ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পীদের বিজয় দিবস স্মরণ

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৫

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের  শিল্পীদের বিজয় দিবস স্মরণ

শিল্পী ড.অরূপ রতন চৌধুরী: আমরা যে যার অবস্থান থেকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিলাম তাঁরা এটা ভেবে শান্তি পাচ্ছি যে, স্বাধীনতার ৪৪ বছর পরও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দেখে যেতে পারছি। এটা আমাদের জন্য বড় রকমের এক পাওয়া। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র ছাড়া বিশ্বের এমন কোন রেডিও স্টেশন নেই যেখান থেকে একটি দেশের যুদ্ধকার্য পরিচালনা হয়েছে। একাত্তরে এখান থেকে সব খবর ও তথ্য প্রচার হতো। শিল্পীরা গান গেয়ে উজ্জীবিত করতেন মুক্তিযোদ্ধাদের। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের অবদান অসামান্য। যারা স্বাধীন বাংলা বেতারের কন্ঠ সৈনিক বা কলাকুশলী সবাই মুক্তিযোদ্ধা, তাদের সবার ছবি রাখা হবে জাতীয় জাদুঘরে। কিন্তু এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র একটা রেডিও স্টেশন ছাড়া, মুক্তিযুদ্ধের একটা সেক্টর হিসেবে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রকে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। শাহীন সামাদ: আমরা যে লক্ষ ও উদ্দেশ্য নিয়ে একাত্তরে যুদ্ধে ঝাঁঁিপয়ে পড়েছিলাম তা হয়ত পুরোপুরি অর্জন হয়নি, কিন্তু সে যুদ্ধের ফলে পেয়েছিলাম একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। যার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলা সহ সব কিছুর মাধ্যমে হৃদয়ের অনুভূতি প্রকাশ করতে পারছি। আজ নতুন প্রজন্মের প্রতি আহ্বান জানাই, সবার মিলিত প্রচেষ্টায় দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে। শুধু মুখে বললে হবে না, কাজেও দেখাতে হবে। ফকির আলমগীর: এবারের বিজয় দিবস হচ্ছে, কলঙ্ক ও দায় মুক্তির বিজয় দিবস। দীর্ঘদিন পর আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্য সম্পন্ন হতে দেখছি, এটা আমাদের জন্য সত্যিকারের এক বিজয়। এবার দেশের মানুষ মনের ভালবাসা দিয়ে বিজয়ের আনন্দ উপভোগ করবে। এবার আমার জন্য আরো একটি বড় পাওয়া হচ্ছে ভারতের পশ্চিম বঙ্গ সরকারের কাজ থেকে বিশেষ সম্মাননা পাওয়া। কলকাতায় নজরুল মঞ্চে শুরু হয়েছে উৎসব। এ উৎসব চলবে আগামী ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। উৎসবে বাংলা সঙ্গীতে বিশেষ অবদানের জন্য বিশেষ সম্মাননা প্রদান করবেন পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। কল্যাণী ঘোষ: মুক্তিযুদ্ধের সময়ে আমরা গান করেছি দেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে এবং ভারতের বিভিন্ন জায়গায়। মুক্তিযোদ্ধাদের উজ্জীবিত করার পাশাপাশি মুক্তিকামী মানুষদের সাহস জুগিয়েছি। তরুণরা সে আন্দোলন না দেখলেও, এখনকার পরিপ্রেক্ষিতে দেশকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবে এটাই প্রত্যাশা করি। আমরা যেটা পারিনি এরা সেই কাজে সক্রীয় হবে। আব্দুল জব্বার: আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধে অবদান রেখেছিলাম, তাদের জন্য যদিও ৪৪ বছর বেশি সময় নয়, তবুও আমরা সেই স্বাধীনতার শত্রুদের দোসরদের বিচার কার্য দেখে যেতে পারছি এটা আমাদের জন্য এক সান্তনা। নতুন প্রজন্মের প্রতি আহ্বান স্বাধীনতার বিজয়গাঁথাকে তারা যেন সমুন্নত রাখে। আমার জীবনের সব পাওয়াগুলোর মধ্যে এও একটি পাওয়া। আমরা সেদিন যেটা করতে পারিনি আজ নতুন প্রজন্মের কাছে সেই অসমাপ্ত কাজকে সমাপ্ত করাার আহ্বান করছি। তারা যেন লোভ-লালসা ও ভয়ভিতির উর্ধে থেকে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। তিমির নন্দি: বিজয়ের আনন্দ যদিও সবার সমান, তবুও আমার কাছে বেশি আনন্দ মনে হচ্ছে এ কারণে যে আমি স্বাধীনতা যুদ্ধে সামান্যতম অবদান রাখতে পেরেছিলাম। বিজয়ের আনন্দ নতুন প্রজন্ম ধরে রেখেছে, এজন্য তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। যাদের আত্মত্যাগে অর্জিত হয়েছে স্বাধীন সাবভৌম রাষ্ট্র তাদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই। আমি মনে করি তরুণরা এ যুগের মুক্তিযোদ্ধা। আমরা একটি স্বাধীন, সুখী ও সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রত্যাশা করি তরুণ প্রজন্মের কাছে। মনোরঞ্জন ঘোষাল: বাংলাদেশের মানুষের অহংকারের দিবস হচ্ছে বিজয় দিবস। এবারের বিজয় দিবসের বিশেষ তাৎপর্য হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি কার্যকর। দীর্ঘদিন গড়িয়ে গেলেও আমরা একাত্তরের ঘৃন্য যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি দিতে পেরেছি। বাকী যারা আছে তাদের ফাঁসি কর্যকর হলেই শান্তি পাবো। এটা ভেবে আমার কষ্ট হয় যে, আমরা যারা সেদিন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে অবদান রেখেছিলাম, স্বাধীনতার এতদিন পরেও আমাদের সত্যিকারের মূল্যায়ন হয়নি। ডালিয়া নওশিন: আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি কিন্তু সে সময়ে পাকিস্তানিদের দোসর রাজাকারদের নিধন করতে পারিনি। এত বছর ধরে রাজাকারদের এই দেশে থাকতে দেয়াটা আমাদের জন্য খুবই লজ্জাজনক ছিল। আমি আনন্দিত যে আমাদের জীবনে এই ঘৃন্য অপরাীদের বিচার কার্য সম্পন্ন দেখে যেতে পারছি।
×