ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ইটভাঁটিতে পুড়ছে বনাঞ্চলের কাঠ

প্রকাশিত: ০৩:৪৫, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৫

ইটভাঁটিতে পুড়ছে বনাঞ্চলের কাঠ

স্টাফ রিপোর্টার, গলাচিপা ॥ পটুয়াখালীর গলাচিপা, দশমিনা ও রাঙ্গাবালী উপজেলায় পাইকারি হারে গড়ে উঠেছে ইটভাঁটি। কোথাও লোকালয়ে, কোথাও স্কুলের পাশে আবার কোথাও সরকারী বা পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমি দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে এসব ইটভাঁটি। মান্ধাতা আমলের পদ্ধতিতে গড়ে ওঠা এসব ইটভাঁটিতে দেদার পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। অভিযোগ উঠেছে অধিকাংশ ইটভাঁটিতে ব্যবহৃত হচ্ছে সরকারী বনাঞ্চলের গাছ। আরও অভিযোগ রয়েছে, বেশির ভাগ ইটভাঁটির সাথে এলাকার প্রভাবশালী লোকজন জড়িত থাকায় কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস করছে না। ইটভাঁটির কারণে পরিবেশে নানা ধরনের বিপর্যয় ঘটছে। স্থানীয় পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কেবলমাত্র গলাচিপা উপজেলায় এরই মধ্যে ৭টি ইটভাঁটি গড়ে উঠেছে। আরও একাধিক ভাঁটি গড়ে তোলার উদ্যোগ-আয়োজন চলছে। ধানী জমি থেকে শুরু করে স্কুলের পাশে কিংবা সরকারী বা পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমি দখল করে গড়ে তোলা এসব ইটভাঁটিতে সরকারী কোন ধরনের নিয়মকানুন মানা হচ্ছে না। নির্গত ধোঁয়া সরাসরি বাতাসে যাতে বের হতে না পারে এ জন্য জিগঝাগ পদ্ধতিতে পানির ট্যাঙ্কি দিয়ে পরিশোধনের বিধান রয়েছে। একইভাবে ধোঁয়া নির্গমণের জন্য সরকার নির্ধারিত ৬৫ ফুট চোঙ্গা ব্যবহারের নির্দেশ রয়েছে। কিন্তু এর কিছুই মানা হচ্ছে না। মাত্র ২৫ ফুট চোঙ্গা ব্যবহার করা হচ্ছে, তাও আবার সিমেন্টের তৈরি নয়। ড্রাম শিট দিয়ে এসব ভাঁটির চোঙ্গা নির্মাণ করা হয়েছে। কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হলেও প্রায় সব ইটভাঁটিতে ব্যবহার করা হচ্ছে কাঠ। ধারণা করা হচ্ছে, কেবলমাত্র গলাচিপা উপজেলাতেই এবার অন্তত এক লাখ মণ কাঠ পোড়ানো হতে পারে। আর এর অধিকাংশই ব্যবহৃত হচ্ছে বনাঞ্চলের কাঠ। সরকারী বনাঞ্চল উজাড় করে বনদস্যুরা ভাঁটিগুলোতে কাঠ সরবরাহ করছে। গ্রাম এলাকা থেকেও ভাঁটি মালিকদের নিয়োজিত দালালরা গাছ সংগ্রহ করছে। দালালরা গাছ মালিকদের গাছ বিক্রিতে প্রলুব্ধ করে এ অপকর্ম করছে। এ কারণে এলাকায় জ্বালানি কাঠের বর্তমানে তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। গত বছর উপজেলা প্রশাসন কয়েকটি ইটভাঁটিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে অর্থ ও কারাদ-ের আদেশ দিয়ে এক পর্যায়ে তা বন্ধ করে দিতে সমর্থ হয়েছিল। কিন্তু এ বছর এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এদিকে ইটভাঁটি স্থাপনে পরিবেশ অধিদফতরের সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক হলেও কোন ভাঁটিতেই তা নেই। পটুয়াখালী জেলায় পরিবেশ অধিদফতরের কার্যালয় না থাকায় ভাঁটি মালিকরা সে সুযোগের সদ্ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সরেজমিন দেখা গেছে, সুহরী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, রতনদী-তালতলী মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও বাঁশবাড়িয়া হাজী সামসুদ্দিন মোল্লা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকাতেই রয়েছে ৩টি ইটভাঁটি। এসব ইটভাঁটির কালো ধোঁয়ার কারণে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা থেকে সাধারণ মানুষের জীবনযাপন কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।
×