ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিজয় দিবসের আয়োজন

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৫

বিজয় দিবসের আয়োজন

সাজু আহমেদ ॥ আগামীকাল ১৬ ডিসেম্বর। বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলাদেশ নামের একটি দেশের অভ্যুদয় হয়। তবে এর আগে নয় মাস সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে বাংলাদেশের মানুষকে। স্বাধীনতার জন্য পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছে বাংলাদেশের বীর সেনানীরা। তবে বিনিময়ে ৩০ লাখ মানুষের প্রাণ এবং দুই লাখ মা বোনদের সম্ভ্রম দিতে হয়েছে। এর বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে লাল সবুজের পতাকা ও স্বাধীন মানচিত্র। তাই বাংলাদেশী বাঙালীদের জাতীয় জীবনে ১৬ ডিসেম্বর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। এটি বিজয়ের দিন, আনন্দের দিন। এই দিন স্মরণে বরাবরে মতো দেশব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। সরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেসরকারী বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচী পালনের উদ্যোগ নিয়েছে। বিটিভি এবং বাংলাদেশ বেতারসহ দেশের বিভিন্ন স্যাটেলাইট চ্যানলে ও এফএম রেডিওগুলো বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করছে। বিজয় দিবসের বিভিন্ন আয়োজন নিয়ে এই প্রতিবেদন। ‘মুক্তির কথা বিজয়ের গান’ : নন্দিত নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ফাগুন অডিও ভিশন এবারও নির্মাণ করেছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘মুক্তির কথা বিজয়ের গান’। ভিন্ন আঙ্গিকের অনুষ্ঠানটিতে সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় ৪ সঙ্গীত শিল্পী। তারা হলেনÑ রফিকুল আলম, এ্যান্ড্রু কিশোর, ফাহমিদা নবী ও এস আই টুটুল। মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধ ও বিজয় নিয়ে শিল্পীরা তাদের পছন্দের ও ভাললাগা গান পরিবেশন করেছেন এই অনুষ্ঠানে। গান পরিবেশনের আগে বিজয় দিবস ও তাদের গান নিয়ে তাদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন শিল্পীরা। এছাড়াও অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন এমন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা সুলেমান আলীÑ যিনি ১৯৭১ এ সিলেটের হবিগঞ্জে সম্মুখযুদ্ধে লড়েছিলেন, তার ওপর রয়েছে বিশেষ প্রতিবেদন। রয়েছে মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়ার রাঙ্গিছড়া চা বাগানের সুদর্শন রবিদাশের ওপর একটি উদ্বুদ্ধকরণ প্রতিবেদন। এনটিভির আয়োজন : মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বুধবার এনটিভিতে দিনব্যাপী প্রচার হবে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। সকাল ৬-৫৫ মিনিটে প্রচার হবে বিশেষ সঙ্গীতানুষ্ঠান ‘হৃদয়ে চির ভাস্বর’। প্রযোজনা করেছেন ওয়াহিদুল ইসলাম শুভ্র। সকাল ৮-৪৫ মিনিটে প্রচার হবে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিশেষ চলচ্চিত্র ‘জীবনঢুলি’। সরকারী অনুদানে নির্মিত এ চলচ্চিত্রটির চিত্রনাট্য রচনা ও পরিচালনা করেছেন তানভীর মোকাম্মেল। অভিনয় করেছেন শতাব্দী ওয়াদুদ, জ্যোতিকা জ্যোতি, রামেন্দু মজুমদার, প্রাণ রায়, ওয়াহিদা মল্লিক জলি, রাফিকা ইভা, পাভেল ইসলাম, চিত্রলেখা গুহ, উত্তম গুহ, রিয়াজ মাহমুদ জুয়েল, মৃণাল দত্ত, পরেশ আচার্য্য, তবিবুল ইসলাম বাবু প্রমুখ। সকাল ১০-২৫ মিনিটে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ড থেকে সরাসরি সম্প্রচার হবে বিজয় দিবসের বিশেষ কুচকাওয়াজ। বেলা ১২-২০ মিনিটে প্রচার হবে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘সুরে ছন্দে আমার দেশ’। ওয়াহিদুল ইসলাম শুভ্রর প্রযোজনায় অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেছেনÑ পরশী, ইবরার টিপু, শুভ, নির্ঝর ও পারভেজ। ১-০৫ মিনিটে প্রচার হবে বিশেষ নাটক ‘চশমা’। ফেরদৌস হাসানের রচনা ও পরিচালনা নাটকটিতে অভিনয় করেছেনÑ অপূর্ব, মৌসুমী হামিদ, দিলারা জামান, আল মনসুর, নূপুর, সিদ্দিক মাস্টার, কেয়া, রাসেল, রাজ ও সিয়ামাত। বেলা ২-৩০ মিনিটে সরাসরি সম্প্রচার হবে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘প্রেরণায় মাটির গান প্রাণের কবিতা’। মুক্তিযুদ্ধের সময়কার রচিত ও পরিবেশিত লোকজ সুরের সঙ্গীত ও কবিতা নিয়ে বিশেষ এ অনুষ্ঠানটি সাজানো হবে। অংশগ্রহণ করেছেনÑ শাহীন সামাদ, মামুন জাহিদ, মাহিদুল ইসলাম, নওরোজ ইমতিয়াজ ও তামান্না ডেইজী। জাহাঙ্গীর চৌধুরীর প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন ড. আফসার আহমেদ। বিকাল ৫-৪০ মিনিটে প্রচার হবে নৃত্যানুষ্ঠান লাল সবুজের প্রলয়। বিশেষ নৃত্যানুষ্ঠান ‘লাল সবুজের প্রলয়’। অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশন করেছেনÑ রিয়া, সাবিলা, রতি, তমা মির্জা, জ্যোতি প্রমুখ। সন্ধ্যা ৬-৪৫ মিনিটে প্রচার হবে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘ভিন্ন স্বর অভিন্ন সুর’। রাত ৯-০৫ মিনিটে প্রচার হবে বিশেষ নাটক ‘ওয়ার্কশপ’। মুহাম্মদ জাফর ইকবালের গল্প অবলম্বনে নাটকটির চিত্রনাট্য রচনা ও পরিচালনা করেছেন গোলাম সোহরাব দোদুল। অভিনয় করেছেন আবুল হায়াত, শতাব্দী ওয়াদুদ, সাদিয়া জাহান প্রভা প্রমুখ। এসএটিভির মনোবীণাা : মহান বিজয় দিবসে এসএ টিভির বিশেষ আয়োজন মনোবীণা। যন্ত্র সঙ্গীতভিত্তিক অনুষ্ঠান মনোবীণায় শুধুমাত্র নারী শিল্পীরা অংশগ্রহণ করেছেন। ৬ জন নারী যন্ত্রশিল্পীর বাদ্যযন্ত্রে সুরের মূর্ছনায় ভেসে উঠবে ৫টি দেশাত্ববোধন গান। বিকাশ সরকারের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচার হবে বুধবার ১২-০৫ মিনিটে। স্মরণের উৎসব : কাল সন্ধ্যা ৫-৩০ মিনিটে প্রচার হবে সঙ্গীতানুষ্ঠান ‘স্মরণের উৎসব’। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের বরেণ্য শিল্পীদের গাওয়া চারটি দেশের গান দিয়ে সাজানো হয়েছে অনুষ্ঠানটি। শিল্পী আপেল মাহামুদের উপস্থাপনায় এতে সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন রফিকুল আলম, উমা খান, তপন মাহামুদ এবং আপেল মাহামুদ। ‘কচিকাঁচার ৭১’ : মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে একুশে টেলিভিশনের আয়োজনে নির্মিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক শিশুতোষ বিশেষ অনুষ্ঠান ‘কচিকাঁচার ৭১’। আফসানা মিমির উপস্থাপনায় এবং দূরের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি কাল বুধবার একুশে টেলিভিশনে সন্ধ্যা ৬-৩০ মিনিটে প্রচার হবে। বর্তমান প্রজন্মের শিশু কিশোদের মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানানো এবং মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করা হবে অনুষ্ঠানটিতে। সঙ্গীতানুষ্ঠান ‘অপরাজিতা বাংলা মাগো’ : অনেক রক্তের বিনিময়ে আমাদের স্বাধীনতা আমাদের বিজয়। স্বাধীন দেশের মাটিকে নিয়ে শিল্পীরা গেয়েছেন অনেক গান। সেই বিজয়কে ঘিরে চারজন জনপ্রিয় শিল্পীকে নিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে বিশেষ সঙ্গীতানুষ্ঠান ‘অপরাজিতা বাংলা মাগো’। অনুষ্ঠানটিতে সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন সৈয়দ আব্দুল হাদী, আবিদা সুলতানা, ফাহমিদা নবী এবং সেলিম চৌধুরী। বেন্জীর ইসরাতের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানটি প্রযোজনা করেছেন মারিয়। অনুষ্ঠানটি কাল রাত ৯-৩০ মিনিটে একুশেটিভিতে প্রচার হবে। ‘বীর উত্তম শামসুল আলমের অজানা কথা’ : দীপ্ত টিভিতে কাল রাত সাড়ে ৮টায় প্রচার হবে প্রামাণ্যচিত্র ‘বীর উত্তম শামসুল আলমের অজানা কথা।’ ষাটের দশকের শেষের দিকে পশ্চিম পাকিস্তানে কর্মরত তরুণ বাঙালী বৈমানিক শামসুল আলমের দিনগুলো কাটছিল নির্ভাবনায়। সত্তরের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে ত্রাণ দিতে এসে এ দেশ নিয়ে পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষের তীব্র অবহেলা চোখে পড়ে শামসুলের। তার মনে হয় জন্মভূমি পূর্ব পাকিস্তানকে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে বঞ্চিত করা হচ্ছে। পরবর্তীতে একাত্তরে ক্ষমতার লালসায় পশ্চিম পাকিস্তানী মিলিটারিরা যখন বাঙালীদের ওপর নৃশংস হত্যাযজ্ঞ শুরু করে, তখন দেশমাতৃকার টানে ফ্লাইট লেফট্যানেন্ট শামসুল আলম পাকিস্তান থেকে পালিয়ে আসেন ঢাকায়। আর এসেই ধরা পড়ে যান। কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের নির্যাতন সহ্য করে একটা সময় কৌশলে বের হয়েও আসেন। যান সশস্ত্র যুদ্ধে যোগ দিতে। ভারতের মাটিতে শামসুল আলমের সামনেই গঠিত হয় স্বাধীন বাংলাদেশের বিমান বাহিনী। অপারেশন কিলো ফ্লাইট নামে মৈত্রী বাহিনীর বিমান আক্রমণের সূচনা হয় শামসুল আলমের মতো বীরদের হাত দিয়েই।যুদ্ধের জন্য অনুপযুক্ত দুটি বিমান নিয়েই ধ্বংস করে দেয় পাকিস্তানী সেনাদের প্রয়োজনীয় তেলের মজুদ। এরপর থেকে পর্যায়ক্রমে পরাজিত হতে থাকে পাকিস্তানীরা। বাংলাদেশ এগিয়ে যায় বিজয়ের দিকে। শামুসল আলমের কথায় উঠে আসবে সে সব নানা তথ্য।
×