ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

৭% প্রবৃদ্ধি হবে ॥ গবর্নর

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৫

৭% প্রবৃদ্ধি হবে ॥ গবর্নর

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ চলতি অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ড. আতিউর রহমান। বিনিয়োগে গতি আসছে জানিয়ে তিনি বলেন, বিনিয়োগ বাড়লে প্রবৃদ্ধি বাড়বেই। তাই এ বছর আমাদের প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশে উন্নীত হবে বলে আশা করা যায়। উৎপাদনশীল খাতে, বিশেষ করে এসএমই খাতে বিনিয়োগ আরও দ্রুত বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলেও জানান গবর্নর। বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ ব্যাংক ট্রেনিং একাডেমিতে (বিবিটিএ) আয়োজিত বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্স ২০১৫-এর দ্বিতীয় ব্যাচের সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। ড. আতিউর বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন খুবই প্রাণোদ্দীপ্ত। স্থিতিশীল। বাংলাদেশ সফরে এসে বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. কৌশিক বসুও বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন উড়ন্ত সূচনার পর্যায়ে রয়েছে। তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাতের সূচকগুলো দিন দিনই শক্তিশালী হচ্ছে। ব্যাংকিং খাত এখন অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে শক্তিশালী, স্থিতিশীল ও ঝুঁকি সহনে সক্ষম। এ খাতে মূলধন পর্যাপ্ততার হার এখন ১০.৫৩ শতাংশ, যা আন্তর্জাতিক মানদ- ৮ শতাংশের চেয়ে অনেক বেশি। বিভিন্ন প্রতিকূলতা সত্ত্বেও খেলাপী ঋণের হার আমরা এক অঙ্কে নামিয়ে আনতে পেরেছি। খেলাপী ঋণের বিপরীতে প্রভিশন কাভারেজ ৯৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ব্যাংকিং খাতে এখন কোন তারল্য সঙ্কট নেই। কলমানি রেট মাত্র ৩-৪ শতাংশ। মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির হার বাড়ছে। সুদহারের স্প্রেড কমে ৪.৭৭ শতাংশ হয়েছে। এই স্প্রেড ক্রমান্বয়ে কমছে। আমাদের বিনিময় হার দীর্ঘদিন ধরে স্থিতিশীল। মূল্যস্ফীতিও কমছে। গবর্নর জানান, রফতানিমুখী শিল্পে স্বল্পসুদে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ প্রদানের জন্য বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় তিন শ’ মিলিয়ন ডলারের একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। ২শ’ মিলিয়ন ডলারের আরেকটি তহবিল অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে বলেও জানান তিনি। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক অনেকটাই বদলে গেছে- এমন মন্তব্য করে গবর্নর বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ সব দিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের অর্থনীতির আকারও বাড়ছে। বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ ও ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য সামনে রেখে বাংলাদেশ ব্যাংক ও ব্যাংকিং খাতে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটানো হয়েছে। হাতে নেয়া হয়েছে বিভিন্ন উদ্যোগ ও উন্নয়নমূলক কর্মকা-। অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংককে আধুনিক ও ডিজিটালাইজড কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। অটোমেটেড ক্লিয়ারিং হাউস, ইলেক্ট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার, মোবাইল ব্যাংকিং, অনলাইন সিআইবি, অনলাইন ব্যাংকিং, ই-কমার্স, ইআরপি, কোর ব্যাংকিং সলিউশন, এন্টারপ্রাইজ ডাটা ওয়্যারহাউস, ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ, রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংককে একটি ডিজিটাইজড প্রতিষ্ঠান ও গোটা ব্যাংকিং খাতকে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর খাত হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন ড. আতিউর রহমান। প্রশিক্ষণার্থীদের উদ্দেশে গবর্নর বলেন, বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত করতে যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন দরকার, সেজন্য ব্যাংকিং খাতকে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের উৎসাহিত, উদ্দীপ্ত ও কর্তব্যকাজে আরও বেশি মনোনিবেশ করাতে হবে। বর্তমান পরিবর্তনশীল বিশ্বে আর্থিক খাতের নেতৃত্ব বিকাশের কোন বিকল্প নেই। এ কারণেই হালে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের দক্ষতা বাড়াতে দেশে-বিদেশে বেশি বেশি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আজ যারা বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ শেষ করলেন তাদের জন্য এটি শুরুমাত্র। ভবিষ্যতে আর্থিক খাতের নেতৃত্ব দিতে আপনাদের সামনে রয়েছে আরও উন্নত প্রশিক্ষণ। বাংলাদেশ ব্যাংক ট্রেনিং একাডেমির প্রিন্সিপাল কেএম জামশেদুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি গবর্নর নাজনীন সুলতানা।
×