ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

শক্তিশালী মুদ্রানীতির কারণেই অর্থনীতিতে বিশ্বমন্দার প্রভাব পড়েনি

বড় অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের পথে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৫

বড় অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের পথে বাংলাদেশ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ছোট দেশ হওয়া সত্ত্বেও বড় মাপের অর্থনৈতিক কর্মকা-ের পথে পা বাড়াতে বাংলাদেশ প্রস্তুত উল্লেখ করে বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. কৌশিক বসু বলেছেন, খুব কম দেশই রয়েছে যাদের অর্থনীতি এভাবে উঠতে পারে। তিনি বলেন, বাংলাদেশই শিখিয়েছে দরিদ্রতা, প্রতিবন্ধকতার পরও দেশের অর্থনীতির স্বার্থে ঝুঁকি নিয়ে কিভাবে কার্যক্রম শুরু করতে হয়। এসব বিষয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য অনুসরণীয় উল্লেখ করে বিশ্বব্যাংকের এ কর্মকর্তা বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য এটি শিক্ষণীয় কিভাবে তারা দারিদ্র্য দূর করছে এবং মানুষকে আর্থিক খাতের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের শক্তিশালী মুদ্রানীতির কারণেই বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিশ্বমন্দার কোন প্রভাব পড়েনি উল্লেখ করে বিশ্বব্যাংকে কর্মরত বাঙালী এ অর্থনীতিবিদ বলেন, দেশের তৃণমূল পর্যায়ের মানুষকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় নিয়ে আসা বাংলাদেশ ব্যাংকের বড় অর্জন। সোমবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং জাতিসংঘের অর্থনীতি ও সামাজিক বিষয় সংক্রান্ত বিভাগ ইউএনডেসার যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘সামষ্টিক অর্থনীতি, বেসরকারী খাতের উন্নয়ন এবং অর্থনীতিক প্রবৃদ্ধি’ নিয়ে আন্তর্জাতিক কর্মশালার উদ্বোধন শেষে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গবর্নর ড. আতিউর রহমান, ইউডিইএসএ গ্লোবাল ইকোনমিক মনিটরিং ইউনিটের প্রধান ড. হামিদ রশিদ। অনুষ্ঠানে কো-চেয়ারপার্সনের দায়িত্ব পালন করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গবর্নর আবুল কাশেম। বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ বিরুপাক্ষ পাল। কৌশিক বসু বলেন, পাঁচ বছর ধরে ছয় শতাংশের ওপর জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। এই প্রবৃদ্ধিতে ধনী-গরিব সবারই অবদান আছে। তিনি বলেন, দেড় দশকে বাংলাদেশ দারিদ্র্যের হার অর্ধেকে নামিয়ে আনতে পেরেছে। কৌশিক বসুর মতে, একটি দেশের সরকার দরিদ্র মানুষের কাছে যদি খাবার পৌঁছাতে যায় তবে সেখানে অনেক খাবারের অপচয় হয়। সেখানে খাবার না দিয়ে যদি গরিব ও প্রান্তিক মানুষের কাছে টাকা পৌঁছানো যায় অর্থাৎ মানুষকে আর্থিক খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা যায় তবে অনেক লাভ হয়। কারণ তাদের হাতে যখন টাকা থাকবে তখন তাদের নিজস্ব পছন্দ প্রাধান্য পাবে। তাদের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। তারা পছন্দমতো জায়গায় তা ব্যয় করতে পারবে। আর তাদের চাহিদা মেটাতে অনেক নতুন নতুন বেসরকারী শিল্প-কারখানা গড়ে উঠবে। নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হবে। ঠিক এ সময়টাতেই সেদেশের অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আসবে বলে মনে করেন বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ। বাংলাদেশে গরিব ও প্রান্তিক মানুষ আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে সম্পৃক্ত করতে বেশকিছু কাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক গরিব মানুষকে আর্থিক খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়াতে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে; যা উল্লেখ করার মতো। এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ও মোবাইল