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনে বাধা দেয়ার মতো ধৃষ্টতা দেখাল স্বাধীনতার চেতনাবিরোধী সংগঠন ছাত্রশিবির। আর ঘটনাটি এমন সময় ঘটল, যখন মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী দল আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন। স্বাধীনতার ৪৪ বছর পরও নগরীর চট্টগ্রাম সরকারী কলেজ ও সংলগ্ন সরকারী হাজী মুহম্মদ মুহসীন কলেজকে কেন্দ্র করে ছোট একটি এলাকা যেন এক টুকরো পাকিস্তান। দীর্ঘদিন ধরে এ দুটি কলেজ কব্জা করে রেখেছে মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষ বিরোধিতাকারী রাজনৈতিক দল জামায়াতের অঙ্গসংগঠন ছাত্রশিবির। শিক্ষার্থীদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রচুর ছাত্রছাত্রী থাকলেও সেখানে টুঁ শব্দটি প্রকাশের সুযোগ নেই। তাদের পড়ালেখা করতে হচ্ছে একেবারে নিঃশব্দে, নয়ত পরিচয় গোপন রেখে। কলেজে ভর্তি, ছাত্রবাসে সিট বরাদ্দসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে একচ্ছত্র প্রভাব ছাত্রশিবিরের। চট্টগ্রাম কলেজ ও মুহসীন কলেজ এই দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ সকল স্থানেই বছরের বারো মাস ঝোলানো থাকে ছাত্রশিবিরের ব্যানার। আর কোন দলের একটি ব্যানার-পোস্টারও দৃশ্যমান নয়। ছাত্রশিবিরের ব্যানারে কলেজ দুটি এমনই ছেয়ে আছে যে, কারও মনে হতে পারেÑ একাত্তর সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও এই এলাকাটি এখনও স্বাধীন হয়নি। চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় ও সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী কলেজ চট্টগ্রাম সরকারী কলেজে সম্প্রতি ব্যাপক সংস্কার এবং উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে। ইংরেজী বর্ণ ‘এ’ আদ্যক্ষরের আগের তোরণটি ভেঙ্গে স্থাপন করা হয়েছে নতুন সুন্দর তোরণ। সংস্কার হয়েছে শহীদ মিনারের। কিন্তু সেই মিনারে ফুল দেয়া যায় না। কারণ কলেজটির বাহ্যিক চেহারা পাল্টালেও ভেতরটা একটুও বদলায়নি। এখনও দোর্দ- প্রতাপ সেই স্বাধীনতাবিরোধী ভাবাদর্শের। চট্টগ্রাম সরকারী কলেজে ছাত্রশিবিরের পরাক্রমের শুরুটা হয়েছিল হত্যার রাজনীতির মধ্য দিয়ে। ১৯৮১ সালে এই কলেজে নির্মমভাবে খুন হয় ছাত্রলীগ নেতা তবারক। এর কয়েক বছর পর ছাত্রাবাসে ঘুমন্ত অবস্থায় কুপিয়ে খুন করা হয়েছিল ছাত্র ইউনিয়ন নেতা শাহাদাতকে। খুনের মাধ্যমে সেই যে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা তা এখনও বজায় রয়েছে। স্বাধীনতার ৪৪ বছর পর মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও ছাত্রশিবিরের আধিপত্যের হেরফের হয়নি। এখনও সবকিছু চলছে তাদের ইচ্ছানুযায়ী। শিক্ষক এবং প্রশাসনও জিম্মি হয়ে আছে নানাভাবে। চট্টগ্রাম কলেজের এক শিক্ষকের সঙ্গে কথা বললে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, বর্তমানে কলেজে জাতীয় দিবসগুলো যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের উদ্যোগ থাকে কলেজের। তবে সামগ্রিক পরিবেশ কিছুটা প্রতিকূল হওয়ায় তা কাক্সিক্ষত পর্যায়ে হয় না। পালিত হয়ে থাকে অনেকটা সীমিত আকারে। এক্ষেত্রে কলেজ প্রশাসনের করণীয় বিষয়ে তাঁর অভিমতÑ প্রশাসন কিংবা শিক্ষকরা তো সরাসরি রাজনৈতিক কর্মকা-ে অংশগ্রহণ কিংবা হস্তক্ষেপ করতে পারে না। ব্যর্থতার জন্য মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সংগঠনগুলোকেই দায় নিতে হবে। প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও কিভাবে রাজনৈতিক কর্মকা- চালানো যায় সে কৌশল তাদেরই নির্ধারণ করতে হবে। এদিকে, চট্টগ্রাম কলেজ ও মুহসীন কলেজে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সংগঠনগুলোর দৈন্য অবস্থার জন্য আওয়ামী লীগকেও দুষছেন অনেকেই। কেননা, প্রায় আট বছর দলটি রাষ্ট্র ক্ষমতায় থেকেও এই দুটি কলেজে সাংগঠনিক কার্যক্রম বলতে গেলে শুরুই করতে পারেনি। বরং দলটিকে বেশিরভাগ সময় লিপ্ত থাকতে দেখা গেছে অভ্যন্তরীণ কলহে।
×