ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ধরিত্রী সম্মেলনের ভালমন্দ

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৫

ধরিত্রী সম্মেলনের ভালমন্দ

৩১ পৃষ্ঠার একটি ‘মন্দের ভাল’ চুক্তির মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে ‘প্যারিস জলবায়ু সম্মেলন’। চুক্তির চূড়ান্ত খসড়ায় সম্মতি দিয়েছে ১৯৫টি দেশ। তবে চুক্তিটি প্যারিসেই স্বাক্ষরিত হচ্ছে না। আগামী ২২ এপ্রিল থেকে ২০১৭ সালের ২১ এপ্রিলের মধ্যে জাতিসংঘের মহাসচিব একটি সভা ডেকে এই চুক্তিটি স্বাক্ষরের জন্য বিশ্বের সব রাষ্ট্রপ্রধানদের আহ্বান জানাবেন। সেখানেই প্যারিস চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা রয়েছে। উল্লেখ্য, জাতিসংঘের উদ্যোগে গত ৩০ নবেম্বর শুরু হয় এই সম্মেলন। এতে যোগ দেন ১৯৫টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানসহ উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল এবং জলবায়ু ও আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন পর্যায়ের আলাপ-আলোচনা,্ তর্ক-বিতর্ক ও দর কষাকষির পর শেষ পর্যন্ত একটি চুক্তিতে উপনীত হতে সক্ষম হয়েছে বিশ্ব। প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনকে ঘিরে বিশ্বব্যাপী মানুষের আশা-প্রত্যাশা এবং ক্ষোভ-বিক্ষোভেরও অন্ত ছিল না। এমনকি প্যারিসে সম্মেলন চলাকালে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন রাস্তা বন্ধ করে দেয় পরিবেশবাদী আন্দোলনকারীরা। দ্বিমতের কোন অবকাশ নেই যে, এসবই সম্মেলনকে ঘিরে এক ধরনের চাপ সৃষ্টি করেছে। চুক্তি অনুসারে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি দুই ডিগ্রী সেলসিয়াসের নিচে রাখতে সম্মত হয়েছে দেশগুলো। অবশ্য সবার চেষ্টা থাকবে যাতে এটি দেড় শতাংশের নিচে রাখা যায়। তবে এ বিষয়ে উন্নত দেশগুলোর সুস্পষ্ট কোন অঙ্গীকার নেই। চুক্তিটি প্রতি পাঁচ বছর পর পর পর্যালোচনা করা হবে। চুক্তিতে এই শতাব্দীর শেষে বিশ্বের তাপমাত্রা দেড় ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে রাখার যে চেষ্টার কথা বলা হয়েছে, বাংলাদেশসহ বিশ্বের স্বল্পোন্নত ও ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোর পক্ষ থেকে গত পাঁচ বছর ধরে এই দাবি তোলা হচ্ছিল। ২০০৯ সালে কোপেনহেগেন বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম এই দাবিটি তুলে ধরেন তাঁর বক্তৃতায়। প্যারিস সম্মেলনে বিশ্বের ১২৬টি দেশ এই দাবির পক্ষে অবস্থান নেয়। এদিক থেকে বিবেচনায় বিশ্বের বেশিরভাগ পরিবেশবাদী সংগঠন ও সংস্থা প্যারিস চুক্তিকে মন্দের ভাল বলে অভিহিত করেন। কোপেনহেগেন কনসেনসাস সেন্টারের মতে, প্যারিস চুক্তিতে নানা ধরনের ঘাটতি রয়েছে। চুক্তির সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হলো, জলবায়ু অর্থায়নের জন্য ১০ হাজার কোটি ডলারের যে তহবিলের কথা বলা হয়েছে তা খুবই কম। কেননা, এই শতাব্দীর মধ্যে বিশ্বের তাপমাত্রা দুই ডিগ্রীর নিচে রাখতে হলে প্রতিবছর রাষ্ট্রগুলোকে এক ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় করতে হবে। এই বিপুল পরিমাণ অর্থের সংস্থান হবে কোথা থেকে? অন্যদিকে প্যারিস চুক্তিটি শেষ পর্যন্ত আইনী বাধ্যবাধকতাসহ হবে কিনা তা নিয়ে জলবায়ু বিপন্ন দেশ ও পরিবেশবাদী দেশগুলোর মধ্যে একটা দুশ্চিন্তা ছিল। সেই চিন্তার আপাত অবসান হয়েছে আইনী বাধ্যবাধকতাসহ চুক্তিটি অনুমোদিত হওয়ায়। যেহেতু এখানে জবাবদিহির বিষয়টি স্থান পেয়েছে, সেহেতু এটিকে আইনগত বাধ্যবাধকতা চুক্তি বলা যায়। এত কিছুর পরও বলতেই হয় যে, প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনের অগ্রগতি সন্তোষজনক এবং একটি সবুজ পৃথিবী গড়ে তোলার জন্য ইতিবাচক। সার্বিকভাবে চুক্তিটিতে জলবায়ু তহবিলে অর্থায়নের বিষয়টি অস্পষ্ট এবং কিছু বিষয় দুর্বলভাবে উপস্থাপিত হলেও বিশ্বব্যাপী ব্যাপক জনমত ও সচেতনতা সৃষ্টিতে এর ভূমিকা অনস্বীকার্য।
×