ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আর্থিক সঙ্কটে পড়েছে মিলগুলো

খুলনা অঞ্চলের ৭ পাটকলে ৭৮ লাখ বস্তা অবিক্রীত

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৫

খুলনা অঞ্চলের ৭ পাটকলে ৭৮ লাখ বস্তা অবিক্রীত

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস ॥ খুলনা অঞ্চলের ৭টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলে প্রায় ৭৮ লাখ পাটের বস্তা অবিক্রীত অবস্থায় রয়েছে। বিপণন ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে মিলগুলোতে উৎপাদিত বস্তার স্তূপ জমেছে। বস্তা বিক্রি যথাসময়ে করতে না পারায় মিলগুলো আর্থিক সঙ্কটে পড়েছে। অর্থাভাবে প্রয়োজনীয় কাঁচা পাট কেনাও সম্ভব হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সরকার ধান, চালসহ ৬টি পণ্যের মোড়কে পাটের বস্তার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে। পাটের মোড়ক বাধ্যতামূলক আইন-২০১০ এর বাস্তবায়নের জন্য বস্তা উৎপাদনে জোর দিয়েছে বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশন (বিজেএমসি)। এজন্য বিজেএমসি নিয়ন্ত্রিত মিলগুলোতে গত এক মাস ধরে পাটের বস্তা তৈরি করা হচ্ছে। যে হারে পাটের বস্তা তৈরি করা হচ্ছে সেভাবে বিক্রি হচ্ছে না, সে কারণে খুলনা অঞ্চলের ৭টি পাটকলে প্রায় ৭৮ লাখ বস্তা বিক্রির অপেক্ষায় রয়েছে। যথাসময়ে বস্তা বিক্রি না হওয়ায় ওই মিলগুলোতে অর্থ সঙ্কট দেখা দিয়েছে। টাকার অভাবে মিলগুলো প্রয়োজনীয় কাঁচা পাট কিনতে পারছে না। মিলগুলোতে ৩ থেকে ১০ দিনের পাট মজুদ আছে বলে সূত্র জানিয়েছে। সূত্র জানায়, পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার নিশ্চিত করতে গত ৩০ নবেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হয়েছিল। ওই সময় সারাদেশে পাটের বস্তার চাহিদা বেড়ে যাবে- এমন ধারণা থেকে পাটের বস্তার উৎপাদন বাড়ানোর নির্দেশ দেয় পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়। বিজেএমসিকে দায়িত্ব দেয়া হয় দিনে ৭ লাখ পাটের বস্তা তৈরির জন্য। এরমধ্যে খুলনা-যশোর অঞ্চলের ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, খালিশপুর, দৌলতপুর, স্টার, ইস্টার্ন ও যশোর জুট ইন্ডাস্ট্রি (জেজেআই) এই ৭টি পাটকলের জন্য দৈনিক উৎপাদন টার্গেট দেয়া হয় ২ লাখ ৬৩ হাজার পিস বস্তার। বস্তা তৈরির জন্য বিজেএমসি থেকে পাট কেনার জন্য টাকাও দেয়া হয়। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী মিলগুলো বস্তা তৈরি করছে। কিন্তু বিপণন ব্যবস্থার ত্রুটির কারণে যথাসমেয়ে বস্তা বিক্রি হচ্ছে না। বস্তা বিক্রির জন্য সারাদেশে মাত্র ১৩৫ জন ডিলার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সঙ্কট নিরসনে অঞ্চলভেদে আরও ডিলার নিয়োগ দেয়া প্রয়োজন বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। বিজেএমসির খুলনা আঞ্চলিক অফিস সূত্রে জানা যায়, খুলনা জোনের অধীন যশোরের নওয়াপাড়ায় অবস্থিত কার্পেটিং জুটমিল ব্যতীত সাতটি পাটকলে বস্তা তৈরি করা হয়। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত ওই ৭টি মিলে ম্যান্ডেটরি প্যাকেজিং এ্যাক্টের আওতায় তৈরি মোট ৭২ লাখ ৭৭ হাজার বস্তা অবিক্রীত রয়েছে। এরমধ্যে ক্রিসেন্ট জুটমিলে ১৬ লাখ ৯০ হাজার, প্লাটিনাম জুটমিলে ১৫ লাখ ৬১ হাজার, খালিশপুর জুটমিলে ১৫ লাখ ৫৭ হাজার, দৌলতপুর জুটমিলে ৩ লাখ ২৩ হাজার, স্টার জুটমিলে ৯ লাখ ৪৭ হাজার, ইস্টার্ন জুটমিলে ৫ লাখ ৪২ হাজার ও জেজেআই জুটমিলে ৬ লাখ ৫৮ হাজার পিস বস্তা রয়েছে। এছাড়া ক্রিসেন্ট জুটমিলে পূর্বের তৈরি প্রায় ৫ লাখ বস্তা বিক্রির অপেক্ষায় রয়েছে। বিজেএমসির খুলনা আঞ্চলিক লিয়াজোঁ অফিসার মোঃ মহব্বত আলী মিঞা বলেন, পাটের বস্তা বাজারজাতকরণে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ডিলার না থাকায় সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। দেশের কুষ্টিয়া, দিনাজপুরসহ যে সকল জেলায় ফসল উৎপাদন বেশি হয় সেসব এলাকায় ডিলার সঙ্কট রয়েছে। সারাদেশে মাত্র ১৩৫ জন ডিলার দেয়া হয়েছে। কমপক্ষে আরও দেড় শ’ ডিলার দেয়া প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
×