ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক সম্মানী ভাতা বাড়ানো হয়েছে

প্রকাশিত: ০৭:৫২, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৫

খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক সম্মানী ভাতা বাড়ানো হয়েছে

এম শাহজাহান ॥ খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক সম্মানী ভাতা বাড়ানো হয়েছে। এর আগে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় হতে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ পরিবারবর্গের মাসিক সম্মানী ভাতা পুনর্নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়। এই প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে অর্থ বিভাগ। আগামী ১ জানুয়ারি থেকে বর্ধিত ভাতা পাবেন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। জানা গেছে, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা বৃদ্ধি করে অর্থমন্ত্রীর জন্য এ বিষয়ে একটি সারসংক্ষেপ তৈরি করেছে বাজেট অনুবিভাগ। এতে সাতজন বীরশ্রেষ্ঠর পরিবারের জন্য মাসিক ৩০ হাজার টাকা ভাতা প্রদানের সুপারিশ করেছে অর্থ বিভাগ। বর্তমানে ১২ হাজার টাকা করে বীরশ্রেষ্ঠদের পরিবারকে ভাতা দেয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে ভাতা বৃদ্ধির হার প্রায় ১৫০ শতাংশ। এছাড়া ৬৮ জন বীরউত্তমের ভাতা ১০ হাজার থেকে বৃদ্ধি করে ২৫ হাজার টাকা, ১৭৫ জন বীরবিক্রমের ভাতা ৮ হাজার থেকে বৃদ্ধি করে ২০ হাজার টাকা, ৪২৬ জন বীরপ্রতীকের ভাতা ৬ হাজার থেকে বৃদ্ধি করে ১৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ‘এ’ শ্রেণীতে ২০ জন, ‘বি’ শ্রেণীতে ১৫৬ জন, ‘সি’শ্রেণীতে ২ হাজার ৩২৯ জন, ‘ডি’ শ্রেণীতে ২ হাজার ৫৩২ জন, ২ হাজার ৫০০ শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার, মৃত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ৩০৩, বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ পরিবার ৭ ও তারামন বিবি বীরপ্রতীক একজনসহ মোট ৭ হাজার ৮৩৮ জনের ভাতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এদিকে, মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বীর মুক্তিযোদ্ধারা (সাধারণ) বর্ধিত হারে ভাতা পাচ্ছেন। ভাতা পাঁচ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ইতোমধ্যে আট হাজার টাকা করা হয়েছে। চলতি বছরের জুলাই থেকে এটিকে কার্যকর করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় দেশের সকল জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে চিঠি পাঠিয়েছে। এছাড়া সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক ভাতা বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকা করার ঘোষণা করেছেন। সশস্ত্রবাহিনী দিবস উপলক্ষে ঢাকা সেনানিবাসে সশস্ত্রবাহিনী বিভাগে বীরশ্রেষ্ঠদের উত্তরাধিকারী এবং নির্বাচিতসংখ্যক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরাধিকারীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এই ঘোষণা দেন তিনি। ওই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক সম্মানী ভাতার পরিমাণ ৯০০ টাকা থেকে চার দফা বাড়িয়ে বর্তমানে ৫,০০০ টাকা করা হয়। ভাতা ভোগীর সংখ্যা এক লাখ থেকে বাড়িয়ে দুই লাখ করা হয়েছে। জানা গেছে, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের বর্তমান ভাতার হার ২০১৩ সালের ১ জুলাই থেকে কার্যকর আছে এবং চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এ বাবদ বাজেটে বরাদ্দ রাখা আছে ৬ কোটি টাকা। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, মাসিক ভাতা বৃদ্ধি করে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার ৩০ হাজার টাকা, বীরউত্তম ২৫ হাজার টাকা, বীরবিক্রম ২০ হাজার টাকা এবং বীরপ্রতীক ১৫ হাজার টাকা করা যেতে পারে। এতে বার্ষিক অতিরিক্ত ৯ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। এছাড়া যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার মৃত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা পরিবার এবং বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ পরিবারের সদস্যদের ভাতাও পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ‘এ’ শ্রেণী বিবিধ ভাতা ২২শ’, সাহায্যকারী ভাতা ৮ হাজার থেকে বৃদ্ধি করে ১০ হাজার ২০০ থেকে ১১ হাজার টাকা করা যেতে পারে এবং ‘এ’ শ্রেণীর মোট ভাতা হবে ৪৮ হাজার টাকা। মোট ভাতা বৃদ্ধি ৬০ শতাংশ। এছাড়া এ, বি, সি ও ডি চারটি শ্রেণীকে তিন শ্রেণীতে পরিবর্তনের স্বার্থে বর্তমানে ‘বি’ ও ‘সি’ শ্রেণীকে একীভূত শ্রেণী করা যেতে পারে এবং একীভূত ‘বি’ শ্রেণীর জন্য প্রস্তাবিত ‘বি’ শ্রেণীর ভাতা ৩৫ হাজার টাকা প্রদান করা যেতে পারে। চিকিৎসা ভাতা সকলের জন্য ১৭শ’ টাকা হতে বৃদ্ধি করে ২ হাজার টাকা খাদ্য ভাতা চার হাজার টাকা বৃদ্ধি করে চার হাজার টাকা করা যেতে পারে। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় মৃত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ভাতার অঙ্ক উল্লেখ করেনি। তাই খেতাবপ্রাপ্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাগণের মৃত্যুর পর তার পরিবারকে একটি নির্ধারিত হারে ভাতা প্রদানের বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। যেহেতু মৃত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা পরিবার পূর্বেও ভাতা পেয়ে এসেছে। সুতরাং তাদের মূল ভাতা বৃদ্ধি করে ১৫ হাজার টাকা, চিকিৎসা ভাতা দুই হাজার টাকা এবং খাদ্য ভাতা পাঁচ হাজার টাকা অর্থাৎ মোট ২২ হাজার টাকা করা যেতে পারে। এই প্রস্তাবমতে, ভাতাসমূহ বৃদ্ধি করা হলে বার্ষিক মোট খরচ হবে ২৬৩ কোটি ৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ বার্ষিক অতিরিক্ত ১২১ কোটি ৩৭ লাখ টাকার প্রয়োজন হবে। এদিকে, বাংলাদেশ জাতীয় খেতাবপ্রাপ্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবার কল্যাণ পরিষদ কেন্দ্রীয় কমান্ড ‘এ’ থেকে ‘সি’ গ্রেড ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা ভাতা পার্থক্য রাখার জন্য শহীদ পরিবার ও মৃত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ভাতা বৈষম্য দূর করে ‘সি’ গ্রেডের সমপরিমাণ ভাতা প্রদানের অনুরোধ করেছে। প্রস্তাবমতে, শ্রেণী একীভূত করার ফলে আবেদনে উল্লিখিত শ্রেণীসমূহের ভাতা বৈষম্য কমে আসবে এবং প্রস্তাবমতে, মৃত যুদ্ধাহত পরিবারের ভাতা বৃদ্ধি পেয়ে পূর্বের ন্যায় শহীদ পরিবারের সমান হবে। অর্থ সচিব মাহবুব আহমেদ খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বৃদ্ধির বিষয়টিকে একটি উত্তম প্রস্তাব হিসেবে বিবেচনা করছেন।
×