মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ বিজয় দিবসের উল্লাস ছড়িয়ে পড়েছে রাজশাহীর ভোটের মাঠে। বুধবার থেকে ভোটের প্রচারে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। প্রার্থীদের সরগরম প্রচারে এখন উদ্বেলিত রাজশাহীর ১৩ পৌরসভার পাড়া-মহল্লা। এখন আর কোন প্রার্থী বসে নেই। সবাই নিজ নিজ কর্মী সমর্থকদের নিয়ে নেমে পড়েছেন প্রচারে। আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরুর দুদিনের মধ্যে প্রার্থীদের পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে ভোটের মাঠ। কোথাও ফাঁকা নেই। এখন গ্রামের (পৌর এলাকায়) পথে পা বাড়ালেই চোখে পড়বে প্রার্থীদের ভোটের পোস্টার। মেয়র থেকে শুরু করে কাউন্সিলর প্রার্থীদের পোস্টারে ঢাকা পড়েছে পুরো এলাকা।
বুধবার বিজয় দিবসের সকালে জেলার পবা উপজেলার নওহাটা পৌর এলাকায় গিয়ে দেখা যায় বিভিন্ন চায়ের স্টলে মানুষের জটলা। মুখরোচক আলাপ-আলোচনা। কে জিতবেন, কার অবস্থান কেমন, কাকে ভোট দেয়া যায়- এমন হিসাব নিকাশ কষছেন সবাই। এরই মধ্যে কেউ কেউ নিজেদের প্রার্থীর পক্ষে তর্ক-বিতর্কেও জড়িয়ে পড়ছেন। উত্তেজনাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে তা আবার নিমিষেও প্রশমিত হচ্ছে। আর প্রার্থীরা ভোটারদের মন জয় করতে দিচ্ছেন নানা ধরনের উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি।
রাজশাহীর ১৩ উপজেলায় পৌর নির্বাচনে মেয়রদের জয়-পরাজয় নিয়ে এরই মধ্যে প্রেস্টিজ ইস্যুতে পরিণত হয়েছে স্থানীয় দলীয় নেতাদের। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীদের নিয়ে রীতিমতো প্রেস্ট্রিজ ইস্যু হয়েছে একজন প্রতিমন্ত্রী ও ৬ এমপির। আর বিএনপির নেতাদের মধ্যে বিভক্ত থাকলেও ভোটের মাঠে শেষ পর্যন্ত একাট্টা হয়ে দলীয় প্রার্থীদের পক্ষেই অবস্থান নিচ্ছেন।
রাজশাহীর তানোর ও গোদাগাড়ীতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে চার পৌরসভার নির্বাচন। এ চারটি পৌরসভায় গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ২ জন, বিএনপি ও জামায়াতের একজন করে মেয়র ছিলেন। এবারও তারা প্রার্থী হয়েছেন। এখানকার এমপি ও রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরীর জন্য দলীয় প্রার্থীদের জেতানোর ক্ষেত্রে প্রেস্টিজ ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ দুই উপজেলার তানোর, মুন্ডুমালা, গোদাগাড়ী ও কাকনহাটে রয়েছে শক্তিশালী বিএনপির প্রার্থী। তাদের পেছনে রয়েছেন এক সময়ের প্রভাবশালী বিএনপির নেতা সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হক। স্থানীয়রা বলছেন এ দুই উপজেলায় নির্বাচন পৌরসভার হলেও প্রেস্ট্রিজ ইস্যুতে পরিণত হয়েছে হেভিওয়েট দুই নেতা সাবেক প্রতিমন্ত্রী ওমর ফারুক চৌধুরী ও ব্যারিস্টার আমিনুলের মধ্যে।
জেলার পবা ও মোহনপুর উপজেলায় রয়েছে তিনটি পৌরসভা (নওহাটা, কেশরহাট ও খাটাখালি)। এখানে মর্যাদার লড়াই শুরু হয়েছে স্থানীয় এমপি আয়েন উদ্দিনের। তার আশা তিনটিতেই বিদ্রোহী দমনে সামর্থ্য হওয়ায় তাদের প্রার্থী বেরিয়ে আসবে। জেলার বাঘা ও চারঘাটে আড়ানী ও চারঘাট পৌরসভায় নির্বাচন নিয়ে প্রেস্ট্রিজ ইস্যু বর্তমান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের। এখানে একজন নারী প্রার্থী রয়েছেন। বিপরীতে রয়েছেন বিদ্রোহীও। ফলে বিএনপির এক সসময়ের শক্ত অবস্থান ভেদ করে আওয়ামী লীগের জয়ের ব্যাপারে বেগ পেতে হবে।
এছাড়া জেলার বাগমারা, দুর্গাপুর ও পুঠিয়া উপজেলায় আরো চারটি পৌরসভায় নির্বাচন হচ্ছে। এগুলো হলো ভবানীগঞ্জ, তাহেরপুর, দুর্গাপুর ও পুঠিয়া। দুর্গাপুর ও পুঠিয়ায় স্থানীয় এমপি আব্দুল ওয়াদুদ দারা তার দুটি পৌরসভায় বিদ্রোহী দমনে ব্যর্থ হয়েছেন। এ দুটিতে বিএনপির প্রার্থীরা শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। ফলে দলীয় প্রার্থীদের জয়ের সাফল্য নিয়ে সংশয় রয়েছে। বাগমারার দুটি পৌরসভায় আওয়ামী লীগের শক্ত অবস্থান রয়েছে। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী নেই। স্থানীয় সাংসদ এনামুল হক পক্ষের প্রার্থীদের জেতানোর জন্য কাজ করছেন। সরাসরি এসব এমপি ও প্রতিমন্ত্রী ভোটের মাঠে না থাকলেও তাদের কৌশল অবলম্বন করেই প্রার্থীরা চষে বেড়াতে শুরু করেছেন ভোটের মাঠ।
সবমিলিয়ে ভোটের দিন যতই ঘনিয়ে আসেছে মাঠের প্রচার ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভোটাররা বলছেন জেলার সব উপজেলায় নৌকা প্রতীকের সঙ্গে তুমুল লড়াই হবে ধানের শীষের প্রার্থীদের। বিএনপির প্রার্থীরাও সর্বশক্তি নিয়ে মাঠের প্রচার শুরু করেছেন। তবে এবার বেশিরভাগ পৌরসভায় আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী দমনে সফল হওয়ায় জয়ের ব্যাপারেও তারা আশাবাদী।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: