ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

জলঢাকা ও সৈয়দপুর পৌরসভা

দলীয় অফিসে রান্না-খাওয়া ॥ এক কাতারে ঘুম

প্রকাশিত: ০৬:৫১, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৫

দলীয় অফিসে রান্না-খাওয়া ॥  এক কাতারে ঘুম

তাহমিন হক ববি, নীলফামারী ॥ হিমালয়ের গা বেয়ে ধেয়ে আসা শীতল বাতাস চারদিকে হু-হু করে বইছে। প্রার্থীরা শরীরে শীতের পোশাক মুড়িয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ভোট প্রার্থনায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রতীক বরাদ্দের পর শীতের কনকনে ঠা-া সত্ত্বেও গণসংযোগে ব্যস্ত প্রার্থীরা। জলঢাকা পৌরসভায় ৬ জন মেয়র প্রার্থী, সংরক্ষিত ৩টি নারী আসনে ১৪ জন ও ৯টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ৪২ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মেয়র প্রার্থীরা হলেন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে আব্দুল ওয়াহেদ বাহাদুর, নারিকেল গাছের প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ইলিয়াস হোসেন বাবলু, বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে ফাহমিদ ফয়সাল কমেট চৌধুরী, লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে জাতীয় পার্টির শাহ্ আব্দুল কাদের চৌধুরী বুলু, জগ প্রতীক নিয়ে জলঢাকা পৌর জামায়াতের আমির মকবুল হোসেন ও হাতপাখা প্রতীক নিয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শরিফুল ইসলাম। অপর দিকে সৈয়দপুর পৌরসভায় ৪ জন মেয়র প্রার্থী ও সংরক্ষিত ৫টি নারী আসনে ১৮ জন ও ১৫টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ৭২ জন প্রার্থী রয়েছেন। এদের মধ্যে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে সাখাওয়াৎ হোসেন খোকন, বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে আমজাদ হোসেন সরকার ভজে, লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে জাতীয় পার্টির জয়নাল আবেদীন ও হাতপাখা প্রতীক নিয়ে ইসলামী আন্দোলনের নুরুল হুদা রয়েছে। প্রচার-প্রচারণায় নতুন নতুন কৌশলে ব্যস্ত প্রার্থীরা। দলীয় অফিসেই বড় বড় ডেগচিতে রান্না হচ্ছে। খাওয়া-দাওয়া সেরে আবারও জনসংযোগে নামছেন মেয়র প্রার্থী ও তাদের সমর্থক কর্মীরা। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন প্রার্থীরা, সঙ্গে ছড়াচ্ছেন রকমারি প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি। প্রথম শ্রেণীর সৈয়দপুর পৌরসভায় মেয়র আসন দখলে ব্যস্ত আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীরা। প্রচার শেষে এক কাতারে কাঁথা, কম্বল ও বালিশ নিয়ে সারি করে ঘুমাচ্ছেন মেয়র-কর্মীরা। ভোটারদের মধ্যে উর্দুভাষী (বিহারি) ভোটারের সংখ্যা প্রায় ৩৮ হাজার। নৌকা ও ধানের শীষে প্রধান লড়াই হবে বলে ভোটাররা জানাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী অধ্যাপক সাখাওয়াৎ হোসেন খোকন বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাতে তিন ঘণ্টাও ঘুমাতে পারি না। আওয়ামী লীগ শুধু না, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, কৃষকলীগ ও সহযোগী অঙ্গ-সংগঠনের নেতাদেরও একই অবস্থা। বিএনপির প্রার্থী অধ্যক্ষ আমজাদ হোসেনও দলীয় অফিসকে বাসাবাড়িতে রূপান্তর করেছেন। পৌর বিএনপির অফিসে কাঁথা-কম্বল নিয়ে রাত কাটাচ্ছেন, সঙ্গে কর্মীদের শক্তি জোগাতে ভূরিভোঁজের ব্যবস্থা তো রয়েছেই। দলীয় অফিসে বসবাস প্রসঙ্গে এ প্রার্থী বলেন, পার্টি অফিসে নিজেরা রান্না করছি, খাচ্ছি। কর্মীরা যে যা পাচ্ছে তাই রান্না করছে। আমার কাছে সবাই নেতা। সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছি। আচরণবিধি মেনে চলছি। এদিকে জলঢাকা দেখা যায় আরেক চিত্র। নিয়ম অনুযায়ী দুপুর ২টার পর পিক-আপ ভানের ওপরে বসানো হয়েছে বড় বড় সাউন্ড বক্স। এর সামনে ও পেছনে সাঁটানো হয়েছে নৌকা প্রতীক সম্বলিত পোস্টার। ভোটারদের কাছে টানতে সাউন্ড বক্সে নানা ধরনের গান বেজে উঠছে ক্ষণে ক্ষণে। এর পাশাপাশি বলা হচ্ছে, বাহাদুর ভাইয়ের সালাম নিন নৌকা মার্কায় ভোট দিন। এর কিছুক্ষণ পরে আবার মাইকে ভেসে আসছে, সামনে আসছে শুভ দিন, বাবলু ভাইকে নারকেল গাছ মার্কায় ভোট দিন। প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর পরই নতুন মাত্রা নিয়েছে জলঢাকা পৌরসভার প্রচার-প্রচারণায়। জলঢাকা পৌরসভায় শুরু হয়ে গেছে মামা আবদুল ওয়াহেদ বাহাদুরের নৌকা ও ভাগ্নে বর্তমান মেয়র ইলিয়াস হোসেন বাবলুর আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নারকেল গাছ মার্কার লড়াই। একে অপরে বাকযুদ্ধেও নেমে পড়েছেন। জনপ্রিয়তায় কেউ কোন অংশে কম নয়। প্রতীক বরাদ্দের পর পরই ভোটযুদ্ধে নেমে পড়েছেন মামা ও ভাগ্নে। অনেকে বলছেন, জলঢাকা পৌরসভায় ত্রিমুখী লড়াই হবে। ভোটার সহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের এখানে নৌকা, ধানের শীষ ও নারকেল গাছের লড়াই হবে। ভোট প্রসঙ্গে বিএনপির প্রার্থী ফাহমিদ ফয়সাল কমেট চৌধুরী জামায়াতের স্বতন্ত্র প্রার্থী মকবুল হোসেন কে কোন ফ্যাক্টর মনে করছেন না।
×