ব্যাংকিং। এগুলোর কারণে মানুষের টাকার ব্যবহার বেড়েছে ও ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের শক্তিশালী মুদ্রানীতির কারণেই বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিশ্বমন্দার কোন প্রভাব পড়েনি উল্লেখ করে বিশ্বব্যাংকের এই কর্মকর্তা বলেন, দেশের তৃণমূল পর্যায়ের মানুষকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় নিয়ে আসা বাংলাদেশ ব্যাংকের বড় অর্জন। ড. কৌশিক বসু বলেন, দেশের তৃণমূল পর্যায়ের মানুষকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় নিয়ে আসা বাংলাদেশ ব্যাংকের বড় অর্জন। বাংলাদেশই শিখিয়েছে দরিদ্রতা, প্রতিবন্ধকতার পরও দেশের অর্থনীতির স্বার্থে ঝুঁকি নিয়ে কিভাবে কার্যক্রম শুরু করতে হয়। এসব বিষয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য অনুসরণীয় উল্লেখ করে এ অর্থনীতিবিদ বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য এটি শিক্ষণীয় কিভাবে তারা দারিদ্র্য দূর করছে এবং মানুষকে আর্থিক খাতের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি পুরোপুরি প্রস্তুত ‘টেক অফ’ করার জন্য। খুব কম দেশই রয়েছে যাদের অর্থনীতি এভাবে উঠতে পারে। কৌশিক বসু বলেন, সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ে সুসমন্বয় ছাড়া এটির বাস্তবায়ন সম্ভব নয়, তবে সমন্বিত উন্নয়নের অনেক ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়ের আগেই বাংলাদেশের লক্ষ্যমাত্রা স্পর্শ এমনকি অতিক্রমও করেছে। ছোট দেশ হওয়া সত্ত্বেও বড় মাপের অর্থনৈতিক কর্মকা-ের পথে পা বাড়াতে বাংলাদেশ প্রস্তুত উল্লেখ করে বিশ্বব্যাংকের প্রধান এ অর্থনীতিবিদ তা বাস্তবায়নে সরকারী-বেসরকারী সুসমন্বয়ের পরামর্শ দেন। বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ মনে করেন, গবিব মানুষের কথা চিন্তা করে বিশ্বব্যাংক উন্নয়নের সমবণ্টনের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে, যা বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও জরুরী। সরকারী-বেসরকারী খাতগুলোকে সমন্বয়ের মধ্য দিয়ে কাজ করার ওপর গুরুত্ব দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে বলে বিশ্বাস করেন বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু। বিশ্বব্যাংকের এ কর্মকর্তা জানান, আবেগ এবং পেশাদারিত্বের এক অপূর্ব মিশেল দেখেছেন শেখ হাসিনার মধ্যে। অর্থনীতির উদীয়মান তারকা, বাংলাদেশের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের সম্পর্কও নতুন মাত্রা পাবে মনে করেন তিনি। একই সঙ্গে আর্থিক বিশৃঙ্খলা মোকাবেলায় বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদ এবং নীতি নির্ধারকদের বিচক্ষণতার প্রশংসা করেন তিনি। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গবর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, আমাদের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ১০ বছর ধরেই ৬ এর ঘরে স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। এই প্রবৃদ্ধি এবার ৭ শতাংশে গিয়ে পৌঁছবে। আতিউর রহমান বলেন, কেবল প্রবৃদ্ধি বাড়া নয়, বিশ্বমন্দার নেতিবাচক প্রভাব থেকেও মুক্ত থেকেছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। গবর্নর বলেন, দেশী-বিদেশী নানা বাধা সত্ত্বেও বাংলাদেশ তার প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নে বিশ্ব সমাজের নজর কেড়েছে। সরকারী-বেসরকারী সহযোগিতাকে ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি অবকাঠামোগত উন্নয়ন অতিমাত্রায় জরুরী বলেও জানান তিনি। ড. আতিউর রহমান বলেন, বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ একটি চমকপ্রদ জায়গা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিদেশীরা এখানে সস্তা শ্রমে উৎপাদনমুখী খাত, অবকাঠামোগত খাত, শিক্ষা ও প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করতে পারে।
×