ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জিতে খুশি কুমিল্লা, অসন্তুষ্ট নয় বরিশালও

প্রকাশিত: ০৬:৩৪, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৫

জিতে খুশি কুমিল্লা, অসন্তুষ্ট নয় বরিশালও

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ফাইনালে খেলা যেহেতু, এক দল চ্যাম্পিয়ন হবে, আরেকদল রানার্সআপ হবে; এটাই স্বাভাবিক। চ্যাম্পিয়ন দল মহাআনন্দ করবে, আর রানার্সআপ দল হতাশ হবে; এটাও স্বাভাবিক। কিন্তু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের (বিপিএল টি২০) তৃতীয় আসরের চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ দুই দলই খুশি। বরিশাল বুলসকে ৩ উইকেটে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। শিরোপা জেতা দল কুমিল্লা তো খুশি হবেই। সেই সঙ্গে রানার্সআপ হয়েও খুশি বরিশালও। কারণ, সবকিছুর উর্ধে যে জয় হয়েছে আসলে ক্রিকেটেরই। চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ একটি ম্যাচ হয়েছে। শেষ বল পর্যন্ত খেলা গড়িয়েছে। সেটি বিপিএলকে যেমন সফল করেছে, তেমনি ক্রিকেটেরই জয় হয়েছে। দুই দলই জেতার কী তীব্র আকাক্সক্ষা দেখিয়েছে! বরিশালের অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ বলেছেন, ‘পুরো টুর্নামেন্টটাই অনেক ভাল ছিল। দেশী-বিদেশী ক্রিকেটাররা সবাই ভাল করেছেন। দেশী কিছু ক্রিকেটার পারফর্মেন্স দিয়ে সামনে আসতে পেরেছে। সবচেয়ে বড় বিষয়, আয়োজনটা সুষ্ঠুভাবে হয়েছে। ম্যানেজমেন্ট দারুণ কাজ করেছে।’ শাহরিয়ার নাফীস যেমন বললেন, ‘গত দুই আসরের বিপিএল আমাদের দেশের ক্রিকেটে পরিবর্তন এনে দিয়েছে। আমরা এই টুর্নামেন্টের অপেক্ষাতে ছিলাম। এটি আমাদের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। এ বছর আমাদের ক্রিকেটের যে সাফল্য সেটাতেও অবদান আছে ওই দুই আসরের।’ তৃতীয় আসরও দেশের ক্রিকেটকে সাফল্যে ভাসাবে, সেই আশাই করা হচ্ছে। সবাই চায় রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ দেখতে। ফাইনাল ম্যাচ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে, এটিই সবার চাওয়া থাকে। সেই চাওয়া ভালভাবেই পূরণ হয়েছে। শেষ ওভারে জিততে ১৩ রানের প্রয়োজন থাকে। অলক কাপালী টানা দুই বলে বাউন্ডারি হাঁকানোর সঙ্গে ম্যাচও জিতিয়ে দেন। শেষ ওভারে কোন দল জিতবে, কেউই ধারণা করতে পারেননি। একবার ম্যাচ কুমিল্লার দিকে, আরেকবার বরিশালের দিকে যে হেলে পড়ে। মাশরাফির কথাতেই স্পষ্ট, তিনিও শেষ ওভারের চাপে ছিলেন। শেষ ওভারের আগে টিভি ক্যামেরায় মাশরাফিকে দেখা গেছে ভিউয়িং এ্যারিয়ায় পায়চারী করতে। মাশরাফি বলেন, ‘শেষ ওভারের আগে পায়চারী করছিলাম। বাংলাদেশ দলের খেলা চলার সময় প্রায়ই ওখানে আমি পায়চারী করি। তেমন কিছুই ছিল।’ কুমিল্লার ক্রিকেটাররা স্বাভাবিকভাবেই আনন্দে আত্মহারা হবেন। ফাইনালে চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে শেষ বলে গিয়ে হারায় বরিশালের ক্রিকেটাররাও খুশি। খুশি কুমিল্লা সমর্থকরাও। হেরেও খুশি বরিশাল সমর্থকরাও। একটিই কারণ, দুর্দান্ত খেলাই যে হয়েছে ফাইনালে। বরিশালের ২০ ওভারে করা ১৫৬ রান অতিক্রম করতে গিয়ে জিততে শেষ বলে ১ রানের প্রয়োজন ছিল। সেই রান নিয়ে ম্যাচ জেতান কাপালী। সেই সঙ্গে কুমিল্লাকে চ্যাম্পিয়নও করান। ফাইনাল খেলায় জেতায় কুমিল্লা নগর-গ্রামজুড়ে আনন্দ উৎসব হচ্ছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার পর থেকেই পুরো কুমিল্লা নগরী থমকে গিয়েছিল। বিপিএল ফাইনাল খেলবে কুমিল্লা, তাই সবাই বসে পড়ে টিভির সামনে। রাত তখন সাড়ে ১০টায়। চারদিক প্রকম্পিত করে গর্জে উঠল। মিছিল শুরু হয়ে যায় চারদিকে। হাঁটা মিছিল, দৌড় মিছিল, মোটরবাইক মিছিল। মিছিলের নগরী হয়ে যায় কুমিল্লা। নগরীর প্রাণকেন্দ্র কান্দির পাড় হয়ে যায় জনসমুদ্র। এমন জয়ে ঘরে ছিল না কেউ। ছেলে-বুড়ো সবাই নেমে আসেন রাস্তায়। মিছিল আর আতশবাজিতে রঙিন হয়ে ওঠে নগরীর অলি-গলি। বরিশাল হারে। তবুও অখুশি নন বরিশালের সমর্থকরা, ক্রিকেটপ্রেমীরা। বিপিএলের উত্তেজনাপূর্ণ ফাইনালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের কাছে হেরে গেলেও বরিশাল বুলসের খেলা নিয়ে গর্বিত বরিশালের ক্রিকেটপ্রেমীরা। ক্রিকেটপ্রেমীদের মতে, শুরু থেকেই দারুণ খেলে ফাইনালে উঠেছে বরিশাল বুলস। ফাইনাল ফাইনালের মতোই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়েছে। মন ভরেছে। খেলা দেখে ক্রিকেটভক্তরা বেজায় খুশি। তবে শেষ বলে বরিশালের নিশ্চিত বিজয় মুকুট কুমিল্লা ছিনিয়ে নেয়ায় কিছুটা হতাশ বরিশালের ক্রিকেটপাগল দর্শকরা। বরিশালের এক ক্রিকেটপ্রেমীক তাওসিফ আহম্মেদ বলেন, ফাইনালে হেরে গিয়েও তাদের কোন আফসোস নেই। কারণ এই টুর্নামেন্টের মাধ্যমে বাংলাদেশে অনেক প্রতিভাবান খেলোয়াড় উঠে এসেছে। আগামী সময়ে তারা বাংলাদেশে জাতীয় দলে খেলবে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের সুনাম কুড়িয়ে আনবে। সেই সঙ্গে দাবি উঠেছে বরিশালে খেলা দেয়ারও। বরিশালে খেলা হবে কি না, তা এখনই নিশ্চিত নয়; তবে ভেন্যু বাড়বে আগামী আসরে। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনই বলেছেন, ‘বিপিএলের এই তুমুল জনপ্রিয়তা দেখে আমরা উচ্ছ্বসিত। আগামী বছরের নবেম্বরে বিপিএলের চতুর্থ আসর আয়োজনের ভাবনা আছে আমাদের। এবার ঢাকা ও চট্টগ্রামে যে জনপ্রিয়তা দেখেছি, তাতে আগামী আসর আরও ছড়িয়ে দেয়া হবে। হয়ত সিলেটসহ আরও ভেন্যুতে খেলা হবে। বাড়বে দল সংখ্যাও।’ ক্রিকেটে এটাই ইতিবাচক দিক। জনপ্রিয়তায় দল ও ভেন্যু বাড়াতে হবে এখন। সঙ্গে হার-জিত যাই হোক, দুর্দান্ত ফাইনাল হয়েছে। আর তাতে করে জয়ী দল তো চ্যাম্পিয়ন হয়ে খুশি হয়েছেই, হারা দলও অখুশি নয়। ক্রিকেটের জয় তো এটাকেই বলে।
×